প্রসিকিউটর জ্যাক স্মিথের কাছ থেকে চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করে ট্রাম্প দাবি করেছেন, ২০২০ সালের নির্বাচন বাতিলের চেষ্টার অভিযোগে গ্র্যান্ড জুরি তদন্তের ‘টার্গেট’ তিনি। তবু ট্রাম্প দাবি করেছেন তৃতীয় ফৌজদারি অভিযোগ নিয়ে তিনি ‘ভীত নন’।
ট্রাম্প নিশ্চিত করেছেন তিনি স্মিথের কাছ থেকে রোববার একটি চিঠি পেয়েছেন। যেখানে দাবি করা হয়েছে ২০২০ সালের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট বাইডেনের বিজয় আটকে দেয়ার জন্য তার সমর্থকরা কংগ্রেসে হামলা চালান। সেই ৬ জানুয়ারির অভ্যুত্থান চেষ্টার তদন্তে তাকে টার্গেট করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন ট্রাম্প।
দাঙ্গা ও অপরাধের সঙ্গে সম্পর্কিত ১০০০ জনের বেশি ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করা হয়েছে এবং কয়েকজনকে রাষ্ট্রদ্রোহী ষড়যন্ত্রের জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।
হোয়াইট হাউজে প্রবেশের আরেকটি চেষ্টার আগে তার বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ আনা হলে আইনি জটিলতা বাড়তে পারে।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের শেষ মাসগুলোতে কর্মকর্তারা সাক্ষ্য দিয়েছেন- ট্রাম্প ভোটার নিয়ে জালিয়াতির মিথ্যা দাবি করার জন্য তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করেছিলেন।
রিপাবলিকান দলের ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশী ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ক্ষমতা ছাড়ার পর অত্যন্ত গোপনীয় সরকারি নথিপত্রের অপব্যবহারের অভিযোগে ইতোমধ্যে ফৌজদারি অভিযোগ আনা হয়েছে।
ফক্স নিউজের সঙ্গে কথা বলার সময় বিষয়টি অস্বীকারে ট্রাম্পকে মরিয়া বলে মনে হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘তারা মানুষকে হেয় করতে এবং ভয় দেখানোর চেষ্টা করতে চায়। কিন্তু তারা আমাদের ভয় দেখাতে পারবে না, কারণ আমরা অ্যামেরিকাকে আবার মহান করতে চলেছি।’
ট্রাম্প আরও দাবি করেছেন, তার বিরুদ্ধে তদন্ত হোয়াইট হাউসে তার ফের প্রবেশের এবং তার রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে বাধা দেয়ার জন্য একটি ব্যক্তিগত আক্রমণ।
ট্রাম্প বলেন, ‘ক্রমাগত এই হয়রানি, নির্বাচনে হস্তক্ষেপ এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সম্পূর্ণ রাজনৈতিক আচরণ আমাদের জাতির জন্য একটি অত্যন্ত দুঃখজনক এবং অন্ধকার সময়!’
ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের লড়াই
ট্রাম্পের ক্রমবর্ধমান আইনি সংকটের মধ্যে তার সমালোচকরা দাবি করেছেন, তার রাজনৈতিক কৌশল বা তথাকথিত ‘অপরাধের মাধ্যমে আত্মরক্ষা’ একটি গল্প তৈরি করছে এবং এই গল্পটি প্রচার করছে যে তার কথিত রাজনৈতিক শত্রুরা তাকে অন্যায়ভাবে লক্ষ্যবস্তু করছে। তারা তাকে ক্ষমতায় ফিরে আসতে বাধা দেয়ার চেষ্টা করছে।
ট্রাম্প তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি দাবি করেন ‘আমাদের দেশে ন্যায়বিচারের দুটি মানদণ্ড রয়েছে; একটি আপনার ও আমার মতো ব্যক্তিদের জন্য এবং অন্যটি দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনৈতিক শ্রেণির জন্য, যাদের মধ্যে অনেকে রয়েছে।’
কিছু রক্ষণশীল পর্যবেক্ষক এ ব্যাপারে একমতে পৌঁছেছেন যে, বাইডেনের দলের কাছ থেকে ট্রাম্প কথিত রাজনৈতিক বিচারের শিকার হয়েছেন।
তবে রুথ বেন-ঘিয়াট গার্ডিয়ানকে বলেন, কর্তৃত্ববাদীরা সাধারণত নিজেদেরকে হয়রানির শিকার বলে দাবি করেন। গোপন নথির বিষয়ে তদন্তের সঙ্গে অধ্যাপক যুক্তি দিয়েছিলেন, ‘ট্রাম্পের কাছে সেই গোপন নথিগুলো ছিল এবং সেগুলো গলফ বল এবং পারিবারিক ফটোগুলোর সঙ্গে মিশ্রিত ছিল যা কর্তৃত্ববাদী চেতনার নেতাদের জন্য খুব সাধারণ ব্যাপার। তারা সরকারি এবং ব্যক্তিগত কাজের মধ্যে কোনো বিভাজনকে স্বীকৃতি দেন না। বাণিজ্য, বিক্রি এবং উদ্দেশ্য সাধনে ব্যবহার করা সবকিছুই তাদের জন্য সাধারণ।
এমএসএনবিসির একটি নিবন্ধে বেন-ঘিয়াত অভিমত প্রকাশ করেছেন, ট্রাম্প ‘ব্যক্তিগত ক্ষমতা’ অর্জনের জন্য ফেডারেল সরকারকে পুনর্গঠন করতে চাইছেন। এভাবে তিনি যদি অফিসে ফিরে আসেন তবে তিনি সম্ভবত অন্যান্য কর্তৃত্ববাদী মডেল অনুসরণ করার চেষ্টা করবেন, যার মাধ্যমে নির্বাহী শাখা বিচার বিভাগ ও আইনসভার উপর ক্ষমতা ধরে রাখবে।
তিনি যুক্তি দিয়েছেন, ‘ইতিহাস আমাদের শিক্ষা দেয় যেসব স্বৈরাচারী ক্ষমতা হারান তারা পরবর্তী সময়ে ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রতিহিংসাপরায়ণ হন।’
ডনাল্ড ট্রাম্প। ফাইল ছবি