ঘটনাটিকে ধর্মীয় বিদ্বেষ উসকে দেয়ার কর্মকাণ্ড বলে এর নিন্দা জানিয়ে বুধবার তোলা প্রস্তাবটি শেষপর্যন্ত সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে পাস হয়।
ঈদুল আজহার ছুটির সময় গত ২৮ জুন সালওয়ান মোমিকা নামে ৩৭ বছর বয়সী এক ইরাকি স্টকহোম সেন্ট্রাল মসজিদের বাইরে বিক্ষোভ করেন। এ সময় তিনি ইসলামের পবিত্র ধর্মগ্রন্থের পাতা ছিঁড়ে পুড়িয়ে দেন। মোমিকা কয়েক বছর আগে ইরাক থেকে পালিয়ে সুইডেনে আশ্রয় নেন।
এ ঘটনা সামনে আসার পর থেকে বিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায় ও বিভিন্ন দেশ ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ ও তীব্র নিন্দা জানানো হয়।
জাতিসংঘও নিন্দা প্রস্তাবের উদ্যোগ নেয়। তবে এর বিপক্ষে ভোট দেয় অ্যামেরিকা, বৃটেইন, জার্মানি, ফ্রান্সসহ ১২টি দেশ। সাতটি দেশ ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকে।
প্রস্তাবটিতে দৃশ্যমান, লিখিত, মৌখিক কিংবা ডিজিটাল প্লাটফর্মের মাধ্যমে বৈষম্য, ঘৃণা ও সহিংসতাকে উসকে দেয় এমন সব ধরনের কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানানো হয়।
ধর্মীয় বিদ্বেষ প্রতিরোধ ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় আইন ও নীতি প্রবর্তনের জন্য সব দেশের প্রতি আহবানও জানানো হয়েছে এতে।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি মঙ্গলবার ভিডিও বার্তায় এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়ার বিষয়ে ইউএনএইচআরসিকে বলেন, ‘ঘটনাটি যা, আমাদের ঠিক তা-ই দেখতে হবে হবে। এটি সুস্পষ্টভাবে ধর্মীয় বিদ্বেষ, বৈষম্য ও সহিংসতাকে উসকে দেয়ার প্রচেষ্টা।’
প্রস্তাবে ভোট দেয়া ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেন্টো মারসুদি বলেন, ‘বাকস্বাধীনতার অপব্যবহার বন্ধ হোক।’
সুইডিশ সরকারও ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেছিল, এটি ‘ইসলামোফোবিক’ ঘটনা। তবে এও জানিয়েছে, সেদেশের সংবিধান মত প্রকাশ, সমাবেশ ও প্রতিবাদের স্বাধীনতার অধিকারকে সুরক্ষিত করে।
নিন্দা প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয়ার বিষয়ে জাতিসংঘের ফ্রেঞ্চ রাষ্ট্রদূত জেরোমি বোনাফোন্ট বলেন, ‘মানবাধিকার ধর্ম, মতবাদ, বিশ্বাস বা এসবের প্রতীককে নয়, মানুষকে সুরক্ষা দেয়… কোনটি পবিত্র- তা নির্ধারণ করা জাতিসংঘ বা কোনো রাষ্ট্রের কাজ নয়।’
সুইডেনের ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পরপরই নিন্দা জানায় বাংলাদেশ। একইসঙ্গে ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতার’ নামে মুসলমানদের পবিত্র মূল্যবোধ ও ধর্মীয় প্রতীককে অপমান করার জঘন্য কর্মকাণ্ডে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে।
এ কাজকে আপত্তিকর, অসম্মানজনক ও উসকানিমূলক বলে উল্লেখ করে নিন্দা জানায় ইউরোপিয়ান ইউনিয়নও (ইইউ)।
বিবৃতিতে ইইউ জানায়, তারা সবসময় ধর্ম বা বিশ্বাসের স্বাধীনতা এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে। সহিংসতা না ছড়িয়ে পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে সবাইকে একসঙ্গে পথ চলার আহ্বান জানায় ২৭ ইউরোপিয়ান দেশের জোট।