শীর্ষ ১০ শক্তিশালী মুদ্রার সবশেষে আছে ডলার

টিবিএন ডেস্ক

জুলাই ১৬ ২০২৩, ২১:৫৮

বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে দামি মুদ্রা হলো কুয়েতি দিনার। ছবি: সংগৃহীত

বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে দামি মুদ্রা হলো কুয়েতি দিনার। ছবি: সংগৃহীত

  • 0

অর্থনীতির এক অপরিহার্য উপাদান মুদ্রা। সব ধরনের লেনদেন জন্য মুদ্রা অপরিহার্য। তবে সব দেশে মুদ্রার মান এক নয়। দেশ বা অঞ্চলভেদে মুদ্রার মানে তারতম্য হয়। চলুন জেনে নেয়া যাক বর্তমান বিশ্বের দামি ১০টি মুদ্রার নাম। সেই সঙ্গে জেনে নেয়া যাক তাদের পটভূমি।

বৈদেশিক মুদ্রার মান নির্ধারণ হয় কীভাবে?

বৈদেশিক মুদ্রার মান সাধারণত দুটি উপায়ে নির্ধারণ করা হয়। একটি হলো ফ্লোটিং রেট আরেকটি হলো ফিক্সড রেট।

ফ্লোটিং রেট

ফ্লাটিং রেট নির্ধারিত হয় মুক্তবাজারে সরবরাহ ও চাহিদার বর্তমান অবস্থার ওপর ভিত্তি করে। যখন কোনো মুদ্রার চাহিদা বেশি হয় তখন এর মূল্য বাড়ে। আবার চাহিদা কমার সঙ্গে সঙ্গে এর মূল্য কমতে থাকে। বিভিন্ন প্রযুক্তিগত ও মৌলিক কারণ একটি ন্যায্য বিনিময় হার সম্পর্কে মানুষের ধারণাকে প্রভাবিত করে। আর সে অনুযায়ী পরিবর্তন হতে থাকে চাহিদা ও সরবরাহ। যেমন, ইউরোপীয়দের মধ্যে অ্যামেরিকান ডলারের চাহিদা বাড়ার ফলে ইউরোর তুলনায় অ্যামেরিকান ডলারের দাম বেড়ে যায়। এর পেছনে কাজ করে সুদের হারের পরিবর্তন, বেকারত্বের হার, মুদ্রাস্ফীতি ও ভূ-রাজনৈতিক ঘটনাগুলো।

ফিক্সড রেট

বিদেশি মুদ্রার বিনিময় হিসেবে একটি দেশের সরকার নিজেদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট হার নির্ধারণ করে দেয়। এই হার বজায় রাখার জন্য সরকার সেই বিদেশি মুদ্রার বিপরীতে নিজস্ব মুদ্রা ক্রয় ও বিক্রয় করে।

স্বল্পমেয়াদে ফ্লোটিং রেটের গতিবিধিকে ঘিরে দানা বাঁধতে থাকে অনুমান ও গুজব। কখনও সত্যিকার অর্থেই রেটের বিপর্যয় ঘটে, যার সূত্র ধরে পরিবর্তিত হতে থাকে দৈনন্দিন সরবরাহ ও চাহিদা। স্বল্পমেয়াদের এই অস্থিরতার চরম অবস্থায় সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো হস্তক্ষেপ করে।

অর্থাৎ একটি মুদ্রার দাম অত্যধিক বেশি বা কম হয়ে গেলে সরকার এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর হস্তক্ষেপ ঘটে। অন্যথায় এই অস্থিতিশীলতা দেশের অর্থনীতি, বাণিজ্য এবং ঋণ পরিশোধের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। সর্বপরি, মুদ্রার ফ্লোটিং রেটকে তুলনামূলকভাবে অনুকূল অবস্থায় নিয়ে আসার জন্য ফিক্সড রেটের ব্যবস্থাগুলো প্রয়োগ করা হয়।

কুয়েতি দিনার

বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে দামি মুদ্রা হলো কুয়েতি দিনার (কেডব্লিউডি)। অ্যামেরিকান মুদ্রায় এর বিনিময় হার ৩.২৭ ইউএস ডলার। কুয়েতের ভৌগলিক অবস্থান সৌদি আরব এবং ইরাকের মাঝে হওয়ায় দেশটিকে তেল রপ্তানিকারক হিসেবে বিশ্বব্যাপী শীর্ষস্থানীয় অবস্থায় আছে। ১৯৬০-এর দশকে প্রবর্তিত মুদ্রা দিনার সর্বপ্রথম বৃটেইনের পাউন্ডের বিপরীতে ফিক্সড রেট করা হয়েছিল। এই কৌশলগত পদক্ষেপটি কুয়েতকে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এবং একক মুদ্রামুখী ঝুঁকিগুলো কমাতে সাহায্য করে। বর্তমানে বাংলাদেশে ১ কুয়েতি দিনারের দাম ৩৫৩.৭০ টাকা।

বাহরাইন দিনার

বিশ্বব্যাপী দ্বিতীয় শক্তিশালী মুদ্রা হিসেবে রয়েছে বাহরাইন দিনার (বিএইচডি)। এর বিনিময় হার ২.৬৫ ইউএস ডলার। পারস্য উপসাগরের একটি দ্বীপরাষ্ট্র হিসেবে দেশটি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য তেল ও গ্যাস রপ্তানির উপর অনেকাংশে নির্ভর করে। এই দিনারের প্রবর্তন হয় ১৯৬৫ সালে এবং সরাসরি ইউএস ডলারের বিপরীতে এর ফিক্সড রেট ধার্য করা হয়। তখন থেকেই এটি একটি স্থিতিশীল মুদ্রার মান নিশ্চিত করে বাণিজ্যএবং বিনিয়োগের সুবিধা দিয়ে আসছে। এক বাহরাইন দিনারের বর্তমান বাংলাদেশি মূল্য ২৮৭ .২১ টাকা।

ওমানি রিয়াল

২.৬০ ইউএস ডলার মূল্যমানের ওমানি রিয়াল (ওএমআর)।

বিশ্বব্যাপী তৃতীয় সর্বোচ্চ ব্যয়বহুল মুদ্রার অবস্থান ধরে রেখেছে। ইউনাইটেড আরব আমিরাত এবং ইয়েমেনের মধ্যে অবস্থিত ওমান একটি স্বনামধন্য তেল ও গ্যাস রপ্তানিকারক। ওমানি রিয়াল ১৯৭০-এর দশকে চালু করা হয়েছিল এবং বাহরাইনের মতোই ইউএস ডলারের বিপরীতে এর রেট ফিক্সড করা হয়। সেই থেকে এই মুদ্রাটি সব রকম নির্ভরযোগ্যতা নিশ্চিত করে আন্তর্জাতিক লেনদেন সহজতর করে আসছে। বর্তমানে বাংলাদেশে ওমানি রিয়ালের হার চলছে ২৮১. ২৩ টাকা।

জর্ডানিয়ান দিনার

বিশ্বব্যাপী শক্তিশালী মুদ্রাগুলোর তালিকায় চতুর্থ স্থানে থাকা মুদ্রাটির নাম জর্ডানিয়ান দিনার (জেওডি)। এর মূল্য ১.৪১ ইউএস ডলার। তেল ও গ্যাস ছাড়াও বৈচিত্র্যময় সম্পদে ভরপুর জর্ডান। তবে এর অর্থনৈতিক অগ্রগতি কিছুটা ধীরগতির এবং ক্রমবর্ধমান ঋণসহ বেশ কিছু অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতার মুখে রয়েছে দেশটি। ইউএস ডলারের বিপরীতে ১৯৫০ সালে প্রবর্তিত এই দিনারের রেট ফিক্সড করা হয়। তাই প্রথম দশকগুলোতে দেশটি আর্থিক স্থিতিশীলতার অভিজ্ঞতা লাভ করে। এখন ১ জর্ডানিয়ান দিনারের দাম ১৫২.৬৫ বাংলাদেশি টাকা।

বৃটিশ পাউন্ড

যৌথভাবে পঞ্চম স্থানে থাকলেও সামগ্রিক দিক থেকে কিছুটা এগিয়ে ১.৩১ ইউএস ডলার রেটের বৃটিশ পাউন্ড (জিবিপি)। বিশ্বব্যাংক অনুযায়ী, জিডিপির (মোট দেশীয় পণ্য) ভিত্তিতে বিশ্বব্যাপী ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে অ্যামেরিকা। ১৪০০-এর দশকে পাউন্ডের প্রচলন হয়েছিল একটি মুক্ত ভাসমান মুদ্রা হিসেবে। অর্থাৎ মুক্তবাজারই ছিল এর মূল্য নির্ধারক। মুদ্রার এই প্রকৃতি বৃটেইনকে অর্থনৈতিক অস্থিরতার সঙ্গে মানিয়ে চলতে এবং একটি স্বতন্ত্র আর্থিক নীতি অনুসরণ করার শক্তি জুগিয়েছিল। বাংলাদেশি টাকায় এই জনপ্রিয় মুদ্রার বর্তমান মূল্য ১৪২.০৮ টাকা।

জিব্রাল্টার পাউন্ড

১.৩০ ইউএস ডলার বিনিময় হার নিয়ে বৃটিশ পাউন্ডের সঙ্গে একই স্থানে রয়েছে জিব্রাল্টার পাউন্ড (জিআইপি)। জিব্রাল্টার স্পেনের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত একটি বৃটিশ অঞ্চল, যার মুদ্রার প্রচলন হয়েছিল ১৯২০-এর দশকে। সরাসরি বৃটিশ পাউন্ডের সমান হওয়ায় মুদ্রাটি এই অঞ্চলের মধ্যে একটি স্থিতিশীল এবং সহজে বিনিময়-যোগ্যতা নিশ্চিত করেছিল। বাংলাদেশে এই পাউন্ডের দাম বর্তমানে ১৩৯.৪৩ টাকা।

কেম্যান আইল্যান্ড ডলার

সবচেয়ে ব্যয়বহুল মুদ্রার তালিকায় সপ্তম স্থানটিতে রয়েছে ১.২১ অ্যামেরিকান ডলার দামের এই মুদ্রাটি (কেওয়াইডি)। উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলোর আন্তর্জাতিক ব্যবসা এবং বিনিয়োগের জন্য একটি আর্থিক কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে কেম্যান দ্বীপপুঞ্জ। ১৯৭০-এর দশকে প্রবর্তিত এই মুদ্রার ফিক্সড রেট নির্ধারিত হয় ইউএস ডলারের বিপরীতে। বাংলাদেশি টাকায় এর বর্তমান মূল্য ১৩০.৫৭ টাকা।

সুইস ফ্রাঙ্ক

বিশ্বের অষ্টম দামি মুদ্রাটি হচ্ছে সুইস ফ্রাঙ্ক (সিএইচএফ)। এর বিনিময় হার ১. ১৭ ইউএস ডলার। সুইজারল্যান্ড এবং লিচেনস্টাইন তাদের সরকারি আইনি দরপত্র হিসেবে ব্যবহার করে এই মুদ্রা। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য সুইজারল্যান্ডকে বিনিয়োগকারীদের নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১৮৫০ সালে প্রবর্তিত সুইস ফ্রাঙ্ক ইউরোর বিপরীতে ফিক্সড রেটে ধার্য করা হয়েছিল। পরে এটি মুক্ত ভাসমান মুদ্রায় রূপান্তরিত হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে এর বিনিময় হার চলছে ১২৬.১৮ টাকা।

ইউরো

এই মুদ্রাটি (ইইউআর) এখন বিশ্বের নবম শক্তিশালী মুদ্রা। ইউরোর বর্তমান মূল্য ১.১২ ইউএস ডলার। ইউরোজোন গঠিত ২৭টি দেশের ২০টিরই সরকারি মুদ্রা এই ইউরো। ২০০২ সালে ধাতব মুদ্রা আকারে প্রবর্তিত হওয়ার পর থেকে এটি অর্থনৈতিক একীকরণের সুবিধা দিয়ে আসছে। পাশাপাশি উৎসাহিত করে আসছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যকার সাবলীল বাণিজ্যিক কর্মকান্ডে। বাংলাদেশে এর বর্তমান বিনিময় হার ১২১. ৫২ টাকা।

ইউএস ডলার

বিশ্বজুড়ে শীর্ষ ১০টি ব্যয়বহুল মুদ্রার তালিকায় সর্বশেষ অবস্থানটি ইউএস ডলারের (ইউএসডি)। অ্যামেরিকা, নির্দিষ্ট অ্যামেরিকান অঞ্চল, ইকুয়েডর ও জিম্বাবুয়ের মতো অন্যান্য সার্বভৌম দেশগুলোতে এটি আইনি দরপত্র হিসাবে কাজ করে। বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে ইউএস ডলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে একটি বিশিষ্ট অবস্থান ধারণ করে। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ব্যবসা করা মুদ্রাটি হচ্ছে এটি। এছাড়া বিশ্বব্যাপী কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর প্রাথমিক রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবে কাজ করে এই ডলার। তেল, স্বর্ণ এবং তামাসহ বিভিন্ন পণ্যের মূল্য নির্ধারণের মানদণ্ড এই মুদ্রা। বাংলাদেশে অ্যামেরিকান ডলারের বর্তমান মূল্যমান ১০৮.২৭ টাকা।


0 মন্তব্য

মন্তব্য করুন