নরেন্দ্র মোদির ইজিপ্ট সফরে কার লাভ?

মো. ফুয়াদ হাসান, টিবিএন ডেস্ক

জুন ২৬ ২০২৩, ১৮:৫৯

ইজিপ্টের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ এল-সিসি (বাঁয়ে) ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ছবি: সংগৃহীত

ইজিপ্টের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ এল-সিসি (বাঁয়ে) ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ছবি: সংগৃহীত

  • 0

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইজিপ্টে দুই দিনের সফর করেছেন। বিশ্লেষকরা এ সফরকে ‘গেম চেঞ্জিং’ হিসেবে দেখছেন দুই দেশের জন্য।

মোদির এই সফরে নর্থ আফ্রিকার দেশটিতে ভারতের বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ছাড়া ইজিপ্টের জন্য ব্রিকস অর্থনৈতিক গোষ্ঠীতে প্রবেশের পথ প্রশস্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদির প্রথম এবং ১৯৯৭ সালের পর কোনো ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর ইজিপ্টে এটি প্রথম সফর।

মোদির ইজিপ্ট সফরের ধারাবাহিকরার সূচনা হয় গত জানুয়ারিতে ইজিপ্টের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ এল-সিসির নয়াদিল্লি সফর থেকে। কয়েক মাস আগে তিনি ভারতের ৭৪তম প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এল-সিসিই প্রথম মিশরীয় প্রেসিডেন্ট যাকে ভারত এমন সম্মান জানিয়েছে।

মোদির সফরটিতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার হবে বলে মনে করা হচ্ছে। আল-সিসির জানুয়ারিতে ভারত সফরের সময় উভয় পক্ষ ইতোমধ্যে কৌশলগত দিক নিয়ে কথা বলেছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ইজিপ্ট সফর সামনের দিনগুলোতে কীভাবে সম্পর্ক জোরদার করবে তার রূপরেখাও প্রকাশ করতে পারে।

প্রেসিডেন্ট সিসির ভারত সফরের মাত্র ছয় মাসের মধ্যে খুব দ্রুত পারস্পরিক সফর এটি।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি বলেছেন, ‘আমরা আশা করি এই সফর আমাদের দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের অব্যাহত গতিই শুধু নিশ্চিত করবে না বরং এটিকে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক ভাবে নতুন ক্ষেত্রগুলিতে প্রসারিত করতে সহায়তা করবে।’

ইজিপ্টের দৃষ্টিকোণ থেকে এ সফর পশ্চিমাদের বাইরে কোন দেশের সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্ক বৃদ্ধি করবে। ভারতের জন্য বিশ্বের দক্ষিণের একটি দেশ হিসাবে অবস্থানকে দৃঢ় করবে। এছাড়া ভারত সেপ্টেম্বরে রাজধানী নয়াদিল্লিতে জি-টুয়েন্টি বৈঠকের আয়োজন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

দ্বিপাক্ষিক আলোচনা এবং বিভিন্ন বাণিজ্য চুক্তি সই করা ছাড়াও মোদি ছোট ভারতীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে আলাপচারিতা করেছেন। এ সময় তিনি ইজিপ্টের কয়েকজন বিশিষ্ট নেতার সঙ্গেও দেখা করেছেন।

ভারত ও ইজিপ্টের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, কারণ দেশ দুটি ১৯৬১ সালে নন-অ্যালাইনমেন্ট মুভমেন্ট (ন্যাম) এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। ন্যাম ১২০টি উন্নয়নশীল দেশের একটি বৈশ্বিক ফোরাম, যারা ক্ষমতার সামঞ্জস্যতায় বিশ্বাস করে।

নয়াদিল্লির জওহরলাল নেহেরু ইউনিভার্সিটিতে আফতাব কামাল পাশা পড়াশোনা করেছেন। আল জাজিরাকে তিনি বলেন, ইজিপ্ট ও ভারতের মধ্যে ঐতিহাসিকভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে।

পাশা বলেন, ‘মোদি গাল্ফ কো-অপারেশন কাউন্সিল (জিসিসি) স্টেইটগুলো থেকে কী পেতে পারেন তা নিয়ে স্পষ্ট সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তাই তিনি ইজিপ্টের দিকে ফিরেছেন।’

পাশা বলেন, এল-সিসি চান ইজিপ্ট ব্রিকসে যোগ দিক। ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত এবং চায়নাসহ বিশ্বের প্রধান অর্থনীতির একটি শক্তিশালী গ্রুপে যোগদান ইজিপ্টের জন্য ভালো দিক হবে বলে মনে করেন তিনি।

ইজিপ্টের অর্থনীতি গত কয়েক বছর ধরে অস্বাভাবিক সময় অতিক্রম করছে। করোনা মহামারির ধাক্কা এবং তারপর রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে ইজিপ্টের উপর। বর্তমান পরিস্থিতি রাশিয়া ও ইউক্রেইন থেকে ইজিপ্টের আমদানি করা প্রায় ৮০ শতাংশ খাদ্য শস্যের জোগানকে প্রভাবিত করেছে।

রাশিয়ার ইউক্রেইন হামলার পর থেকে ইজিপ্টের মুদ্রার মান প্রায় অর্ধেকে নেমে গেছে। একাধিক বিদেশি বিনিয়োগকারী ইজিপ্টের ট্রেজারি বাজার থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার উঠিয়ে নিয়েছে। ইজিপ্ট সংকট কাটিয়ে বিদেশি ঋণের ঘাটতি মেটাতে এবং খাদ্য নিরাপত্তা বজায় রাখতে ভারতের বিনিয়োগের দিকে নজর দিচ্ছে।

বিশ্লেষকরা বলেছেন কায়রোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ভারতের জন্যও তাৎপর্যপূর্ণ হবে। ইজিপ্টের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূ-কৌশলগত গুরুত্ব রয়েছে বিশ্বের কাছে। বিশ্ব বাণিজ্যের ১২ শতাংশ ইজিপ্টের সুয়েজ খালের মধ্য দিয়ে যায়।

কায়রো ভারতকে ইউরোপ ও আফ্রিকার প্রধান বাজারগুলো দখলের জন্য সুবিধা দিতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সম্প্রতি ইজিপ্টের উপর চায়নার ক্রমবর্ধমান প্রভাব নিয়েও ভারত উদ্বিগ্ন।

ইজিপ্টের সঙ্গে চায়নার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বর্তমানে ১৫ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা ২০২১-২০২২ সালে ভারতের ৭.২৬ বিলিয়ন ডলারের দ্বিগুণ।

ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ ওয়ার্ল্ড অ্যাফেয়ার্সের (আইসিডব্লিউএ) নয়াদিল্লির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ফজুর রহমান সিদ্দিকী বলছেন, ভারত বিশ্বের দক্ষিণের উল্লেখযোগ্য শক্তি হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়।

সিদ্দিকী বলেন, ‘মোদি ক্ষমতায় আসার পর থেকে ভারত তার পররাষ্ট্রনীতি প্রসারিত করার চেষ্টা করছেন। ভারত আফ্রিকা মহাদেশে প্রায় ২০টি নতুন মিশন খুলেছে।’

ভারতীয় দৈনিক হিন্দুস্তান টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ভারতে ইজিপ্টের রাষ্ট্রদূত ওয়ায়েল মোহাম্মদ আওয়াদ হামেদ বলেন, ‘আমরা আন্তর্জাতিক ফ্রন্টে একে অপরের অবস্থানকে শক্তিশালী করতে পারি। আমরা ভারতকে ইজিপ্টের মধ্যদিয়ে ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য এবং সমগ্র আফ্রিকাতে বাণিজ্য সম্প্রসারণে সুযোগ দিতে প্রতিশ্রুতিশীল।’

তিনি আরও বলেন, ‘কায়রো ও নয়া দিল্লির মধ্যে সরাসরি সংযোগ চালু করার সঙ্গে ইজিপ্টে ভারতের জন্য একটি শিল্পাঞ্চল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ব্যাপারগুলো আমাদের সম্পর্ককে দৃঢ় করবে এবং আমাদের নতুন দিগন্তে নিয়ে যাবে।’


0 মন্তব্য

মন্তব্য করুন