ইউক্রেইনে ক্লাস্টার বম্ব পাঠানোর সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ ইউএস মিত্ররা

টিবিএন ডেস্ক

জুলাই ৯ ২০২৩, ১৮:৫৪

২০২৩ সালের এপ্রিলে ইউক্রেইনের একটি মাঠে পাওয়া ক্লাস্টার বোমার অবশিষ্টাংশ। ফাইল ছবি

২০২৩ সালের এপ্রিলে ইউক্রেইনের একটি মাঠে পাওয়া ক্লাস্টার বোমার অবশিষ্টাংশ। ফাইল ছবি

  • 0

ইউক্রেইনে অ্যামেরিকার ক্লাস্টার বোমা সরবরাহের সিদ্ধান্তে বেশ কয়েকটি ইউএস মিত্র দেশ অস্বস্তি প্রকাশ করেছে। বৃটেইন, ক্যানাডা এবং স্পেন পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে, তারা এ অস্ত্র ব্যবহারের বিরোধী।

বৃটেইনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলেন, ‘ক্লাস্টার যুদ্ধাস্ত্র বিষয়ে কনভেনশনে সই করা ১২৩টি দেশের মধ্যে আমাদের দেশ একটি, যারা এ জাতীয় অস্ত্র উৎপাদন বা ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে।’

স্পেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্গারিটা রবলেস তার দেশের অবস্থান তুলে ধরে বলেন, ‘ক্লাস্টার বোমাকে না এবং ইউক্রেইনের বৈধ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে হ্যাঁ; তার মানে এই নয় ক্লাস্টার বোমা দিয়ে সেটি নিশ্চিত করতে হবে!’

এদিকে ক্যানাডার সরকার বলেছে, তারা শিশুদের উপর এই বোমার সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন। কেননা এ বোমা কখনও কখনও বহু বছর ধরে অবিস্ফোরিত থাকে।

এক বিবৃতিতে দেশটি জানিয়েছে, ‘আমরা কনভেনশনের দেয়া শর্তগুলো গুরুত্বসহ মেনে চলি এবং সবাই যেন তা মানে সেজন্য উৎসাহ দিই।’

চুক্তিতে সই করা আরেক ইউরোপিয়ান দেশ জার্মানি বলেছে, তারা ইউক্রেইনে এ ধরনের অস্ত্র সরবরাহ করবে না। তবে তারা অ্যামেরিকার অবস্থান বুঝতে পেরেছে।

জার্মান সরকারের মুখপাত্র স্টেফেন হেবস্ট্রেইট বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত যে আমাদের অ্যামেরিকান বন্ধুরা এ ধরনের গোলাবারুদ সরবরাহের সিদ্ধান্তকে হালকাভাবে নেয়নি।’

আরও পড়ুন: ক্লাস্টার বম্ব কী, কেন ইউক্রেইনকে দিচ্ছে অ্যামেরিকা?

জাতিসংঘের মানবাধিকার দফতরও অ্যামেরিকার পদক্ষেপের সমালোচনা করেছে। সেখানকার এক প্রতিনিধি বলেন, ‘এ ধরনের অস্ত্রের ব্যবহার অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত এবং কোনো জায়গায় তা ব্যবহার করা উচিত নয়।’

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র অ্যামেরিকার এ পদক্ষেপকে ‘বেপরোয়া’ এবং ইউক্রেইন ‘পাল্টা-আক্রমণ’ বলে যে প্রচারণা চালিয়েছে সেই ব্যর্থতা ঢাকতে ‘পুরুষত্বহীনতার প্রমাণ’ বলে বর্ণনা করেছেন।

রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভাও বলেন, ‘ইউক্রেইন আশ্বাস দিয়েছে তারা এই ক্লাস্টার বিস্ফোরক দায়িত্ব নিয়ে ব্যবহার করবে। কিন্তু তাদের এমন বক্তব্য মূল্যহীন।’

তবে ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির যেলেনস্কি ‘একটি সময়োপযোগী, বিস্তৃত এবং অত্যন্ত প্রয়োজনীয়’ সামরিক সহায়তা প্যাকেজের জন্য অ্যামেরিকাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

বাইডেন শুক্রবার সিএনএনকে বলেন, তিনি এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে মিত্রদের সঙ্গে কথা বলেছেন। এই ক্লাস্টার বোমাগুলো ৮০০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের সামরিক সহায়তা প্যাকেজের অংশ ছিল। প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ‘এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে নিশ্চিত হতে কিছুটা সময় লেগেছে।’ তবে তিনি শেষ পর্যন্ত এই বোমা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কেননা ‘ইউক্রেইনের গোলাবারুদ ফুরিয়ে যাচ্ছে।’

এদিকে, বাইডেনের এ সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, ক্লাস্টার বিস্ফোরক ‘সংঘাত শেষ হওয়ার অনেক পরেও বেসামরিক মানুষের জীবনের জন্য বড় ধরনের হুমকির কারণ হয়ে থাকে।’

তবে ইউক্রেইনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, ক্লাস্টার বোমাগুলো শহরাঞ্চলে নয়; শুধু শত্রুর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে ফেলার জন্য ব্যবহার করা হবে।

বাইডেনের পদক্ষেপ একটি ইউএস আইন লঙ্ঘন করছে। আইন অনুযায়ী, কোনো অস্ত্রের ব্যর্থতার হার এক শতাংশের বেশি হলে সেটি উৎপাদন, ব্যবহার বা স্থানান্তর নিষিদ্ধ। কিন্তু ক্লাস্টার বোমার ব্যর্থতার হার এক শতাংশের বেশি। অ্যামেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সালিভান সাংবাদিকদের বলেন, অ্যামেরিকান ক্লাস্টার বোমার ব্যর্থতার হার আড়াই শতাংশের কম, যেখানে রাশিয়ার ক্লাস্টার বোমার ব্যর্থতার হার ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ।

ইউএস ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইযার জ্যাক সালিভান সাংবাদিকদের বলেন, ইউক্রেইনে পাঠানো অ্যামেরিকান ক্লাস্টার বোমাগুলো ইতোমধ্যে সংঘাতে রাশিয়া যেগুলো ব্যবহার করছে তার চেয়ে অনেক কম বার ব্যর্থ হয়েছে।

অস্ত্র নির্মূল করা বিষয়ক কমিটি ইউএস ক্লাস্টার মিউনিশন কোয়ালিশন বলছে, এই সিদ্ধান্ত আজ এবং আগামী কয়েক দশকের জন্য বড় দুর্ভোগ বয়ে আনবে।


0 মন্তব্য

মন্তব্য করুন