বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জেডআই ফাউন্ডেশনের অংশীদারত্বে কমনওয়েলথ এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কাউন্সিল (সিডব্লিউইআইসি) এর আয়োজন করতে যাচ্ছে।

ফোরামটি বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য একটি প্ল্যাটফর্মের প্রস্তাব করবে। এর লক্ষ্য অংশীদারত্ব বৃদ্ধি, উদ্ভাবন প্রচার এবং বাংলাদেশের জন্য একটি টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথ অন্বেষণ করা।

ঢাকার একটি হোটেলে রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেয়া হয়। 

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, বৃটেনের হাউস অব লর্ডস সদস্য এবং কমনওয়েলথ এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কাউন্সিলের (সিডব্লিউইআইসি) ডেপুটি চেয়ারম্যান লর্ড সোয়ার কেসিএমজি, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব) লোকমান হোসেন মিয়া এবং বাংলাদেশের সিডব্লিউইআইসি কৌশলগত উপদেষ্টা জিল্লুর হোসেন।

বাংলাদেশে এই প্রথম কমনওয়েলথ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ফোরাম অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এর আগে কমনওয়েলথের অন্যান্য সদস্য দেশ যেমন বৃটেন, সিঙ্গাপুর, কেনিয়া, রুয়ান্ডা ও মাল্টায় এ ফোরাম অনুষ্ঠিত হয়েছে।

অনুষ্ঠানে সালমান এফ রহমান বলেন, ‘স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে কমনওয়েলথে যোগদানের পর থেকে বাংলাদেশ সংগঠনটির একটি সক্রিয় অংশ ছিল।

‘ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ফোরাম বাংলাদেশকে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির এক অসাধারণ সুযোগ করে দেবে।’

সালমান এফ রহমান বলেন, ‘ফোরাম চলাকালীন বাংলাদেশ কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর সামনে তার বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুযোগগুলি প্রদর্শন করতে সক্ষম হবে। এটি সবার জন্য ইতিবাচক হবে।’ 

দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি পরিস্থিতিকে সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘শক্তি ও জ্বালানি হচ্ছে প্রবৃদ্ধির ইঞ্জিন। সরকারের নানামুখী উদ্যোগের ফলে এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ২৪ হাজার মেগাওয়াটে পৌঁছেছে, যা আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার আগে ছিল মাত্র চার হাজার মেগাওয়াট।’

তিনি ডিজিটাল সংযোগ সম্প্রসারণ, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা ও নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্যের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘কমনওয়েলথকে অবশ্যই এলডিসি, এলএলডিসি, এসআইডিএস ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন দেশগুলোর দুর্বলতা মোকাবিলা করতে হবে। এলডিসি উত্তরণের পরেও তাদের বাণিজ্য-সম্পর্কিত জিএসপিগুলো অব্যাহত রাখা, ব্যক্তিগত পুঁজি প্রবাহ ও সবুজ প্রযুক্তি স্থানান্তরের জন্য সহজ শর্তে অর্থায়নের মতো ক্ষেত্রগুলোতে আলোকপাত করতে হবে।’

শাহরিয়ার বলেন, ‘বাংলাদেশ যেকোনো ব্যবসায়িক উদ্যোগের জন্য পারস্পরিক লাভজনক প্রস্তাব উপস্থাপন করতে সক্ষম।’

এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ এলডিসি উত্তরণের পরেও আরও তিন বছর ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে বর্তমান জিএসপি সুবিধা গ্রহণে প্রস্তুত এবং বৃটেন থেকেও একই ধরনের সাড়া পাব বলে আমরা আশাবাদী।’

বৃটেনের হাউস অফ লর্ডসের সদস্য এবং কমনওয়েলথ এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কাউন্সিলের (সিডব্লিউইআইসি) ডেপুটি চেয়ারম্যান লর্ড সোয়ার কেসিএমজি বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিগত বছরগুলোতে পরিবর্তন এসেছে। কারণ, দেশটি থেকে এখন অনেক বেশি তৈরি পণ্য বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে, যা অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলছে।’

বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান (সিনিয়র সেক্রেটারি) লোকমান হোসেন মিয়া বলেন, ‘এই ফোরাম যে সুযোগ দেবে দেশের সর্বোচ্চ বিনিয়োগ প্রমোশন এজেন্সি হিসেবে বিডা তার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করবে। বাংলাদেশে সুযোগ অন্বেষণ করতে আগ্রহী এমন ব্যবসাগুলোকে আমরা নির্বিঘ্ন পরিষেবা দেব।’

কমনওয়েলথ এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কাউন্সিলের বাংলাদেশের কৌশলগত উপদেষ্টা জিল্লুর হোসেন বলেন, ‘কমনওয়েলথ সদস্যদের রাষ্ট্রপ্রধান, রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ী নেত ঢাকায় কমনওয়েলথ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ফোরামে যোগ দেবেন।’

কমনওয়েলথ হল ৫৬টি দেশের সমন্বয়ে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, যা একটি সাধারণ মূল্যবোধের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ এবং এ দেশগুলোতে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ লোক বসবাস করে। বাংলাদেশ ১৯৭২ সালে কমনওয়েলথের ৩৪তম সদস্য হিসেবে যোগ দেয়।