টাইটানের খোঁজ নেই, কমছে আরোহীদের জীবিত উদ্ধারের আশা

টিবিএন ডেস্ক

জুন ২১ ২০২৩, ১৯:৪০

টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখাতে যাওয়া নিখোঁজ সাবমেরিন টাইটানের খোঁজে চেষ্টা চালাচ্ছে উদ্ধারকর্মীরা। ছবি: সংগৃহীত

টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখাতে যাওয়া নিখোঁজ সাবমেরিন টাইটানের খোঁজে চেষ্টা চালাচ্ছে উদ্ধারকর্মীরা। ছবি: সংগৃহীত

  • 0

টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখাতে যাওয়া নিখোঁজ সাবমেরিন টাইটানের অভিযাত্রীদের পরিবার ও বন্ধুরা বলছেন ‘প্রতিটি সেকেন্ড যেন ঘণ্টার মতো’।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সাবমেরিনে অক্সিজেনের সরবারহ কমছে। সেই সঙ্গে ‘আরোহীদের জীবিত খুঁজে পাওয়ার আশা’ ম্লান হচ্ছে।

সাবমেরিনটিতে ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের অক্সিজেনের জোগান বাকি আছে। এরই ভেতর একে খুঁজে পেতে বেশকিছু জাহাজ, সাবমেরিন ও ডুবুরি দল চেষ্টা করে যাচ্ছে।

পাকিস্তানি ধনাঢ্য ব্যক্তি ৪৮ বছরের শাহজাদা দাউদ ও তার ১৯ বছর বয়সী ছেলে সুলেমান, ব্রিটিশ ধনকুবের ৫৮ বছরের হামিশ হার্ডিং, ৭৭ বছর বয়সী ফ্রেঞ্চ ডাইভার পল-হেনরি নারজিওলেট এবং সাবমেরিনের চালক ও ওশানগেট কোম্পানির প্রধান নির্বাহী স্কটনরাশ। নর্থ অ্যাটলান্টিকের গভীরে নিঁখোজ টাইটান সাবমেরিনে আরোহী সব মিলিয়ে এই পাঁচ জন।

ক্যানাডার নিউফাউন্ডল্যান্ডের সেইন্ট জন’স থেকে প্রায় ৩৭০ মাইল দক্ষিণে রোববার গভীর সমুদ্রে পাঁচ আরোহী নিয়ে নিখোঁজ হয় টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখাতে যাওয়া সাবমেরিনটি। এরপরই এর খোঁজে নেমেছে অনুসন্ধানী দল। অনুসন্ধান এলাকার পানির নিচে থেকে মঙ্গলবার আধা ঘণ্টার বিরতিতে শব্দ শনাক্ত করে ক্যানাডিয়ান একটি বিমান।

ইউএস কোস্ট গার্ড এ খবর নিশ্চত করে জানিয়েছে, ডুবে যাওয়া টাইটানিকের আশেপাশের এলাকায় পানির নিচে থেকে শব্দের সংকেত পাওয়ার পর নিখোঁজ সাবমেরিন খুঁজে পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে উদ্ধারকারী দল। তাদের হাতে খুব বেশি সময় নেই। সাবমেরিনের ভেতরের অক্সিজেন ফুরিয়ে আসছে।

সোনারে ধরা পড়া শব্দ সাবমেরিনের যাত্রীদের বেঁচে থাকার আশা সঞ্চার করেছে। হয়ত সাবমেরিনের যাত্রীরা সোনারে শনাক্ত হতে সাবমেরিনের দেয়ালে জোরে আঘাত করছেন।

অবশ্য মঙ্গলবার রাতে পানির নিচে শনাক্তকারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে সাবমেরিন খোঁজার পদক্ষেপ ‘নেতিবাচক’ ফল দিয়েছে।

ইউএস কোস্ট গার্ডের রিয়ার অ্যাডমিরাল জন মওগ্যার এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, ‘ আমরা পানির নিচে শব্দ শনাক্ত করার পর সাবমেরিনটিকে খুঁজে পেতে অতিরিক্ত জাহাজ ও সাবমেরিন পাঠাচ্ছি। তবে শব্দের উৎস এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।’

বিজ্ঞানী ড. মাইকেল গুইলেন ২০০০ সালে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে গিয়ে মৃত্যুমুখ থেকে ফিরে এসেছিলেন। তিনি এই মুহূর্তে ওই সাবমেরিনের আরোহীদের অবস্থা অনুমান করে জানান, আটকে পড়া ক্রু ও যাত্রীরা সাবমেরিনের দেয়ালে আঘাতের জন্য কাপ ব্যবহার করতে পারেন।

গুইলেন বলেন, ‘যাত্রার শুরুতে অর্থাৎ দুই ঘণ্টার ভেতরেই হাইড্রোফোন বিকল হয়ে থাকলে তারা কিছুতেই সাবমেরিনটিকে সমুদ্রের গভীরে নিয়ে যেতে পারবেন না। তাদের সমুদ্রতলে থাকার সম্ভাবনা কম।

‘আমি যদি ওই সাবমেরিনে থাকতাম তাহলে কাপ দিয়ে দেয়ালে বারবার আঘাত করতাম। আমি নিশ্চিত সাবমেরিনের চালকও যাত্রীদের এটিই করতে বলছেন। তারা পাঁচজন চাইলেই দেয়ালে কোনো কিছু দিয়ে সজোরে একসঙ্গে আঘাত করে একটি শক্তিশালী র‍্যাকেট তৈরি করতে পারেন। পানির ভেতরে তৈরি করা শব্দ ভালোভাবেই স্থানান্তর হতে পারে।’

ডিপ এনার্জি নামের পাইপলেয়ার জাহাজ ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। এটির ক্যামেরা ব্যবহার করে সমুদ্রতলে অনুসন্ধান চালানো যায়। অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযানে সহায়তার জন্য ফ্রান্স আটলান্টি নামক একটি জাহাজ পাঠাচ্ছে, যাতে গভীর সমুদ্রে তল্লাশি চালানোর মতো ডাইভিং ভেসেল আছে।

আটলান্টিতে ভিক্টর সিক্স থাউজেন্ড নামে একটি স্বংয়ংক্রিয় রোবট রয়েছে যা পানির ৬০০০ মিটার গভীরতায় অনুসন্ধান চালাতে সক্ষম। তবে আটলান্টি জাহাজটি ঘটনাস্থলে পৌঁছাবে স্থানীয় সময় বুধবার সন্ধ্যার দিকে। এর মধ্যেই নিখোঁজ সাবমেরিনে অক্সিজেন জোগান শেষ হয়ে যেতে পারে।

সাবমেরিনটি একসময় উদ্ধার করা গেলেও এর আরোহীরা বেঁচে ফিরবেন কিনা এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই।

অ্যাডমিরাল প্যারি বলেছেন, ‘আমার ভয় হচ্ছে সাবমেরিনটি খুঁজে পাওয়ার সুযোগ শেষ হয়ে যাচ্ছে। স্পষ্টতই আমরা এখনও আশাবাদী ও আশাবাদী থাকতে চাচ্ছি। তবে এই মুহূর্তে আমাদের সামনে দুটি প্রতিবন্ধকতা। প্রথমত- ওই সাবমেরিনটিকে খুঁজে বের করা ও দ্বিতীয়ত- কোন পদ্ধতিতে সেটিকে সমুদ্রতল থেকে তুলে আনা হবে।

‘এর আগে কখনো কেউ এমন কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়নি। কোন উপায়ে আমরা এটি কাটিয়ে উঠতে পারি সে সম্পর্কে কারও কোনো ধারণা আছে কিনা তা নিয়েও আমি সন্দিহান।’


0 মন্তব্য

মন্তব্য করুন