এরদোয়াঁর ভাগ্য নির্ধারণী ভোটের ফলের অপেক্ষা

টিবিএন ডেস্ক

মে ২৮ ২০২৩, ১৮:১৬

তুর্কিয়েতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দ্বিতীয় দফায় ভোট দিচ্ছেন এই ভোটার। ছবি: বিবিসি

তুর্কিয়েতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দ্বিতীয় দফায় ভোট দিচ্ছেন এই ভোটার। ছবি: বিবিসি

  • 0

টানা দুই দশক ক্ষমতায় থাকা রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়াঁ ফের তুর্কিয়ের রাষ্ট্রপ্রধান হবেন কিনা, তা জানা যাবে রোববার। এদিন স্থানীয় সময় সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত দেশটিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দ্বিতীয় দফার ভোট চলে। ফল প্রকাশ হওয়ার কথা রোববার রাতের মধ্যেই।

প্রতিদ্বন্দ্বী বিরোধী জোটের প্রধান কেমাল কিলিচদারোলুর সঙ্গে এরদোয়াঁর বেশ শক্ত লড়াই হয়েছে এবার। প্রথম দফায় দুজনের কেউ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় ভোট গড়ায় দ্বিতীয় দফায়। এর মধ্যে প্রথম দফায় ৫.১৭ শতাংশ ভোট পাওয়া ডানপন্থি অ্যানসেস্ট্রাল অ্যালায়েন্স প্রার্থী সিনান ওগান সোমবার জানান, তিনি রান-অফে এরদোয়াঁকে সমর্থন করছেন। তার ভোটারদেরকেও সমর্থন দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এতে এরদোয়াঁর নির্বাচন জয়ের সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে গেছে।

‘রান-অফ’ ভোটের আগে ভোটারদের প্রতি ‘কর্তৃত্ববাদী শাসন থেকে পরিত্রাণ পেতে’ ঘর থেকে বের হওয়ার আহ্বান জানান কিলিচদারোলু। আর ‘তুর্কিয়ে শতাব্দিতে’ দেশকে ঐক্যবদ্ধ করার মাধ্যমে নতুন যুগের সুচনার প্রতিশ্রুতি দেন এরদোয়াঁ।

তুর্কিয়েতে প্রতি পাঁচ বছর পরপর নির্বাচন হয়। প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের মনোনয়ন দেয় সাবেক পার্লামেন্ট নির্বাচনে পাঁচ শতাংশ ভোটার সমর্থন পেয়েছে এমন দল অথবা মনোনয়ন প্রার্থীদের সমর্থনে কমপক্ষে ১০০ হাজার স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছেন তারা। প্রথম রাউন্ডে যে প্রার্থী ৫০ শতাংশ এর বেশি ভোট পান তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তবে কোনও প্রার্থী সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট না পেলে প্রথম রাউন্ডে সর্বাধিকসংখ্যক ভোট পাওয়া দুই প্রার্থীর মধ্যে নির্বাচনটি দ্বিতীয় দফায় (রান-অফ) অনুষ্ঠিত হয়।
 

প্রেসিডেন্ট বাছাইয়ে দ্বিতীয় দফার ভোটে যাচ্ছে তুর্কিয়ে
রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়াঁ (বাঁয়ে) ও কেমাল কিলিচদারোলু। ছবি: আল-জাজিরা


এবার প্রথম দফার নির্বাচনে এরদোয়াঁ পান ৪৯.৫২ শতাংশ ভোট। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কিলিচদারোলু পেয়েছেন ৪৪.৮৯ শতাংশ ভোট। আর সিনান ওগ্যান ৫.২৮ শতাংশ ভোট পেয়েছেন।

সুপ্রিম ইলেকশন কাউন্সিলের (ওয়াইএসকে) তথ্য অনুসারে, এই দফায় ভোটারের উপস্থিতি প্রায় ৯০ শতাংশ ছিল। তবু কোনো একক প্রার্থী নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাননি।

৬৯ বছর বয়সী এরদোয়াঁ দেশটির ব্যাপক ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং অর্থনৈতিক উত্থানের সময় তার শাসন শুরু করেছিলেন। বছরের পর বছর ধরে তিনি ক্ষমতা সংহত করেছেন। তবে তার অপ্রচলিত রাজস্ব নীতির কারণে তুর্কিয়ের ৮০০ বিলিয়ন ডলার অর্থনীতি হুমকিতে পড়েছে।

সিএইচপি-এর প্রতিনিধিত্বকারী ৭৪ বছর বয়সী আইনপ্রণেতা কিলিচদারোলু, রাজনৈতিক সিঁড়ি বেয়ে ২০১০ সালে তার দলের সপ্তম চেয়ারম্যান হন। এর আগে ২০১১ সালের সাধারণ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে এরদোয়াঁর কাছে হেরেছিলেন কিলিচদারোলু।

প্রায় ১০০ বছর আগে আধুনিক তুর্কিয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও কঠোর সেক্যুলার মোস্তফা কামাল আতাতুর্কের গঠন করা পার্টির প্রতিনিধিত্ব করেন কিলিচদারোলু। তিনি এরদোয়াঁর ইসলামপন্থি দল এবং এর রক্ষণশীল ভিত্তির সম্পূর্ণ বিপরীতে দাঁড়িয়েছেন।
 

আঙ্কারায় ভোট দিচ্ছেন কিলিচদারোলু ও তার স্ত্রী সেলভি। ছবি: বিবিসি


বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ তুর্কিয়ের জনসংখ্যা ৮৫ মিলিয়ন। নেইটোতে দ্বিতীয় বৃহত্তম সেনাবাহিনী দেশটির। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাশিয়ার সঙ্গে দেশটির সম্পর্ক জোরদার হয়েছে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে এরদোয়াঁর ক্রমবর্ধমান বন্ধুত্ব পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অ্যামেরিকাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ২০১৯ সালে রাশিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র কিনেছিল তুরস্ক। এমনকি গত বছর ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের সদস্যপদ স্থগিত করে নেইটোর সম্প্রসারণ পরিকল্পনার জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায় দেশটি।

সিএনএনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এরদোয়াঁ জানান, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তুর্কিয়ের ‘বিশেষ’ সম্পর্ক রয়েছে।
 
এদিকে কিলিচদারোলু বলেন, তিনি পুতিনের সঙ্গে এরদোয়াঁর ব্যক্তিগত সম্পর্ক অনুসরণ করতে চাইবেন না। বরং মস্কোর সঙ্গে আঙ্কারার সম্পর্ক পুননির্মাণে কাজ করবেন।

বিশ্লেষকরা বলেছেন, এ নির্বাচনে এরদোয়াঁ ক্ষমতাচ্যুত হলেও তুর্কিয়ের পররাষ্ট্রনীতিতে খুব বেশি পরিবর্তন আসবে না।

নির্বাচনে তুর্কিয়ের ভোটারদের উদ্বেগের মূলে রয়েছে দেশটির বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা এবং সাম্প্রতিক ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি। ফেব্রুয়ারির ভূমিকম্প বিপর্যয়ের আগেও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং মুদ্রা সংকটে ছিল দেশটির জনগণ। গত অক্টোবরে তুর্কিয়ের মুদ্রাস্ফীতি ৮৫ শতাংশে পৌঁছায়।

এ ঘটনা জনসাধারণের ক্রয় ক্ষমতাকে প্রভাবিত করেছে এবং এ কারণে মূলত এরদোয়াঁর জনপ্রিয়তা কমেছে বলে মনে করেন সাবেক তুর্কিয়ে কূটনীতিক এবং ইস্তাম্বুলভিত্তিক থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক ইডিএএমের চেয়ারম্যান সিনান উলগেন।
 

ইস্তানবুলের একটি কেন্দ্রে ভোট দিচ্ছেন এরদোয়াঁ ও তার স্ত্রী এমিনে। ছবি: বিবিসি


অন্যদিকে সিএনএন-এর সঙ্গে সাক্ষাৎকারে এরদোয়াঁ তার অর্থনৈতিক নীতির সাফাই গেয়েছেন। জনগণের স্বাধীনতার উপর তার হস্তক্ষেপের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।

শাসনের সবচেয়ে শক্তিশালী বিরোধিতার মুখোমুখি হওয়ার মাঝেও এরদোয়াঁর ভবিষ্যত খুব একটা অন্ধকার নয় যেমনটা ভোটের আগে ধারণা করা হয়েছিল।

তিনি উল্লেখযোগ্য একটি ধর্মীয় দলের মাধ্যমে সমর্থিত, যারা ক্ষয়প্রাপ্ত অর্থনীতি বা ভূমিকম্পে সরকারের প্রতিক্রিয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ওয়াশিংটন ইন্সটিটিউট ফর নিয়ার ইস্ট পলিসির সিনিয়র ফেলো সোনার কাগাপ্টে বলেন, এরদোয়াঁর ‘ভালো মুসলিম নন এবং সন্ত্রাসী সমর্থিত’ এই কৌশলটি ডানপন্থি ভোটারদের প্রভাবিত করেছে, যারা কিলিচদারোলুকে নির্বাচিত করতে চেয়েছিলেন।

রান-অফ ভোটে এরদোয়াঁ আবারও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে তার ‘অপ্রচলিত অর্থনৈতিক নীতি, আইনের শাসনের অভাব এবং সামাজিক স্বায়ত্তশাসন অবসানের জয় হবে’ বলে মনে করেন কাগাপ্টে।


0 মন্তব্য

মন্তব্য করুন