আগুনে ছাই ঢাকার বঙ্গবাজার মার্কেট

বাসস

এপ্রিল ৪ ২০২৩, ১৮:০২

আগুনে ছাই ঢাকার বঙ্গবাজার মার্কেট
  • 0

বাংলাদেশের ঢাকায় বঙ্গবাজার মার্কেটে লাগা ভয়াবহ আগুনে বেশিরভাগ দোকান পুড়ে গেছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনীর প্রায় ৬ ঘণ্টা লেগেছে। কয়েক কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা।

ফায়ার সার্ভিসের কন্ট্রোল রুমের ডিউটি অফিসার লিমা খানম বলেন, ‘দমকল বাহিনীর ৪৮টি ইউনিট আগুন নেভাতে একনাগাড়ে প্রায় সাড়ে ৬ ঘণ্টা চেষ্টা করে। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। মঙ্গলবার সকাল ৬টা ১০ মিনিটে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। সকাল ৬টা ১২ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের প্রথম ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। এরপর একে একে ৪৮টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে।’

ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনীর সাহায্যকারী দল ও একটি হেলিকপ্টারও কাজ করেছে। সেইসঙ্গে পুলিশ, র‌্যাব, স্থানীয় ব্যবসায়ী ও স্বেচ্ছাসেবীরা আগুন নেভাতে সহায়তা করেন। 

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন বলেছেন, উৎসুক জনতার ভিড়ে আগুন নেভাতে বেশি সময় লেগেছে।

মোবাইলে ধারণ করা একটি ভিডিও দেখিয়ে তিনি জানান, উৎসুক জনতার ভিড়ে রাস্তা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।

তিনি বলেন, ‘আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে দুটি বাধা ছিল উৎসুক জনতা ও পানির স্বল্পতা। বাতাসের কারণেও আগুন নেভাতে কিছুটা বেগ পেতে হয়েছে। বাতাসের কারণে একদিকে আগুন নেভানোর পর আরেক দিকে তা ছড়িয়ে যাচ্ছিল।’

নিয়ন্ত্রণে এলেও মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত থেমে থেমে আগুনের হলকা দেখা গেছে মার্কেটের ভেতরে। 

আগুন লাগার খবর পেয়ে মার্কেটের ব্যবসায়ীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে যে যার মতো দোকান থেকে জিনিসপত্র বের করার চেষ্টা করেন। দিনভর ঘটনাস্থলের বাইরে বসে অনেক ব্যবসায়ী আহাজারি করেন। অনেকে জিনিসপত্র উদ্ধার করতে না পেরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। ঈদের আগে এত বড় ক্ষতি কীভাবে পুষিয়ে নেয়া সম্ভব- তা নিয়ে শঙ্কিত তারা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বঙ্গবাজারে অন্তত ছয়টি মার্কেট আগুনে পুড়ে গেছে। এর মধ্যে শুধু বঙ্গ মার্কেটেই প্রায় ৩ হাজার দোকান ছিল।

বঙ্গবাজার মার্কেট, ইসলামিয়া মার্কেট, বঙ্গ মার্কেট, আদর্শ মার্কেট- এই চারটি মার্কেট এক জায়গায় হওয়ায় মূলত সবগুলোই বঙ্গবাজার মার্কেট হিসেবে পরিচিত। এখান থেকে রাস্তার উল্টো পাশে এনেক্সকো ও বঙ্গো হোমিও মার্কেটেও আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে গোটা এলাকা।
 


বঙ্গবাজারের ৩৫০ নম্বর দোকানের ব্যবসায়ী মামুন জানান, এই আগুনে ৪ থেকে ৫ হাজারের মতো দোকান পুড়ে গেছে। কোটি কোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তারা।

বঙ্গবাজারের এনেক্সকো টাওয়ারে ৫ থেকে ৭ তলা পর্যন্ত পুড়েছে। সেখানে প্রত্যেক তলায় ১১৫টির মতো দোকান রয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির হিসাব পরে জানানো হবে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।

ফায়ার ডিজি বলেন, ‘২০১৯ সালের ২ এপ্রিল এই ভবনটিকে আমরা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছি এবং ব্যানার টাঙিয়েছি। এরপরে ১০ বার নোটিশ দিয়েছি। ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে যা যা করা সম্ভব ছিল, আমরা সব করেছি। তারপরও এখানে ব্যবসা চলছে।'

তিনি বলেন, ‘আগুন নিয়ন্ত্রণে আছে, আর ছড়াবে না। তবে, পুরোপুরি নেভাতে আরেকটু সময় লাগবে।’

আগুন কীভাবে লেগেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আগুন লাগার কারণ আমরা জানি না। আগুন নিভে যাওয়ার পরে এ ঘটনায় আমরা ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি করব। কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর আগুন লাগার কারণ বলা যাবে।' 

তিনি আরও বলেন, ‘আজকের ঘটনায় সিভিলিয়ান কেউ হতাহতের খবর এখন পর্যন্ত পাইনি। তবে ফায়ার সার্ভিসের ৮ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ২ জন গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি রয়েছেন।’

বঙ্গবাজারের কয়েক গজ দূরে অবস্থিত ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সদর দপ্তরে দোকানদারদের হামলার অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক বলেন, "ফায়ার সার্ভিসের সব পদবির কর্মচারী আপনাদের জন্য জীবন দেন। গত ১ বছরে ১৩ জন ফায়ারফাইটার শহীদ হয়েছেন, যারা ‘অগ্নিবীর' খেতাব পেয়েছেন। আহত হয়েছেন ২৯ জন। এমনকি আজকে ৮ জন আহত হয়েছেন। তারপরও কেন বা কারা ফায়ার সার্ভিসের ওপর আঘাত হানল?"


0 মন্তব্য

মন্তব্য করুন