রাশিয়ান দূতাবাস নির্মাণ ঠেকাতে অস্ট্রেলিয়ায় আইন পাস

টিবিএন ডেস্ক

জুন ১৫ ২০২৩, ১৫:৫৭

অস্ট্রেলিয়ায় নির্মাণাধীন রাশিয়ান দূতাবাস। ছবি: এবিসি নিউজ

অস্ট্রেলিয়ায় নির্মাণাধীন রাশিয়ান দূতাবাস। ছবি: এবিসি নিউজ

  • 0

অস্ট্রেলিয়ায় গুপ্তচরবৃত্তি ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের হুমকি এড়াতে দেশটির পার্লামেন্ট হাউজের পাশে রাশিয়ান অ্যামবেসি ভবন নির্মাণ ঠেকাতে আইন পাস করা হয়েছে। দেশটির পার্লামেন্ট সদস্যদের সর্বসম্মতিতে বৃহস্পতিবার এ আইন পাস করেন।

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ বলেছেন, নিরাপত্তা সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ী, এই আইনের আওতায় রাশিয়ার দ্বিতীয় দূতাবাসের জন্য লিজের আবেদন নাকচ করা হবে।

অ্যালবানিজ সাংবাদিকদের বলেন, ‘পার্লামেন্ট হাউজের এতো কাছে রাশিয়ার নতুন দূতাবাস নির্মাণের ঝুঁকি সম্পর্কে সরকার স্পষ্ট নিরাপত্তা সতর্কতার ইঙ্গিত পেয়েছে।

‘লিজে দেয়া সাইটটি যাতে আনুষ্ঠানিকভাবে কূটনৈতিক দন্দ্বে পরিণত না হয় তা নিশ্চিত করতে আমরা দ্রুত কাজ করছি।’

তিনি বলেন, অস্ট্রেলিয়ার সরকার ‘ইউক্রেইনে রাশিয়ার অবৈধ ও অনৈতিক আগ্রাসনের’ তীব্র নিন্দা করে।

অ্যালবানিজের দাবি, সরকারবিরোধীসহ অন্য আইন প্রণেতাদের বুধবার রাতেই আইনটি সম্পর্কে অবহিত করা হয়। পার্লামেন্টের সেনেট চেম্বারে সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকলেও বৃহস্পতিবার উভয় চেম্বারের সম্মতিতেই আইনটি পাস করা হয়।

রাশিয়ার দ্বিতীয় দূতাবাস নির্মাণ বন্ধের জন্য বিলটি সম্পর্কে অ্যালবানিজের প্রকাশ্য ঘোষণার ৩ ঘণ্টার মধ্যে তা আইনে পরিণত হয়েছে। তবে অস্ট্রেলিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান রাজা তৃতীয় চার্লসের পক্ষে গভর্নর জেনারেল ডেভিড হার্লি রাবার-স্ট্যাম্প করার পর বৃহস্পতিবার থেকে আইনটি কার্যকর হবে।

দেশটির হোম অ্যাফেয়ার্স মিনিস্টার ক্লেয়ার ও’নিল আইন পাসের পর পার্লামেন্টে ভাষণের সময় আইনটির গুরুত্ব নিয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘রাশিয়ার গুপ্তচরবৃত্তি ও অস্ট্রেলিয়ার রাজনীতিতে বিদেশিদের হস্তক্ষেপের সুযোগ আমাদের জন্য যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ।’

ও’নিল বলেন, ‘আমাদের আইন পাশের সিদ্ধান্তটি সরাসরি ও গঠনমূলক। আমি সুগারকোট করে কোনো কথা বলতে চাই না।

‘আমাদের দেশে গুপ্তচরবৃত্তি ও ভিনদেশিদের হস্তক্ষপের পক্ষে আমরা দাঁড়াব না । আমরা আমাদের দেশের গণতন্ত্র ও আমাদের নাগরিকদের নিরাপত্তা রক্ষায় কাজ করব। এর জন্য কারও কাছে ক্ষমা চাওয়ার প্রয়োজন নেই।’

তিনি বলেন, ‘ক্যানবেরায় প্রস্তাবিত রাশিয়ান দূতাবাসের মূল সমস্যা এর অবস্থান। প্রস্তাবিত দূতাবাস আমাদের পার্লামেন্টের লাগোয়া।’

দেশটির বিরোধীদলীয় নেতা পিটার ডাটনও রাশিয়ান হুমকির বিরুদ্ধে পার্লামেন্টের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ।

ডাটন পার্লামেন্টের বক্তব্যে বলেন, ‘আমাদের জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থি ও বিদেশি গুপ্তচরবৃত্তি আমরা মেনে নেব না। আমাদের দেশের নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করতে চাওয়া ভিনদেশিদের সহ্য করব না।’

অ্যালবানিজ বলেন, ‘আমরা আইনটি নিয়ে বিশেষভাবে কাজ করছি। খুবই নির্দিষ্ট পরামর্শের উপর ভিত্তি করে, সাইটটিতে দূতাবাসের নির্মাণ প্রকৃতি ও সেটি আমাদের পার্লামেন্টের কাজে কী পরিমাণ হস্তক্ষেপ করতে পারে সে সম্ভাবনা থেকে আইনটি তৈরি করা হয়েছে।’

তবে রাশিয়ান দূতাবাস থেকে স্বল্প দূরত্বের চায়না দূতাবাস নিয়েও একই ধরনের কোনো নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে কিনা সে সম্পর্কে অ্যালবানিজ কোনো মন্তব্য করেননি।

রাশিয়ান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা পরে এ বিষয়ে মন্তব্য করবে।

অস্ট্রেলিয়ায় রাশিয়ার নির্মাণাধীন প্রথম দূতাবাস কার্যালয় থেকে তাদের উচ্ছেদে ফেডারেল কোর্টের একটি মামলায় গত মাসে জয় পায় রাশিয়া। এরপরই তাদের দ্বিতীয় দূতাবাসের লিজ আটকে দিতে আইন তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় অস্ট্রেলিয়ার সরকার।

রাশিয়া ইয়ারালুমলার কূটনৈতিক অঞ্চলের জায়গাটি ২০০৮ সালে প্রথম দূতাবাসের নির্মাণের জন্য ৯৯ বছরের জন্য লিজ নেয়। লিজের দলিলে তিন বছরের মধ্যেই নির্মাণ কাজ শেষ করার প্রতিশ্রুতি থাকলেও এ পর্যন্ত শুধু এক রুমের একটি ছোট বিল্ডিং তৈরি করা হয়েছে।

অবশ্য রাশিয়ার দাবি, তারা ইতোমধ্যে দূতাবাসের জন্য ৫.৫ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছে।

অ্যাম্বাসির লিজ পরিচালনাকারী ন্যাশনাল ক্যাপিটাল অথরিটি রাশিয়ান লিজ বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা বলছে, ‘রাশিয়ান অ্যাম্বাসির নির্মাণাধীন ভবন কূটনৈতিক মিশনের জন্য সংরক্ষিত এলাকার সামগ্রিক নান্দনিক, গুরুত্ব ও মর্যাদায় বিঘ্ন ঘটাচ্ছে।’


0 মন্তব্য

মন্তব্য করুন