অ্যামেরিকায় একাকীত্ব এখন ‘মহামারী’: ভিভেক মুর্তি

টিবিএন ডেস্ক

মে ৩ ২০২৩, ১৭:৪৬

সার্জন জেনারেল ভিভেক মূর্তি। ছবি: ফাইল ছবি

সার্জন জেনারেল ভিভেক মূর্তি। ছবি: ফাইল ছবি

  • 0

অ্যামেরিকানদের অর্ধেকই একাকীত্বে ভুগছেন। এই মনোরোগ মহামারীর আকার ধারণ করতে যাচ্ছে।

এক সেমিনারে মঙ্গলবার এই সতর্কবার্তা দিয়েছেন সার্জন জেনারেল ভিভেক মুর্তি। একাকীত্ব মোকাবিলায় নজর দিতে রাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

মুর্তি বলেছেন, অ্যামেরিকায় ব্যাপক হারে বেড়েছে এই মনোরোগ। দিনে ১৫টি সিগারেট টানার মতোই স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হয় একাকীত্বে। এর ফলে প্রতি বছর স্বাস্থ্য খাতে গুনতে হচ্ছে বিলিয়ন ডলার।

এ সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট তৈরি করেছেন এই শীর্ষ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রায় অর্ধেক প্রাপ্তবয়স্ক অ্যামেরিকানের দাবী তারা একাকীত্ব বোধ করেছেন, নিজেকে পরিবার ও সমাজ থেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। 

রিপোর্ট বলছে, এই মনোরোগের কারণে অকাল মৃত্যু ২৬ শতাংশ ও সামাজিক বিচ্ছিন্নতা ২৯ শতাংশ বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সামাজিক বিচ্ছিন্নতার কারণে হৃদরোগ, স্ট্রোক, উদ্বেগ, বিষণ্নতা ও অনিদ্রায় আক্রান্তের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। এছাড়া একাকীত্বে আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে নিজের ক্ষতি করার প্রবনতাও দেখা দেয়। 

এপিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে মুর্তি বলেন, ‘আমরা জানি যে একাকীত্ব একটি সাধারণ অনুভূতি যা অনেকেই বোধ করেন। এটি ক্ষুধা বা তৃষ্ণার মতোই সাধারণ একটা বোধ। বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় কিছু না পেলে শরীর আমাদেরকে এ ধরনের অনুভূতির জানান দেয়।

অ্যামেরিকায় লক্ষাধিক মানুষ চুপচাপ একাকীত্বের সঙ্গে লড়াই করছে। এটা ঠিক নয়। এরকম বহু লোকের মনের সঙ্গে যুদ্ধকে প্রকাশ্যে আনতেই আমি এই প্রতিবেদন তৈরি করেছি।’

মুর্তির রিপোর্টের তথ্য অনুযায়ী সিবিএস নিউজ জানিয়েছে,গত কয়েক দশক ধরে অ্যামেরিকানরা ধর্মীয়, সামাজিক ও পারিবারিক সম্পৃক্ততা কমেছে। এ কারণে বেড়েছে একাকীত্ববোধ। আর করোনাকালে লকডাউনের কারণে এই বোধ তীব্র হয়েছে। 

দুই দশক আগেও আমেরিক্যানরা প্রতিদিন অন্তত ১ ঘণ্টা বন্ধুদের সঙ্গে কাটিয়েছে। ২০২০ সালে বন্ধুদের সঙ্গে কাটানো সময় কমে হয়েছে ২০ মিনিট। আর করোনাকালে কেবল অডিও বা ভিডিও কলের মাধ্যমে তারা বন্ধু ও স্বজনের সঙ্গে সময় কাটাতে পেরেছে।

জরিপের বরাতে রিপোর্টে বলা হয়েছে, ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণদের মধ্যে একাকীত্বের বোধ তীব্র। 

এসব কারণে একাকীত্বকে মহামারী আখ্যা দিয়েছেন সার্জন জেনারেল। এর জন্য প্রযুক্তিকে দায়ি করেছেন তিনি।

একটি গবেষণার বরাতে রিপোর্টে বলা হয়েছে, যারা দিনে দুই ঘণ্টা বা তারচেয়ে বেশি সময় ধরে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করেন, দিনে ৩০ মিনিটের কম সময় ধরে এই ধরনের অ্যাপ ব্যবহারকারীর তুলনায় তারা সামাজিক বিচ্ছিন্নতা অনুভব করেন দ্বিগুণ। 

মূর্তি বলেছেন, সোশ্যাল মিডিয়া একাকীত্ব বাড়িয়ে দিচ্ছে। যুব সমাজ কাল্পনিক জগতকে বাস্তব মনে করে মানসিকভেবে বিপর্যস্ত হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ার নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে তিনি আরও সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। 

তিনি বলেন, ‘মানুষে মানুষে সামনাসামনি আলাপচারিতার কোনো বিকল্প নেই। আমরা যোগাযোগের জন্য প্রযুক্তির উপর এতটা বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি যে সামনাসামনি কথাবার্তার অনেক উপভোগ্য বিষয় হারিয়ে ফেলেছি। 

‘আমাদের এমন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে হবে যা আমাদের সম্পকর্কে দুর্বল করার বদলে আরও শক্তিশালী করে তুলবে।’

একাকীত্ব ও সামাজিক বিচ্ছিন্নতাবোধকে ওবেসিটি ও ড্রাগ অ্যাডিকশনরই মতোই গুরুত্ব দিয়ে দেখতে রাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।


0 মন্তব্য

মন্তব্য করুন