আমরা নীরবতা অনুভব করি, কিন্তু নীরবতা শুনতে পাওয়ার ভাবনাটি বেশ জটিল। তবে বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন, মানুষ যেভাবে শব্দ শুনতে পায়, ঠিক একইভাবে শোনা যায় নীরবতাও।
‘সাউন্ড অফ সাইলেন্স’ একটি দার্শনিক প্রশ্ন। কয়েক দশক ধরে অডিটরি সায়েন্টিস্ট, মনোবিজ্ঞানী ও দার্শনিকদের মধ্যে এই প্রশ্ন ঘিরে বিতর্ক চলেছে। তবে সম্প্রতি প্রসিডিং অফ দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেসের এক গবেষোণায় প্রমাণ মিলেছে মানুষ নীরবতাও শুনতে পারে।
জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির দর্শন ও মনোবিজ্ঞানের পোস্ট গ্রাজুয়েশনের শিক্ষার্থী ও গবেষণার প্রধান লেখক রুই জে গোহ বলছেন, ‘আমরা সাধারণত আমাদের শ্রবণ শক্তিকে শব্দের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বলে মনে করি। কিন্তু নীরবতা যাই হোক না কেন শব্দ নয়। এটি শব্দের অনুপস্থিতি। আশ্চর্যজনকভাবে, আমাদের কাজটি যা নির্দেশ করে তা হলো আপনি কিছুই শুনতে পারছেন না। নীরবতা হল সময় কাটানোর অভিজ্ঞতা। এটি শুদ্ধ সময়ের একটি শ্রবণ অভিজ্ঞতা।’
প্রায় এক হাজার মানুষকে নিয়ে গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে। নীরবতার মুহূর্তের সঙ্গে ইলিউশনের শব্দকে অদলবদল করা হয় এই গবেষণায়। দেখা গেছে, নীরবতার ইলিউশন শব্দের ইলিউশন হিসেবেই বিবেচনা করেন তারা। তারা ভেবেছিলেন, একটি দীর্ঘ নীরবতা দুটি সংক্ষিপ্ত নীরবতার চেয়ে বেশি হবে। তবে বাস্তবে দেখা যায় দুটির মধ্যে কোনো তফাত নেই।
অর্থাৎ, গবেষণার ফল অনুযায়ী, নীরবতার ইলিউশন আর শব্দের ইলিউশন আমাদের একই অনুভূতি দেয়।
জন হপকিন্স পারসেপশন অ্যান্ড মাইন্ড ল্যাবরেটরি পরিচালনাকারী অ্যামেরিকান সহকারী অধ্যাপক চ্যাজ ফায়ারস্টোন বলছেন, ‘নীরবতা আমরা আক্ষরিক অর্থে উপলব্ধি করতে পারি কিনা তা নিয়ে দার্শনিকরা দীর্ঘকাল ধরে বিতর্ক করেছেন, তবে এই প্রশ্নটি নিয়ে সরাসরি কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণা হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের আগ্রহের বিষয় ছিল, শব্দের ক্ষেত্রে আমাদের মস্তিষ্ক যেভাবে সিগন্যাল দেয় ঠিক নীরবতার ক্ষেত্রেও তা ঘটে কিনা। নীরবতা যদি সত্যিই একটি শব্দ না হয় এবং তারপরও যদি আমরা এটি শুনতে পারি, তাহলে স্পষ্টতই এটি শব্দের চেয়ে বেশি কিছু।’
গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের ব্যস্ত রাস্তা, বাজার, বাস ও ট্রেন স্টেশনের শব্দ শুনতে দেয়া হয়। মাঝখানে কিছু সময়ের জন্য শব্দ বন্ধ করে সংক্ষিপ্ত নীরবতা তৈরি করা হয়।
গবেষণা শেষে সিদ্ধান্তে আসা গেছে এই নীরবতাও শব্দের মতো কিছু ইলিউশন তৈরি করে। বিজ্ঞানীরা ভেবেছিলেন এই ইলিউশন কেবল শব্দের মধ্যেই অনুভব করা যায়। তবে গবেষণায় দেখা গেছে নীরবতার সময়ও মানুষ একই অনুভূতি পায়।
ব্লুমবার্গের দর্শন ও মনস্তাত্ত্বিক এবং মস্তিষ্ক বিজ্ঞানের অধ্যাপক এবং গবেষণাপত্রের সহ-লেখক ইয়ান ফিলিপস বলেন, ‘অন্তত একটি জিনিস যা আমরা শুনতে পাই যেটি কোনো শব্দ নয় আর সেটিই হলো নীরবতা। আর এটি তখনই ঘটে যখন শব্দগুলো থাকে না।’
অর্থাৎ, আমরা সত্যিই শব্দের অনুপস্থিতিও শুনতে পাই।