অ্যারিযোনা: দ্য গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন স্টেইট

নাহিদ আল-কাদরী, টিবিএন ডেস্ক

মার্চ ২৩ ২০২৩, ১৯:৫৮

অ্যারিযোনার ম্যাপ

অ্যারিযোনার ম্যাপ

  • 0

অ্যামেরিকার ৪৮তম রাজ্য হিসেবে ১৯১২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ইউনিয়নে শেষ স্টেইট হিসেবে নাম লেখায় অ্যারিযোনা।

অ্যারিযোনা দক্ষিণ-পশ্চিম অ্যামেরিকার একটি স্থলবেষ্টিত স্টেইট, যেটি ‘দ্য গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন স্টেইট’ নামেও পরিচিত। এর উত্তরে ইউটা সীমান্ত, পূর্বে নিউ মেক্সিকো, দক্ষিণে দ্য মেক্সিকান স্টেইটস অব সোনোরা ও বাজা ক্যালিফোর্নিয়া, পশ্চিমে ক্যালিফোর্নিয়া এবং উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে নেভাডা অবস্থিত। এই স্টেইট কলোরাডোর সঙ্গে ফোর কর্নারস পয়েন্টের উত্তর-পূর্ব প্রান্তসীমায় মিলিত হয়।

জলবায়ু

অ্যারিযোনার বেশিরভাগ অঞ্চলের জলবায়ুর সঙ্গে মরুভূমি কিংবা আংশিক মরু-অঞ্চলের মিল রয়েছে। অবশ্য এর উত্তরাঞ্চলের জলবায়ু অন্যরকম; যাকে বলা হয় স্টেপ ক্লাইমেট। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ভূমির উচ্চতার উপর নির্ভর করে এ অঞ্চলে শীতকালে মৃদু শীত আর গ্রীষ্মকালে গরম পড়ে। পাথুরে পাহাড়ের কাছাকাছি হওয়ায় রাত ও দিনের তাপমাত্রায় বেশ তারতম্য দেখা যায়।

সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

১৫৯৮ সালে অ্যারিযোনা স্পেনের অধীনে ছিল। স্টেইটটি ১৮২১ সাল পর্যন্ত নিউ স্পেনের অংশ হিসেবে পরিচিতি পায়। এরপর স্বল্পমেয়াদি মেক্সিকান সাম্রাজ্যের অধীনে থাকার পর গড়ে ওঠে ইউনাইটেড মেক্সিকান স্টেইট। ১৮৪৬ সালে অ্যামেরিকা অঞ্চলটি দখল করে নিয়ে নাম দেয় ‘নিউ মেক্সিকো’।

১৮৪৮ সালের ‘গুয়াদালুপে হিডালগো’ চুক্তির মাধ্যমে অ্যামেরিকা-মেক্সিকো যুদ্ধের অবসান ঘটে । ১৮৫০ সালে নিউ মেক্সিকো অ্যামেরিকার দখলে চলে আসে। আর ১৮৫৪ সালে গ্যাডসডেন পারচেজের মাধ্যমে মেক্সিকোর ২৯ হাজার ৬৭০ বর্গমাইল অঞ্চল কিনতে মেক্সিকোকে ১০ মিলিয়ন ডলার দেয় অ্যামেরিকা। অঞ্চলটি পরে অ্যারিযোনা ও নিউ মেক্সিকোর অংশ হয়ে ওঠে। 

গুয়াদালুপে হিডালগো চুক্তির মাধ্যমে সেই অঞ্চল অ্যামেরিকার অধীনে আসে ১৮৬৩ সালে।

১৮৫৪ সালে তামা আবিষ্কৃত হয়, যা ১৯৫০– এর দশক পর্যন্ত অ্যারিযোনার প্রধান শিল্প ছিল। অ্যামেরিকার ৪৮তম রাজ্য হিসেবে ১৯১২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ইউনিয়নে শেষ স্টেইট হিসেবে নাম লেখায় অ্যারিযোনা। 

ভৌগোলিক অবস্থান

অঞ্চল

অ্যারিযোনা আয়তনে ইটালি বা ফিলিপিন্সের চেয়ে ছোট। এর আয়তন ২ লাখ ৯৫ হাজার ২৩৪ বর্গকিলোমিটার বা ১ লাখ ১৩ হাজার ৯৯০ বর্গমাইল, যার তুলনায় টেক্সাস স্টেইট ২.৪ গুণ বড়। 

ল্যান্ডস্কেপ

অ্যারিযোনার দক্ষিণ অংশ মরু ল্যান্ডস্কেপের জন্য সুপরিচিত। স্টেইটের উত্তরাঞ্চলের কলোরাডো মালভূমি তুলনামূলক উঁচু কিছু মরু অঞ্চল নিয়ে গঠিত, যেখানে অনেক বনাঞ্চলও রয়েছে। 

এই মালভূমির কিছু অংশে পেইন্টেড মরুভূমি ও পেট্রিফায়েড বন নিয়ে জাতীয় উদ্যান রয়েছে। অ্যারিযোনা-উটাহ স্টেট লাইনে বেলেপাথরের মনুমেন্ট ভ্যালি রয়েছে, যা উপত্যকা থেকে ৩০০ মিটার উপরে অবস্থিত। এই উপত্যকাটিকে পশ্চিমা চলচ্চিত্রে বহুবার দেখানো হয়েছে।

সর্বোচ্চ উচ্চতা

হামফ্রেস পিক এই স্টেইটের সবচেয়ে উঁচু প্রাকৃতিক অঞ্চল, যা উচ্চতায় ৩ হাজার ৮৫২ মিটার। এটি ফ্ল্যাগস্টাফ থেকে প্রায় ১১ মাইল উত্তরে কাচিনা পিকস ওয়াইল্ডারনেসের মধ্যে অবস্থিত। 

প্রধান নদী

কলোরাডো দক্ষিণ-পশ্চিম অ্যামেরিকার অন্যতম প্রধান নদী। এটি নেভাডার সঙ্গে অ্যারিযোনা ও ক্যালিফোর্নিয়ার বেশিরভাগ সীমান্ত রেখা তৈরি করেছে।কলোরাডোর একটি উপ-নদীর নাম দ্য লিটল কলোরাডো; যেটি পেইন্টেড মরুভূমি অঞ্চলের অন্যতম প্রধান নিষ্কাশন ব্যবস্থা তৈরি করেছে। 

গিলা নদী নিউ মেক্সিকো ও অ্যারিযোনার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। এটি কলোরাডো নদীর ৬৪৯ মাইলের একটি প্রধান উপ-নদী। সল্ট রিভার গিলা নদীর বৃহত্তম উপ-নদী এবং ভার্ডে নদী সল্ট রিভারের প্রধান শাখা-নদী। দক্ষিণ অ্যারিযোনার সান পেড্রো, স্যান্টা ক্রুজ ও মেক্সিকোর উত্তর সোনোরা নদীও গিলা রিভারের শাখানদী।

ঐতিহ্যবাহী স্থান

গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন ন্যাশনাল পার্ক অ্যামেরিকার ২৩টি ইউনেসকো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের মধ্যে একটি। এই স্টেইটের সবচেয়ে পরিচিত ও জনপ্রিয় প্রাকৃতিক ল্যান্ডমার্ক এটি। কলোরাডো নদী ও এর শাখা নদীগুলো দুই বিলিয়ন বছর ধরে লাল শিলার স্তরিত গিরিখাত তৈরি করেছে; যা ২৭৭ মাইল দীর্ঘ ও ১৮ মাইল পর্যন্ত প্রশস্ত। এর গভীরতা প্রায় এক মাইল।

জনসংখ্যা

২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, গ্র্যান্ড অ্যারিযোনার জনসংখ্যা ৭.৩ মিলিয়ন। এর রাজধানী ও বৃহত্তম শহরের নাম ফিনিক্স। দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর টুসন- যেখানে আধ মিলিয়নেরও বেশি মানুষের বসবাস। স্টেইটের বৃহত্তম শহুরে এলাকা ফিনিক্স মেট্রোপলিটন, যেখানে জনসংখ্যা ৪.৮৫ মিলিয়ন।

জাতি ও জাতিগোষ্ঠী

অ্যারিযোনার মোট জনসংখ্যার ৫৪.৪ শতাংশ হোয়াইট, ৩১.৬ শতাংশ হিস্প্যানিক বা ল্যাটিনো, ৫.৩ শতাংশ ন্যাটিভ অ্যামেরিকান, ৫.১ শতাংশ আফ্রিকান অ্যামেরিকান ও ৩.৭ শতাংশ এশিয়ান।

প্রধান শহর

দ্য গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন স্টেইটের শহরের সংখ্যা ৯১টি। এর মধ্যে ফিনিক্স, টুসন, স্কটসডেল, টেম্প, মেসা ও গ্লেনডেল অন্যতম।


0 মন্তব্য

মন্তব্য করুন