নিউ ইয়র্ক – দ্য এম্পায়ার স্টেইট
নাহিদ আল-কাদরী, টিবিএন ডেস্ক
মে ৬ ২০২৩, ২৩:৫২
- 0
১৭৮৮ সালের ২৬ জুলাই ইউএস সংবিধানের অনুমোদন দেয় নিউ ইয়র্ক। ইউনিয়নে যোগ দেয়া মূল ১৩টি স্টেইটের মধ্যে এটি ১১ তম।
নিউ ইয়র্ক স্টেইটের অবস্থান অ্যামেরিকার উত্তর-পূর্ব ক্যানাডিয়ান প্রদেশ কুইবেক ও অন্টারিওর মাঝামাঝি। এর উত্তর-পশ্চিমে লেইক অন্টারিও এবং দক্ষিণ-পূর্বে অ্যাটলান্টিকের উপকূল অবস্থিত। ভার্মন্ট, ম্যাসাচুসেটস, কানেকটিকাট, নিউ জার্সি এবং পেনসিলভেনিয়া নিউ ইয়র্কের প্রতিবেশী স্টেইট। এর সেন্ট লরেন্স রিভারের একটি অংশ ক্যানাডার সঙ্গে সীমানা গড়েছে।
অঞ্চলটিতে প্রথম জনবসতি স্থাপন করেন ডাচরা। ১৬৬৪ সালে জায়গাটি বৃটেইনের দখলে চলে আসে।
আজকের নিউ ইয়র্ক অঞ্চলটি ইউএস মূল ভূখণ্ডের অংশ ছিল। ১৬৬৪ সালে চার্টার্ড করা হলে, এটি বিশাল এলাকাজুড়ে বিস্তৃত হয়ে পড়ে। স্টেইটটির একটি অংশ নিউ জার্সি তৈরির উদ্দেশ্যে বিক্রি করা হয়।
১৭৮৮ সালের ২৬ জুলাই নিউ ইয়র্ক ইউএস সংবিধানের অনুমোদন দেয়। ইউনিয়নে যোগ দেয়া মূল ১৩টি স্টেইটের মধ্যে এটি ১১ তম।
অনেকে নিউ ইয়র্ককে ‘দ্য এম্পায়ার স্টেইট’ নামেও চেনেন।
ভৌগোলিক অবস্থা
অঞ্চল
নিউ ইয়র্কের আয়তন ৫৪,৫৫৬ বর্গ মাইল। তুলনায় এটি গ্রিসের থেকে কিছুটা বড়। তবে এটি টেক্সাসের চেয়ে প্রায় পাঁচ গুণ ছোট।
স্টেইট ল্যান্ডফর্ম এবং বিনোদনমূলক এলাকা
- আপস্টেট নিউ ইয়র্ক মেট্রোপলিটন এলাকার একটি গ্রামীণ পশ্চিমাঞ্চল। এটি নিউ ইয়র্ক রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত একটি প্রাইমেট শহর। এলাকাটি নিউ ইয়র্ক মেগাসিটিতে দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য, ফল (বিশেষ করে আপেল), মদ, পানি এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ করে থাকে।
- এই এলাকায় প্রচুর বিনোদনমূলক স্থান রয়েছে। নিউ ইয়র্ক স্টেইটের পাহাড়ী ল্যান্ডস্কেপের দর্শনীয় স্থানগুলোকে অ্যাডিরনড্যাক পর্বতমালা বলা হয়। পাহাড়গুলো হাডসন, ব্ল্যাক রিভার এবং মোহাক রিভারের প্রধান উৎস। এগুলো রাজ্যের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত।
- স্টেইটের জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম মিরর লেইক (লেক প্লাসিড), টুপার লেইক এবং অ্যাডিরনড্যাক পার্কের ওয়াইল্ড সেন্টার। অ্যাডিরনড্যাকের পর্যটন আকর্ষণের তালিকায় নতুন যোগ হয়েছে ওয়াইল্ড ওয়াক।
- অ্যাডিরন্ড্যাকসের মধ্যে স্টেইটের সর্বোচ্চ বিন্দু মাউন্ট মার্সি। এটি উচ্চতায় ৫,৩৪৪ ফুট। পর্বতটি প্লাসিড লেক থেকে প্রায় ১৩ মাইল দক্ষিণে অবস্থিত।
- নায়াগ্রা ফলসের নায়াগ্রা রিভারকে বিভক্ত করেছে গোট আইল্যান্ড। এর পশ্চিমে ক্যানাডিয়ান তীর সংলগ্ন হর্সশু জলপ্রপাত, যার উচ্চতা ১৫৮ ফুট।
- নিউ ইয়র্ক রাজ্যের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশ, অন্টারিও লেইক এবং মোহাক উপত্যকার দক্ষিণে অ্যাল্লেঘেনি মালভূমি বা অ্যাপালাচিয়ান হাইল্যান্ডস অবস্থিত। এর পূর্ব অংশের ক্যাটস্কিল পর্বতমালা প্রচুর বন্যপ্রাণী, হাইকিং ট্রেইল এবং স্কি রিসর্টের জন্য বিখ্যাত।
নদী ও লেইক
নিউ ইয়র্ক স্টেইটে ৭,৬০০ টিরও বেশি মিষ্টি জলের লেইক, পুকুর এবং জলাশয় রয়েছে। সেইসঙ্গে পাঁচটি গ্রেট লেইকের দুটির অংশের আয়তন ৭০,০০০ মাইল। রাজ্যের প্রধান নদীগুলো সেন্ট লরেন্স, হাডসন, ব্ল্যাক রিভার, সুসকেহানা এবং ডেলাওয়্যার রিভার।
স্টেইটটিতে লেইক অন্টারিও এবং লেইক এরি'র উপকূলরেখা রয়েছে। রাজ্যের বৃহত্তম হ্রদ ওনিডা লেইকের পশ্চিমে রয়েছে ফিঙ্গার লেক, যা ১১টি লম্বা, সরু, লচের মতো হ্রদ নিয়ে গঠিত। অ্যাডিরনড্যাক অঞ্চলের লেইক জর্জ (অ্যামেরিকান লেকের রানী) ১৯ শতকের শেষের দিক থেকে জনপ্রিয় পর্যটন স্থান হিসেবে জায়গা করে নেয়।
শহর ও দ্বীপ
নিউ ইয়র্ক সিটিতে স্টেইটের মোট জনসংখ্যার দুই-পঞ্চমাংশ মানুষের বসবাস। শহরটি পাঁচটি কাউন্টি-স্তরের প্রশাসনিক বিভাগে বিভক্ত; যাকে বলা হয় বরো। বরোগুলো ম্যানহাটন, ব্রুকলিন, কুইন্স, ব্রঙ্কস এবং স্টেটেন আইল্যান্ড। শহরটি তিনটি বড় দ্বীপে বিস্তৃত; সেগুলো হলো ম্যানহাটন, স্টেটেন আইল্যান্ড এবং লং আইল্যান্ড।
লং আইল্যান্ড, নিউ ইয়র্কের সবচেয়ে দক্ষিণ-পূর্ব অংশে অবস্থিত। দ্বীপটি নিউ ইয়র্ক সিটি থেকে পূর্ব দিকে ১১৯ মাইল, লং আইল্যান্ড সাউন্ডের দক্ষিণে এবং কানেকটিকাটের দক্ষিণ উপকূলে সমান্তরালে বিস্তৃত হয়েছে। এর পশ্চিম প্রান্তে নিউ ইয়র্ক সিটির ব্রুকলিন এবং কুইন্সের বরো।
ওয়ার্ল্ড হেরিটেয সাইট
নিউ ইয়র্কের একটি আশ্চর্যজনক ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেয সাইট রয়েছে। সেটি হলো ম্যানহাটনের লিবার্টি দ্বীপে অবস্থিত বিশ্ব বিখ্যাত স্ট্যাচু অফ লিবার্টি। স্ট্যাচু অফ লিবার্টি ১৯৮৪ সাল থেকে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেয সাইট হিসেবে পরিচিত। মূর্তিটি আইফেল টাওয়ারের শিল্পী গুস্তাভ আইফেলের সহযোগিতায় প্যারিসে তৈরি করেছিলেন ফরাসি ভাস্কর ফ্রেডেরিক বার্থোল্ডি। এই আর্টওয়ার্ক, 'লিবার্টি এনলাইটেনিং দ্য ওয়ার্ল্ড' নামেও পরিচিত। অ্যামেরিকাকে স্বাধীনতার শতবর্ষে এটি উপহার দেয় ফ্রান্স।
জনসংখ্যা
২০২১ সালের তথ্য অনুযায়ী, অ্যামেরিকার তৃতীয় সর্বোচ্চ জনবহুল এই স্টেইটের জনসংখ্যা ২০ মিলিয়ন।
জাতি ও জাতিগোষ্ঠী
নিউ ইয়র্কের জনসংখ্যার হোয়াইট ৫৫ দশমিক চার শতাংশ, হিস্প্যানিক বা ল্যাটিনো ১৯ দশমিক দুই শতাংশ, আফ্রিকান অ্যামেরিকান ১৭ দশমিক ছয় শতাংশ, এশিয়ান নয় শতাংশ এবং নেইটিভ অ্যামেরিকান এক শতাংশ।
শহর
এমপায়ার স্টেইটের শহরগুলোর মধ্যে নিউ ইয়র্ক, বাফেলো, রচেস্টার, সিরাকিউস , এবং অ্যালবানি অন্যতম।
বিমানবন্দর
নিউ ইয়র্কের বৃহত্তম বিমানবন্দরগুলোর মধ্যে জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, নিউ ইয়র্কের লাগার্ডিয়া বিমানবন্দর, বাফেলো নায়াগ্রা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, আলবানি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, গ্রেটার রচেস্টার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং সিরাকিউস হ্যানকক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর অন্যতম।