পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও নিয়মিত শিকার করতেন আদিম সমাজে

টিবিএন ডেস্ক

জুন ২৯ ২০২৩, ৫:৩০

ইন্দোনেশিয়ার দালি গোত্রের এক নারী শিকার করছেন। ছবি: সংগৃহীত

ইন্দোনেশিয়ার দালি গোত্রের এক নারী শিকার করছেন। ছবি: সংগৃহীত

  • 0

সারা বিশ্বের খাদ্য অন্বেষণ ভিত্তিক সমাজ নিয়ে এক গবেষণায় দেখা গেছে আদি সমাজে নারীদের একটি বড় অংশ শিকার করত। এই গবেষণা নিশ্চিত করে যে খাদ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে পুরুষ প্রাধান্যের প্রচলিত ধারণা ভুল।

আদিম সমাজে নারীরা বাড়িতে অবস্থান করত ও পুরুষ শিকার করত ধারণাটি প্রায় সম্পূর্ণ ভুল। প্রকৃতপক্ষে, ৮০ শতাংশ সমাজে নারীরা শিকার করত। এদের এক তৃতীয়াংশ বড় শিকার যার ওজন ৩০ কিলোগ্রামের চেয়ে বেশি শিকার করত। এর পাশাপাশি ছোট প্রাণীও তারা শিকার করত।

সিয়াটলের ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির জীববিজ্ঞানের শিক্ষক কারা ওয়াল-শেফলারের মতে, এ গবেষণার ফল দিয়ে অতীত ও বর্তমানের সমস্ত ফরেজিং সোসাইটির (খাদ্য অন্বেষণ ভিত্তিক সমাজ) প্রতিনিধিত্ব করা যেতে পারে।

তিনি বিজ্ঞান বিষয় সাময়িকী নিউ সায়েন্টিস্টকে বলেন, ‘আমাদের প্রায় ১৫০ বছরের নৃতাত্ত্বিক গবেষণা রয়েছে। প্রতিটি মহাদেশ ও প্রতিটি মহাদেশের একাধিক সংস্কৃতিতে আমরা দেখেছি। সারা বিশ্বের মানুষ যা করে তার একটি বড় অংশ আমরা অন্তর্ভুক্ত করতে পেরেছি।’

বিজ্ঞানীরা আগেই প্রমাণ পেয়েছেন যে, অতীতের অনেক সংস্কৃতিতে নারীরা শিকার করত। উদাহরণস্বরূপ ২০২০ সালের একটি গবেষণার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে যেখানে দেখা গেছে অ্যামেরিকায় শিকারের অস্ত্রের সঙ্গে সমাধিস্থ ২৭টি আদি মৃতদেহের প্রায় অর্ধেকই নারীর। এরপরও বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত ছিলেন না।

ওয়াল-শেফলার বলেন, ‘একটি ধারণা রয়েছে যে পুরুষরা শিকারী ও নারীরা শিকারী নয়। মানুষ কীভাবে তত্ত্বকে ব্যাখ্যা করে তার ওপর প্রভাব ফেলে এ ধারণা।’

তার দল ডি-প্লেস নামের একটি ডেটাবেস দেখেছে যেখানে গত ১৫০ বছরে বিশ্বব্যাপী ১৪ শটিরও বেশি মানব সমাজের রেকর্ড রয়েছে। নথিভুক্ত খাদ্য অন্বেষণ সমাজের ৬৩টির শিকারের তথ্য এতে আছে। এর মধ্যে ৫০টিতে নারীর শিকারের বর্ণনা আছে।

৪১টির ক্ষেত্রে এই রেকর্ড আছে যে, নারীদের শিকার করা ইচ্ছাকৃত বা সুবিধাজনক ছিল কিনা। অর্থাৎ, শাক-সব্জী সংগ্রহ করার সময় সামনে পাওয়া কোনো প্রাণী তারা মেরেছেন নাকি আদতে শিকার করতে বেরিয়েছিলেন। ৮৭ শতাংশ ক্ষেত্রে, এটি ইচ্ছাকৃত ছিল।

ওয়াল-শেফলারের কাছে এই সংখ্যা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি।

দলটি নারীদের শিকার করা প্রাণীর আকারের ডেটাও দেখেছে। ৪৫ টি ফোরেজিং সোসাইটির জন্য যা রেকর্ড করা হয়েছিল। ৪৬ শতাংশ ক্ষেত্রে টিকটিকি ও ইঁদুরের মতো ছোট শিকার ছিল। ১৫ শতাংশ ক্ষেত্রে বড় ও ৩৩ শতাংশ ক্ষেত্রে বড় শিকার ছিল। এদের মধ্যে ৪ শতাংশ সমাজে নারীরা সব আকারের শিকার করত।

ওয়াল-শেফলার বলেন, ‘নারীরা শিকারে যাওয়ার সময় নানা ধরনের সরঞ্জাম ব্যবহার করতেন। বিভিন্ন ধরনের মানুষের সঙ্গে তারা শিকারে বের হতেন।’

ওয়াল-শেফলার যোগ করেন যে, নারীরা একা বা পুরুষ সঙ্গী, অন্য নারী, শিশু বা কুকুরের সঙ্গে শিকারে বের হতো। নারী শিকারীরা সাধারণত তীর ও ধনুক ব্যবহার করত। তবে ছুরি, জাল, বর্শা, দা, ক্রস-বো ও আরও অন্য অস্ত্রও ব্যবহার করত।

অনেক সমাজে নারীদের সব অস্ত্র ব্যবহারের নিয়ম ছিল না ফলে তারা বিকল্প খুঁজে নিতো। অনেক সময় নারীরা তাদের শিশুকে পিঠে বেঁধেই শিকারে যেত।

অ্যামেরিকায় সমাধি নিয়ে গবেষণা চালানো দলের প্রধান মিশিগানের ওয়েন স্টেইট ইউনিভার্সিটির র‍্যান্ডি হাস বলেন, ‘এ গবেষণাটি একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বিশ্লেষণ করে। এতে প্রাপ্ত অনুসন্ধান ও এর সঙ্গে সম্পর্কিত প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধান দৃঢ়ভাবে দেখায় যে জীবিকা শ্রমের বিভাজন পুরনো ধারণার চেয়ে অনেক বেশি পরিবর্তনশীল।’


0 মন্তব্য

মন্তব্য করুন