ভারতে জাতিগত সহিংসতায় অর্ধশত প্রাণহানি

টিবিএন ডেস্ক

মে ৭ ২০২৩, ২০:৩৫

ছবি: গেটি ইমেযেস

ছবি: গেটি ইমেযেস

  • 0

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় মণিপুর রাজ্যে জাতিগত সহিংসতায় অর্ধশতেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি অন্তত ২০০ জন।

সহিংসতার জেরে বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়েছেন ২৩ হাজার বাসিন্দা।

মণিপুরের অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়নের একটি র‍্যালির জেরে মনিপুরের কুকি ও মেইতি জনগোষ্ঠীর মধ্যে গত মঙ্গলবার থেকে শুরু হয় উত্তেজনা, যা পরদিন রূপ নেয় সংঘর্ষে। 

রাজ্যের ইম্ফল শহরের হাসপাতালের কর্মকর্তাদের রোববারের তথ্য অনুযায়ী, সহিংসতায় কমপক্ষে ৫৫  জনের প্রাণহানি হয়েছে। হাসপাতালে নেয়া হয়েছে আরও ২৬০ জনকে। 

ভারতীয় সেনাবাহিনী জানিয়েছে, বাস্তুচ্যুত ২৩ হাজার মানুষ রাজ্যের সামরিক ঘাঁটি ও গ্যারিসনে আশ্রয় নিয়েছে। 

সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে ড্রোন ও হেলিকপ্টার ব্যবহার করে ৯৬ ঘণ্টার অভিযান চালিয়েছে ১২০ থেকে ১২৫ সেনা ও আসাম রাইফেলস সদস্যরা। পরিস্থিতি সামলাতে রাজ্যের বিভিন্ন শহরের রাস্তায় সেনা মোতায়েন করা হয়েছে, কিছু জায়গায় কারফিউ জারি হয়েছে। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ইন্টারনেট।

ভারতের ‘তফসিলি আদিবাসী’ হিসেবে মেইতি গোষ্ঠীর সম্ভাব্য অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে গত মঙ্গলবার র‍্যালি বের করে মণিপুরের অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন। পরদিন তাদের আরেক র‍্যালিতে মেইতি গোষ্ঠীর সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে। ওই র‍্যালিগুলোর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন কুকি গোষ্ঠীর সদস্যরা।

এরপর দফায় দফায় দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়ায়, বাড়িঘরে হামলা-ভাঙচুর চালানো হয়।

ছবি: রয়টার্স

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের ফুটেজ ও ছবিতে রাস্তায় যানবাহন ও বিভিন্ন ভবনে কালো ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে। 

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রথমে রাজ্যের গভর্নর আনুসুইয়া উইকে ‘শুট-অ্যাট-সাইট’ বা সহিংসতায় জড়িতের দেখামাত্র গুলির আদেশ জারি করেন। এরপর আসে কারফিউর নির্দেশ। তাতেও থামেনি সহিংসতা।  

মণিপুরের স্বরাষ্ট্র দফতর এক বিবৃতিতে বলে, ‘সব যৌক্তিক প্রচেষ্টা স্বত্বেও আমরা সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনতে পারিনি।’

মণিপুরের চুরাচাঁদপুর জেলা হাসপাতালের চিকিৎসক ম্যাং হাটযো সিএনএনকে বলেন, ‘এখানে ভর্তি বেশিরভাগ রোগী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। অনেকের মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করা হয়েছে।’

ছবি: এএফপি

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইম্ফালে কর্মরত এক তরুণ ট্রাইবাল নেতা সিএনএনকে জানান, ৪ মে তার বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। তারপর থেকে তিনি একটি সেনা ক্যাম্পে অবস্থান নিয়েছেন।

ওই তরুণ বলেন, ‘মনে হচ্ছে এই হামলা একটি সুপরিকল্পিত সিরিয। তারা বেঁছে বেঁছে আমাদের সম্প্রদায়ের লোকদের ওপর হামলা চালিয়েছে। বহু বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে, সমস্ত গির্জা ভাঙচুর করেছে। আমি প্রতিবেশীর বাড়ির দেয়াল টপকে পালিয়ে ক্যাম্পে এসে আশ্রয় নিয়েছি।’

ঘটনার ভয়াবহতা বর্ণনায় তিনি বলেন, ‘এক মা ও তার ছেলে একটি ক্যাম্পে আশ্রয় নিতে যাচ্ছিলেন। সে সময় মায়ের সামনে ছেলেকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ছেলেকে বাঁচাতে গেলে সেই মাকেও হত্যা করা হয়।’ 

সিএনএন রোববার মণিপুর রাজ্য সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও, রাজ্য সরকারের তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। 

মণিপুর রাজ্যের জনসংখ্যার প্রায় ৫০ শতাংশ মেইতি সম্প্রদায়। স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সরকারি চাকরিসহ বিভিন্ন সুবিধা পেতে তারা বছরের পর বছর ধরে নিজেদের ‘তফসিলি আদিবাসী’ হিসাবে স্বীকৃতি পেতে প্রচার চালিয়ে আসছে।

অন্যান্য আদিবাসী গোষ্ঠীর অভিযোগ ছিল, মেইতি সম্প্রদায়কে এই মর্যাদা দেয়া হলে সরকারি চাকরি ও অন্যান্য সুবিধাগুলো থেকে তারা বঞ্চিত হবেন।


0 মন্তব্য

মন্তব্য করুন