প্রাণীকোষ থেকে উৎপাদিত মাংসের বিপুল সম্ভাবনা
টিবিএন ডেস্ক
জুলাই ১০ ২০২৩, ১৭:৫০
- 0
মানুষ মাংসের জন্য পশুপাখি জবাই করে আসছে হাজার হাজার বছর ধরে। ডক্টর উমা ভ্যালেটি একটি ভিন্ন উপায়ের চিন্তা করছিলেন- কী করে মুরগি না মেরে মুরগি খাওয়া যায়। এরপর তিনি পশুর কোষ থেকে সরাসরি কীভাবে মাংস তৈরি করা যায় তা খুঁজে বের করেছেন।
এটি মাংসের বিকল্প হিসেবে উদ্ভিজ্জ প্রোটিনসহ উদ্ভিদভিত্তিক বিভিন্ন উপাদান থেকে তৈরি। ভ্যালেটি বলেন, ‘এটি আসলে মাংস, এতে কোনো রকম আপস করা হয়নি।’
তার কোম্পানি আপসাইড ফুডস ক্যালিফোর্নিয়ার এমেরিভিলের উৎপাদন কেন্দ্রে তৈরি মাংস বিক্রি শুরুর জন্য ইউএসডিএ থেকে ছাড়পত্র পেয়েছে। এখানে ট্যাঙ্কে মুরগি উৎপাদন করা হয়। তিনি বলেন, ‘আমরা অবিলম্বে প্রতি বছর ৫০০০০ থেকে ৭৫০০০ পাউন্ড মাংস উৎপাদনে সক্ষম হব।’
ডিম বা জীবন্ত মুরগি থেকে বের করা প্রাণী কোষ দিয়ে প্রক্রিয়াটি শুরু হয়। কোষগুলো ছোট থিম্বল (ছোট কাপ) আকারের শিশিতে হিমায়িত করা হয়। ভ্যালেটি বলেন, ‘অল্প পরিমাণে নেয়া উচ্চমানের কোষ থেকে ল্যাবে মাংস তৈরি করা হয়। সেই অল্প পরিমাণ থেকে আমরা হাজার হাজার পাউন্ড মাংস বানাতে পারি।’
কোষগুলোকে গুণগতভাবে বৃদ্ধি করে মাংসে পরিণত করার একটি অংশ হচ্ছে আলকেমি। একটি টারবাইনে কোষ বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত খাবারে মিশ্রিত করা হয়। খাবার হিসেবে অ্যামিনো অ্যাসিড, চর্বি, ভিটামিন ইত্যাদি প্রয়োজন হয়। তিনি বলেন, ‘চিন্তাটি আসে যখন একটি প্রাণী জীবিত থাকে সেখানে রক্ত সঞ্চালন হয়, ক্রমাগত কিছু না কিছু প্রাণীর দেহে ঘুরে বেড়ায়, যা কোষ এবং প্রাণীর শরীরকে স্পর্শ করে। আমরা কেবল ব্যবস্থাটি পুনরায় তৈরি করছি।’
ভ্যালেটি বলেন, প্রায় ১০ দিনের মধ্যে কোষগুলো রান্নার জন্য প্রস্তুত মুরগির মাংসে পরিণত হয়। এখন অবধি যা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী হিসেবে বিবেচনা করা হতো সেটি এখন বাস্তব। ভ্যালেটি বলেন, ‘স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মতো।’
ভারতে বেড়ে ওঠা ভ্যালেটির স্বপ্ন ছিল একজন কার্ডিওলজিস্ট হওয়ার। স্বপ্নটি তিনি তার মা-বাবার সাহায্যে বাস্তবায়িত করেছেন। তিনি বলেন, ‘তারা সবসময় জানত আমার জীবনের লক্ষ্য হলো একজন কার্ডিওলজিস্ট হওয়া। আমি শুধু মায়ো ক্লিনিকে প্রশিক্ষণ নিতে চেয়েছিলাম এবং মায়ো ক্লিনিকে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম। সেখানে যাওয়া সহজ ছিল না। এটি অনেক কঠিন কাজ ছিল।’
হার্ট অ্যাটাকের রোগীদের চিকিৎসা করে তার দল হৃদপিণ্ডের পেশী ফের বৃদ্ধি করার জন্য স্টেম সেল ব্যবহার করতে শুরু করে। তখনই তিনি চিন্তা করলেন কেন একইভাবে পশুর মাংস বাড়ানো হয় না।
তিনি বলেন, ‘আমি বুঝতে পেরেছিলাম, আমরা প্রায় সাত বিলিয়ন মানুষকে খাওয়ানোর জন্য প্রতি বছর ৭০ বিলিয়ন প্রাণী লালনপালন করছি। যখন আমি এর পরিবেশগত প্রভাবের দিকে তাকালাম তখন এটি আমার কাছে বিশাল ক্ষতির মনে হয়েছে। আমাদের মাংস খাওয়ার জন্য যে পরিমাণ খাদ্য প্রাণীদের খাওয়ানো হয় সে সমীকরণটি আমার ভুল বলে মনে হয়েছিল।’
মানব সৃষ্ট মিথেন নির্গমনের আনুমানিক এক-তৃতীয়াংশের জন্য দায়ী পশুপাখি লালন পালন। একটি একটি শক্তিশালী গ্রিনহাউস গ্যাস, যদিও এ ব্যাপারে বিভিন্ন গবেষণায় নানা দ্বিমত উঠে এসেছে।
ভ্যালেটি মাংস খেতে পছন্দ করলেও এ কারণে তিনি নিরামিষভোজী হয়েছিলেন। কিন্তু তার মধ্যকার বিজ্ঞানী মন একটি সমাধান দেখেছেন। তার বাবা একজন পশুচিকিৎসক ছিলেন যিনি পশুদের পছন্দ করতেন। তিনি ছিলেন ভ্যালেটির প্রথম দিকের সমর্থক।
সুযোগটি শুধু তার বাবা দেখেননি, প্রথম ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্টও দেখেছিলেন। যাকে ভ্যালেটি লেখার পরপরই তিনি হ্যাঁ বলে দিয়েছিলেন। এটা প্রায় আট বছর আগের কথা।
বিকল্প প্রোটিনের প্রচারকারী অলাভজনক গুড ফুড ইন্সটিটিউটের প্রধান ব্রুস ফ্রেডরিখের মতে, বিশ্বজুড়ে ১০০টিরও বেশি চাষকৃত মাংসের স্টার্টআপে প্রায় তিন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে যেমন আলেফ ফার্মস , বিলিভার , গুড মিট , ব্যালেটিক ফুডস , ব্লু নালু এবং মিটেবল।
ফ্রেডরিখ বলেন, ‘অ্যামেরিকার দুটি বৃহত্তম মাংসের কোম্পানি টাইসন ও কারগিল। তাদের মতো কোম্পানি দুটি ভিন্ন মাংস চাষের কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছে।’
ফ্রেডরিখ বলছিলেন, ‘চাষ করা মাংসের জন্য জমির একটি ভগ্নাংশ প্রয়োজন, অল্প পরিমাণে পানির প্রয়োজন। সেই সঙ্গে উৎপাদনে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হয় না। এটি ঠিক একই সুস্বাদু মাংস তৈরির একটি সম্পূর্ণ নতুন উপায়, যা মানুষ পছন্দ করবে।’
মাংস শিল্পের বর্তমানে যে বিশাল পরিসরের দক্ষতা আছে তার সঙ্গে চাষ করা মাংসের অবশ্যই স্বাদ এবং দাম উভয়ের প্রতিযোগিতা করতে হবে।
ফ্রেডরিখ বলেন, ‘চাষ করা মাংস ইতোমধ্যে সাধারণ মাংসের স্বাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারে, তবে দামের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার আগে উৎপাদন বাড়ানো দরকার।’
আপ সাইডের এক প্যাকেট মুরগি চেখে দেখার পরে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই এটি মুরগির মাংসের মতো দেখতে। খেতেও ঠিক মুরগির মতোই সুস্বাদু।’
এখনও গ্রোসারি স্টোরে আপ সাইডের মাংস কিনতে পাওয়া যাবে না। গত সপ্তাহে সান ফান্সিসকো রেস্টুরেন্ট বারে প্রথমবারের মতো গ্রাহকদের এটি পরিবেশন করা হয়েছে।