সবচেয়ে জনবহুল স্টেইট ক্যালিফোর্নিয়া
নাহিদ আল-কাদরী, টিবিএন ডেস্ক
মার্চ ২৭ ২০২৩, ২৩:৪৭
- 0
৩১তম স্টেইট হিসেবে ক্যালিফোর্নিয়া ১৮৫০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ইউনিয়নে যুক্ত হয়। এই স্টেইটের অর্থনীতির আকার বিবেচনায় এটি স্বাধীন কোনো দেশ হলে বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হতে পারত।
অ্যামেরিকার তৃতীয় বৃহত্তম স্টেইট ক্যালিফোর্নিয়া। এর দক্ষিণে ল্যাটিন অ্যামেরিকার দেশ মেক্সিকো, পশ্চিমে প্রশান্ত মহাসাগর, আর বাকি অংশে অরেগন, নেভাডা ও অ্যারিযোনা সীমান্ত।
মেক্সিকোর কাছ থেকে ১৮৪৮ সালে অঞ্চলটির নিয়ন্ত্রণ পায় অ্যামেরিকা। সে সময় ক্যালিফোর্নিয়া তেমন সংগঠিত ছিল না, ফলে স্টেইট না হওয়া পর্যন্ত এটি ফেডারেল সামরিক কর্তৃপক্ষের অধীনে ছিল।
৩১তম স্টেইট হিসেবে ক্যালিফোর্নিয়া ১৮৫০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ইউনিয়নে যুক্ত হয়। এই স্টেইটের অর্থনীতির আকার বিবেচনায় এটি স্বাধীন কোনো দেশ হলে বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হতে পারত।
ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য
ক্যালিফোর্নিয়ার আয়তন ৪২৩,৯৭০ বর্গ কিলোমিটার। একে ‘গোল্ডেন স্টেইট’ ডাকার অন্যতম কারণ সুবিশাল অঞ্চল; যা আয়তনে জার্মানির চেয়ে বড়, আর ইরাকের চেয়ে সামান্য ছোট। আয়তনে স্টেইটটি রোড আইল্যান্ড স্টেইটের চেয়ে প্রায় ১৩৫ গুণ বড়।
জনসংখ্যা ও ভাষা
২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী ক্যালিফোর্নিয়ার জনসংখ্যা ৩৯.৫ মিলিয়ন, যা রাজ্যটিকে অ্যামেরিকার সবচেয়ে জনবহুল স্টেইটে পরিণত করেছে। এর ৬০ শতাংশ জনগোষ্ঠীর ভাষা ইংলিশ; বাকি ২৬ শতাংশ মানুষের ভাষা স্প্যানিশ অথবা স্প্যানিশ ক্রেওল।
ক্যালিফোর্নিয়ার শহর
ক্যালিফোর্নিয়ায় মোট ৪৮২টি শহর রয়েছে। এর মধ্যে রাজধানী স্যাক্রামেন্টোসহ লস অ্যাঞ্জেলেস, স্যান ডিয়েগো, স্যান ফ্রান্সিসকো, স্যান হোসে, লং বিচ ওকল্যান্ড ও ল্যাংকাস্টার অন্যতম।
বিমানবন্দর
ক্যালিফোর্নিয়ার বৃহত্তম বিমানবন্দরগুলোর মধ্যে অন্যতম লস অ্যাঞ্জেলেস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, স্যান ফ্রান্সিসকো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও স্যান ডিয়েগো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।
ভৌগোলিক অঞ্চল
ক্যালিফোর্নিয়ার প্রধান ভৌগোলিক অঞ্চলগুলো চারভাগে বিভক্ত: উপকূল, কেন্দ্রীয় উপত্যকা, পর্বতমালা এবং মরুভূমি।
উপকূল
ক্যালিফোর্নিয়ায় প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলরেখা রয়েছে, যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৮৪০ মাইল। উপকূলের বিশাল অংশে ক্যালিফোর্নিয়া স্টেইটের ১ নম্বর রুট দিয়ে প্রবেশ করা যায়। এই প্যাসিফিক কোস্ট হাইওয়ে ক্যালিফোর্নিয়ার সবচেয়ে সুন্দর সমুদ্রতীর, যা গ্রেটার লস অ্যাঞ্জেলেসকে স্যান ফ্রান্সিসকো উপসাগরের সঙ্গে যুক্ত করেছে।
কেন্দ্রীয় উপত্যকা
সমতল, উর্বর কেন্দ্রীয় উপত্যকাগুলো ক্যালিফোর্নিয়ার কেন্দ্র বরাবর চলে। এর উত্তর অংশে স্যাক্রামেন্টো, আর দক্ষিণে স্যান জোয়াকুইন উপত্যকা- যা স্টেইটটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কৃষি অঞ্চল। এ উপত্যকার প্রধান শহরগুলোর মধ্যে রাজধানী স্যাক্রামেন্টো, রেডিং, স্টকটন, মোডেস্টো, বেকার্সফিল্ড এবং ফ্রেসনো অন্যতম।
পর্বতমালা
ক্যালিফোর্নিয়ার সিয়েরা নেভাডা পাহাড় ৪০০ মাইলব্যাপী বিস্তৃত। এর উত্তর থেকে দক্ষিণে মিঠা পানির তাহোই লেক প্রবাহিত হয়, যা অ্যামেরিকার দ্বিতীয় গভীরতম ও উত্তর অ্যামেরিকার বৃহত্তম আলপাইন হ্রদ। সিয়েরা নেভাডার পর অ্যামেরিকার সর্বোচ্চ পর্বত মাউন্ট হুইটনি, যার উচ্চতা ৪,৪২১ মিটার। ড্রাই ওয়েনস লেকের কাছে ইনো পর্বতমালা ও ওয়ার্নার পর্বতমালা রয়েছে, যা উত্তর-পূর্ব ক্যালিফোর্নিয়ার মধ্য দিয়ে উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত ৮৫ মাইল দীর্ঘ পর্বতশ্রেণি।
মরুভূমি
মোহাভি মরুভূমির নামকরণ হয়েছে মোহাভে জনগোষ্ঠীর নামানুসারে। এটি দক্ষিণ-পূর্ব ক্যালিফোর্নিয়ার একটি বিস্তীর্ণ শুষ্ক অঞ্চল; যা সমগ্র উত্তর অ্যামেরিকার শুষ্কতম মরুভূমি। ৩৫,০০০ বর্গকিলোমিটার মরুভূমির অববাহিকাটি তেহাচাপি পর্বতমালা, স্যান গ্যাব্রিয়েল পর্বতমালা এবং স্যান বার্নার্ডিনো পর্বতমালায় আবদ্ধ, যা এর বাইরের অঞ্চলে বৃষ্টিপাত রোধ করতে সহায়তা করে। এই মরুভূমিতেই রয়েছে ডেথ ভ্যালি, যেখানে পৃথিবীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড রয়েছে।
বিশ্ব ঐতিহ্য
ক্যালিফোর্নিয়ায় দুটি বিশ্ব ঐতিহ্য স্থান রয়েছে। একটি রেডউড ন্যাশনাল ও অপরটি স্টেইট পার্ক।
রেডউড ন্যাশনাল সেকোয়া সেম্পারভিরেন্স গাছের বনে আচ্ছাদিত একটি উপকূলীয় পাহাড়ি অঞ্চল। সেকোয়া সেম্পারভিরেন্স পৃথিবীর সবচেয়ে লম্বা ও আকর্ষণীয় প্রজাতির গাছ।
ইয়োসেমিটি জাতীয় উদ্যানের অবস্থান পশ্চিম সিয়েরা নেভাডায়। বিপুল জীববৈচিত্র্যের জন্য পরিচিত পার্কটি দর্শনীয় গ্র্যানাইট ক্লিফ, গভীর ও সরু গিরিখাত, জলপ্রপাত এবং অতিকায় সেকোয়া গাছের জন্য বিখ্যাত। এখানে রয়েছে হাজার হাজার লেক।