ট্রাম্পের বিচার করবেন যে বিচারক

মেহরিন জাহান

এপ্রিল ২ ২০২৩, ২০:৪৬

সুপ্রিম কোর্টের অ্যাক্টিং জাজ হুয়ান মার্চেন

সুপ্রিম কোর্টের অ্যাক্টিং জাজ হুয়ান মার্চেন

  • 0

ডনাল্ড ট্রাম্প মঙ্গলবার নিউ ইয়র্কের আদালতে যাওয়ার পর একজন অভিজ্ঞ বিচারকের মুখোমুখি হবেন, যিনি সাবেক প্রেসিডেন্টের অপরিচিত নন।

নিউ ইয়র্ক সুপ্রিম কোর্টের অ্যাক্টিং জাজ হুয়ান মার্চেন ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ অ্যালেন ওয়েইসেলবার্গকে কারাদণ্ড দিয়েছেন, ট্রাম্প অর্গানাইজেশন ট্যাক্স জালিয়াতির বিচারের সভাপতিত্ব করেছেন এবং সাবেক অ্যাডভাইজর স্টিভ ব্যাননের ফৌজদারি জালিয়াতির মামলার তত্ত্বাবধান করেছেন।

তবে মঙ্গলবার ট্রাম্পের ঐতিহাসিক অভিযুক্তি মার্চেনের জীবনে সম্ভবত সবচেয়ে হাই প্রোফাইল মামলা হতে যাচ্ছে। 

বিচার আদালতে দীর্ঘ ক্যারিয়ারের অধিকারী মার্চেনকে পর্যবেক্ষকেরা একজন ‘দৃঢ়’ বিচারক হিসেবে বর্ণনা করেছেন। বিচারের কাঠগড়ায় যিনিই থাকুন না কেন তিনি ন্যায্যতা বজায় রাখেন। 

 

এক কথার মানুষ

ট্রাম্প ইতোমধ্যে তার অভিযুক্তি এবং মার্চেনের বিষয়ে নেতিবাচক মতামত দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় আগুনের হলকা ছড়িয়ে দিয়েছেন।

তবে আদালত কক্ষে মার্চেন কোনো বাধায় থমকে যান না। তার সামনে শুনানিতে অংশ নেয়া অ্যাটর্নিরা জানিয়েছেন, বহু মানুষের মনোযোগের কেন্দ্রে থাকা মামলাগুলো পরিচালনার সময়েও তিনি আদালত কক্ষের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার জন্য সুপরিচিত।

উইসেলবার্গের অ্যাটর্নি নিকোলাস গ্রাভান্তে যেমনটা বলছিলেন, ‘বিচারক মার্চেন অত্যন্ত দক্ষ ও বাস্তববাদী। শুনানিতে আমার যা বলার ছিল তা তিনি মনোযোগসহ শুনেছেন।

‘তিনি তার বিচারিক পেশাদারত্বের পরিষ্কার ইঙ্গিত রেখেছেন, যা আমাকে মিস্টার ওয়েইসেলবার্গকে আইনি পরামর্শ দেয়ার ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে সাহায্য করেছিল। বিচারক মার্চেন সব সময় ভালো প্রস্তুতি নিয়ে আসেন, তিনি অ্যাক্সেসযোগ্য এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে ওয়েইসেলবার্গের ক্ষেত্রে- তিনি ছিলেন এক কথার মানুষ। প্রকাশ্য আদালত ও বন্ধ দরজার ওপাশে তিনি আমার ও আমার সহকর্মীদের সঙ্গে অত্যন্ত সম্মানজনক আচরণ করেছেন।’

প্রাইভেট প্র্যাকটিস অ্যাটর্নি কারেন ফ্রিডম্যান অ্যাগনিফিলো অতীতে ম্যানহাটন ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি অফিসে চিফ অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি মার্চেনের আদালতে বেশ কিছু মামলার শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন। বিচারক মার্চেন সম্পর্কে তার মন্তব্যও একই রকম। 

অ্যাগনিফিলো বলেন, ‘[মার্চেন] তার আদালতে প্রসিকিউটর বা আসামিদের মধ্যে কোনো সমস্যা তৈরি হতে দেন না। তিনি মিডিয়া সার্কাস বা অন্য কোনো সার্কাস ঘটতে দেন না। আমি মনে করি না- আদালত কক্ষে ডনাল্ড ট্রাম্প তাকে আক্রমণাত্মক কথা বলে বা হুমকি দিয়ে সুবিধা করতে পারবেন।

‘মার্চেন এমন ধরনের বিচারক যিনি বিষয়টিকে উপেক্ষা করবেন এবং ডনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলায় তিনি বিষয়টি মনে গেঁথে রাখবেন না। তিনিকোনোভাবেই প্রতিহিংসাপরায়ণ নন।‘

 

‘দৃঢ়’ কিন্তু ‘সহানুভূতিশীল’

ওয়েইসেলবার্গকে সাজা দেয়ার সময় মার্চেন তার দৃঢ় মনোভাবের কিছুটা প্রদর্শন করেছিলেন। সে সময় মার্চেন ট্রাম্পের সাবেক সহযোগীকে বলেন, তিনি যদি পাঁচ মাসের সাজা দেয়ার প্রতিশ্রুতি আগে না দিয়ে থাকতেন, তাহলে বিচারের সময়কার প্রমাণগুলো পর্যালোচনার পর ‘অনেক বড়’ সাজা দিতেন।

ট্রাম্পের সাবেক আরেক সহযোগী ব্যাননের বিরুদ্ধে ফৌজদারি জালিয়াতি মামলার সময় তিনি শুনানি দীর্ঘায়িত করার চেষ্টার কারণে ব্যাননের অ্যাটর্নিদের নতুন দলটিকে শাস্তি দিয়েছিলেন। 

ট্রাম্পের মামলাগুলো ছাড়াও মার্চেন ‘সকার মম ম্যাডাম’ ট্রায়ালসহ হাই প্রোফাইল আরও কিছু মামলার বিচার করেছেন। ‘সকার মম ম্যাডাম’ মামলায় আনা গ্রিস্টিনার বিরুদ্ধে ঘণ্টায় ২০০০ ডলারের বিনিময়ে এসকর্ট পরিষেবা দেয়ার অভিযোগ ছিল। 

বান্ধবীকে ধর্ষণ ও হত্যার একটি মামলায় বিচারক মার্চেন সেনেগালের এক ব্যক্তিকে ২৫ বছরের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। 

ট্রাম্পের অ্যাটর্নি টিমোথি পার্লাটোরি শুক্রবার সিএনএনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, মার্চেনের কাছে যাওয়া কোনো মামলার শুনানিতে অংশ নেয়া ‘সহজ কাজ’ নয়। তবে বিচারক ন্যায্যতা বজায় রাখবেন বলেও তিনি আশা প্রকাশ করছেন। 

পার্লাটোরি বলেন, ‘আমি এর আগেও তার সামনে মামলার শুনানি করেছি। তিনি কঠিন হতে পারেন, তবে আমি মনে করি না- এবার এমন কিছু ঘটতে চলেছে যা তাকে সত্য এবং আইনকে মূল্যায়নের ক্ষমতা থেকে দূরে সরিয়ে দেবে।’

ম্যানহাটন মেন্টাল হেলথ কোর্ট তৈরিতে সহায়তার জন্যও মার্চেন সহকর্মীদের কাছে প্রশংসিত। ওই কোর্টে তিনি প্রায়ই বিচার পরিচালনা করেন এবং সেখানে আসামিদের দ্বিতীয় সুযোগ দিয়ে ঘোষিত ‘সহানুভূতিশীল’ রায়গুলোর কারণে তিনি নন্দিত।

ক্রিমিনাল ডিফেন্স অ্যাটর্নি ব্রেন্ডন ট্রেসি অতীতে ম্যানহাটন ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি অফিসের একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি হিসেবে কাজ করেছেন। ট্রেসি বলেন, ‘হয়ত এমন কাউকে আদালতে তোলা হয়েছে যিনি সিরিয়াল শপলিফটার ছিলেন এবং পরে বড় চুরির অভিযোগে অভিযুক্ত হন। তাকে মেন্টাল হেলথ ট্রিটমেন্ট কোর্টে উপস্থাপন করা হয়, কারণ তিনি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছিলেন। তিনি (বিচারক মার্চেন) এ ধরনের মামলা বিস্তৃত পরিসরে এবং ন্যায্যভাবে বিচার করতে সক্ষম।’ 

ট্রায়াল অ্যাটর্নি এবং অলাভজনক জনঅধিকার প্রতিষ্ঠান দ্য ব্রঙ্কস ডিফেন্ডারের চেয়ার আর্ল ওয়ার্ড বলেন, ‘মেন্টাল হেলথ কোর্টের মামলায় বিচারক মার্চেন প্রায়ই প্রসিকিউটরদের পক্ষে থাকতেন। তিনি ন্যায্যতা বজায় রাখেন এবং তার রায়গুলো আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তবে কখনো বিষয়টি খুব ক্লোজ কল হলে তিনি প্রসিকিউশনের পক্ষে অবস্থান নেন।’

 

প্রাথমিক কর্মজীবন

মার্চেন ১৯৮৪ সালে ম্যানহাটন ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি অফিসের ট্রায়াল ডিভিশনে অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। বেশ কয়েক বছর পরে তিনি স্টেইট অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসে বদলি হন, যেখানে তিনি লং আইল্যান্ডের মামলাগুলো পরিচালনা করতেন।

নিউইয়র্কের মেয়র মাইকেল ব্লুমবার্গ ২০০৬ সালে মার্চেনকে ব্রঙ্কসের ফ্যামিলি কোর্টে নিয়োগ দেন। এরপর ডেমোক্র্যাট গভর্নর ডেভিড প্যাটারসন ২০০৯ সালে তাকে নিউ ইয়র্ক স্টেট কোর্ট অফ ক্লেইমস-এর বিচারক নিযুক্ত করেন। একই বছর মার্চেন নিউ ইয়র্ক সুপ্রিম কোর্টের বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান। 

নিউইয়র্ক টাইমসের প্রোফাইল অনুসারে, মার্চেনের জন্ম কলম্বিয়ার বোগোটায়। ছয় বছর বয়সে তিনি অ্যামেরিকায় অভিবাসী হন এবং নিউ ইয়র্ক সিটির আশেপাশে জ্যাকসন হাইটস, কুইন্সে বেড়ে ওঠেন। পরিবারে তিনিই প্রথম সদস্য যিনি প্রথম কলেজে লেখাপড়া করেছেন। 

তিনি হফস্ট্রা ইউনিভার্সিটি থেকে আইন বিষয়ে ডিগ্রি লাভ করেন।


0 মন্তব্য

মন্তব্য করুন