মন্টানার প্রথম ট্রান্সজেন্ডার আইনপ্রণেতা হাউযে অবাঞ্ছিত
টিবিএন ডেস্ক
এপ্রিল ২৭ ২০২৩, ১৮:২৬
- 0
ট্রান্সজেন্ডার তরুণদের চিকিৎসাসেবা সীমিত করার বিরুদ্ধে কথা বলায় মন্টানা হাউযে অবাঞ্ছিত হলেন স্টেইটের প্রথম ট্রান্সজেন্ডার আইনপ্রণেতা যুয়ি যেফির।
হাউয রিপ্রেজেন্টিটভদের ৬৮-৩২ ভোটে বুধবার তাকে সেনশার বা তিরস্কার করা হয়েছে। হাউযের এই অ্যাকশানের কারণে আসন থাকলেও কার্যত তিনি ক্ষমতাহীন হয়ে পড়েছেন। তিনি হাউযে আসতে পারবেন না, আইন প্রণয়নের কোনো কাজে যুক্তও হতে পারবেন না।
ভোটাভুটির পর যেফির টুইট করে বলেন, ‘আমি হাউয চেম্বার ছেড়ে যাওয়ার সময় আমার মাইক অন করেছি। আমি মনে করিয়ে দিয়েছে যে আমাকে নয়, মন্টানার ১১ হাজার ট্রান্স নাগরিককে যে কোনো আইন নিয়ে আলোচনার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে… আমি তারপরও আমার সংবিধান, আমার সম্প্রদায় ও গণতন্ত্রের পক্ষে অবিচল থাকব।‘
‘ইউথ হেলথ প্রোটেকশন অ্যাক্ট’- এর বাস্তবায়নের বিরোধিতা করে হাউযের রিপাবলিকানদের তোপের মুখে পড়েছিলেন যেফির।
এই আইন বাস্তবায়ন হলে লিঙ্গপরিবর্তনে ইচ্ছুক ১৮ বছরের কম বয়সীদের হরমোন থ্যারাপি, বয়ঃসন্ধিকালীন প্রাকৃতিকভাবে দৈহিক পরিবর্তন প্রতিরোধ এবং অস্ত্রোপচার সীমাবদ্ধ করবে।
বিল পাশের অনুমোদন নিয়ে বিতর্কের সময় গত ১৮ই এপ্রিল যেফির বলেন, ‘আপনি যদি লিঙ্গ-নিশ্চিতকরণ সুরক্ষাকে অস্বীকার করেন, তবে এটি ট্রান্স সমাজের জন্য নির্যাতনের সমতুল্য বরং এমন চিন্তা রাখার জন্য আপনার প্রাকৃতিক দেহ নিয়ে লজ্জিত হওয়া উচিত।‘
যেফির বলেন, ‘আপনি যদি এই বিল পাশে হ্যাঁ ভোট দেন তবে মনে রাখবেন এরপর যখন আপনি প্রার্থনায় মাথা নত করবেন তখন দেখবেন হাজারো অসহায়ের রক্তে রঞ্জিত আপনার হাত।‘
নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন এবং যেএএমএ পেডিয়াট্রিক্স এর যৌথ গবেষণা অনুসারে, লিঙ্গ নিশ্চিতকরণ সুরক্ষার সঙ্গে ট্রান্স কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নের যোগসূত্র পাওয়া গেছে।
গবেষণায় দেখা যায়, জন্মগত লিঙ্গের সঙ্গে কাঙ্ক্ষিত লিঙ্গ-পরিচয়ের সামঞ্জস্য ঘটাতে না পারলে ট্রান্স মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ‘জেন্ডার ডিসফোরিয়া’ নামক মানসিক চাপের কারণে অনেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
এবিসি নিউয জানায়, গত ২০ শে এপ্রিল, সিনেট বিল নাইনটি নাইন-এর বিতর্কের সময় রক্ষণশীল আইনপ্রণেতাদের যেফার বলেছিলেন, এই বিল পাশ হলে যুব সমাজকে লিঙ্গ-নিশ্চিতকরণের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হবে। এতে লাখও ট্রান্সজেন্ডারের রক্তে রাঙাবে তাদের হাত।
এরইমধ্যে মন্টানা হাউয বিলটি পাশ করেছে এবং কার্যকরের অনুমতির অপেক্ষায় তা স্টেইট গভর্নর গ্রেগ যিয়ানফোর্টের ডেস্কে পাঠানো হয়েছে। জানা যায়, যিয়ানফোর্ট আইনটির প্রতি তার সমর্থনের ইঙ্গিত দিয়েছেন।
যেফির এই আইনের বিরোধিতা করে তার সহকর্মীদের ভোট দিতে আহ্বান জানালে, হাউযের নিয়ম ভঙ্গের অপরাধে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়।
শাস্তিমূলক পদক্ষেপ হিসেবেই বুধবার তাকে হাউযে অবাঞ্চিত করা হয়।
এ সময় যেফির বলেন, ‘সেদিন আমি আমার সম্প্রদায়ের সুরক্ষায় কথা বলেছিলাম, এই বিল পাশ হলে সমাজে যে ক্ষতি হবে আমি তা তুলে ধরেছি। কেননা আমার ট্রান্সজেন্ডার সম্প্রদায় নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। আমি নিজে এই সম্প্রদায়ের অংশ।‘
যেফির জানান, তার অগণিত ট্রান্সজেন্ডার বন্ধুরা এমন অনেক অমানবিক আইনের কারণে জীবন দিয়েছেন।নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করতে না পারায় আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন তারা।
যেফির তার বক্তব্যে বলেন, ‘আমি মন্টানার হাজারও পরিবারের কথা শুনেছি। এদের ভেতর এমন পরিবারও পেয়েছি যার একজন ট্রান্স-কিশোরী, ট্রান্স-বিরোধী বিলের শুনানি দেখার সময় আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল।‘
তিনি বলেন, ‘যখন স্পিকার আমাকে আমার ব্যবহারের জন্য ক্ষমা চাইতে বলেন, তিনি আসলে কী চাইলেন? আমার সম্প্রদায় যখন আত্মহত্যার বিলের মুখোমুখি হচ্ছে তখন আমি নিরব দর্শক থাকব?’