অক্সিজেন শেষ, সাবমেরিন টাইটান কোথায়?

টিবিএন ডেস্ক

জুন ২২ ২০২৩, ১৭:৪২

নিখোঁজ টাইটান ফাইভ (ডানে) অনুসন্ধানে ফ্রেঞ্চ রোবট (বাঁয়ে)। ছবি কোলাজ: টিবিএন

নিখোঁজ টাইটান ফাইভ (ডানে) অনুসন্ধানে ফ্রেঞ্চ রোবট (বাঁয়ে)। ছবি কোলাজ: টিবিএন

  • 0

অ্যাটলান্টিকে নিখোঁজ সাবমেরিন টাইটান ফাইভ উদ্ধারে মিশনে আরোহীদের জীবিত উদ্ধারের আশা শেষের পথে। ইউএস কোস্টগার্ডের তথ্য অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক সময় বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা ৮ মিনিটে টাইটানে শেষ অক্সিজেনের জোগান শেষ হওয়ার কথা। তবে এখনও এর অবস্থান শনাক্ত করতে পারেননি উদ্ধারকারীরা।

এক শ’ বছরেরও বেশি আগে ১৯১২ সালে অ্যাটলান্টিকে ডুবে যাওয়া টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখাতে যাওয়া ওশানগেট কোম্পানির পর্যটকবাহী সাবমেরিন ‘টাইটান’ রোববার যাত্রা শুরুর পৌনে ১ ঘণ্টার মধ্যে নিখোঁজ হয়। বিভিন্ন দেশের সমন্বিত অনুসন্ধান চললেও এখন পর্যন্ত সাবমেরিনটির অবস্থান শনাক্ত করা যায়নি।

পাকিস্তানি ধনাঢ্য ব্যক্তি ৪৮ বছরের শাহজাদা দাউদ ও তার ১৯ বছর বয়সী ছেলে সুলেমান, ব্রিটিশ ধনকুবের ৫৮ বছরের হামিশ হার্ডিং, ৭৭ বছর বয়সী ফ্রেঞ্চ ডাইভার পল-হেনরি নারজিওলেট এবং সাবমেরিনের চালক ও ওশানগেট কোম্পানির প্রধান নির্বাহী স্কটন রাশ। নর্থ অ্যাটলান্টিকের গভীরে নিঁখোজ টাইটান সাবমেরিনে আরোহী সব মিলিয়ে এই পাঁচ জন।

অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযানের শেষ আশা হিসেবে ফ্রান্সের ল্য’অ্যাটলান্টি নামের একটি জাহাজ ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। এই জাহাজে ভিক্টর সিক্স থাউজেন্ড নামে একটি স্বংয়ংক্রিয় রোবট রয়েছে যা পানির ৬০০০ মিটার গভীরতায় অনুসন্ধান চালাতে সক্ষম।

ভিক্টর রোবটটি টাইটানকে শনাক্ত করতে পারলে মাদার ভেসেলের দীর্ঘ শিকলের হুক এর সঙ্গে আটকে দেবে। এরপর টেনে তোলা হবে টাইটানকে। তবে সেটাও বেশ কয়েক ঘণ্টার প্রক্রিয়া।

সাবমেরিনের আরোহীদের জীবিত উদ্ধারে ‘অলৌকিকতা’র প্রার্থনা করছে স্বজনেরা।

ইতোমধ্যে গভীর সমুদ্রে ডাইভিংয়ে সক্ষম, রোবটযান বহনকারী গভীর সমুদ্রে গবেষণার ফ্রেঞ্চ জাহাজ ল্য’অ্যাটলান্টি অনুসন্ধান অঞ্চলে পৌঁছেছে। রিমোটের মাধ্যমে মানুষবিহীন ওই রোবটযানটি পরিচালনা করা হয়। সমুদ্রপৃষ্ঠের জাহাজ থেকে সেটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

সমুদ্রে ডাইভের পর থেকে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষে পৌঁছাতে রোবটটির প্রয়োজন প্রায় দুই ঘণ্টা। রোবটটি গভীর সাগরে কেবল কাটা থেকে শুরু করে আটকে পড়া ডুবন্ত জাহাজ সরিয়ে আনতে পারদর্শী।

সাবমেরিনটিকে খুঁজে পেলে সেটি ভেসে যাওয়ার আগেই, রোবটের স্বয়ংক্রিয় হাত একটি হুক লাগিয়ে দেবে। এরপর সাগরে ভাসমান জাহাজ সাবমেরিনটিকে টেনে তুলবে।

তবে এসব কাজের আগে খুঁজে পেতে হবে টাইটানকে। ল্য’অ্যাটলান্টির সঙ্গে যোগ দিয়েছে গভীর সমুদ্রের তলদেশ পর্যন্ত সরঞ্জাম পাঠাতে সক্ষম বেশ কিছু জাহাজ।

টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের উপরে সমুদ্রপৃষ্ঠে অন্তত ১০টি জাহাজ, দুটি রোবট সাবমেরিন ও আকাশপথে বেশ কয়েকটি বিমান সোনারে শব্দ শনাক্তের মাধ্যমে টাইটানের অবস্থান খুঁজে বের করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

বৃহস্পতিবারও সমুদ্রের তলদেশ থেকে শব্দ শনাক্তের তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে সেই শব্দের উৎস এখনও অজানা।

ইউএস কোস্টগার্ড জানিয়েছে, সাবমেরিনের আরোহীরা এই শব্দ তৈরি করছেন কিনা তা এখনও নিশ্চিত নয়। হতে পারে সমুদ্র তলদেশে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ থেকে লোহার অংশ খুলে পড়ার কারণেও এমন শব্দ হচ্ছে।

সাবমেরিনে থাকা আরোহীদের মধ্যে সাবেক নেভি ডাইভার নারজিওলেট ৩৫ বার টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ ঘুরে এসেছেন।

বিশেষজ্ঞদের দাবি, নারজিওলেট এমন পরিস্থিতে সাবমেরিনে থাকা একমাত্র দক্ষ ব্যক্তি। তার অভিজ্ঞতা টাইটানকে খুঁজে পেতে উদ্ধারকর্মীদের সাহায্য করবে। এমনকি সমুদ্র তলদেশে আটকে থাকলেও সাবমেরিনটিকে উদ্ধারে তিনি সাহায্য করতে সক্ষম।

সাবমেরিন কোম্পানিটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা গুইলেরমো শনলেইন এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, সাবমেরিনের পাঁচ আরোহী শান্তভাবে শুয়ে থাকলে আরও কিছুটা বেশি সময় অক্সিজেনের জোগান থাকবে। তাদের খুঁজে বের করতেও সময় পাওয়া যাবে।

তিনি বলেন, ‘আজকের দিনটি (বৃহস্পতিবার) এই অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন হতে যাচ্ছে। সাবমেরিনটির লাইফ সাপোর্ট সরবারহ কমতে শুরু করেছে।

‘আমি নিশ্চিত, স্কটন ও বাকি আরোহীরা নিখোঁজের পরপরই বুঝতে পেরেছিলেন তাদের উদ্ধার নিশ্চিত করতে দেহের শক্তি অপচয় না করে শান্ত থাকতে হবে এবং অক্সিজেন গ্রহণের মাত্রা সীমিত করতে হবে।

‘আমার বিশ্বাস, তাদের উদ্ধারে বিশেষজ্ঞদের ধারণা করা সময়সীমার চেয়েও আমাদের হাতে বেশি সময় আছে। আমি আমার বন্ধু ও বাকি আরোহীদের জন্য আশা ধরে রেখেছি।’

তবে সাবমেরিনটি খুঁজে পেলেও টাইটানকে সমুদ্রপৃষ্ঠে নিয়ে আসতে আরও অনেক ঘণ্টা সময় লাগবে। অর্থাৎ, তারা পৃষ্ঠে পৌঁছানোর আগেই অক্সিজেন শেষ হয়ে যেতে পারে।

ইতোমধ্যে দুবার টাইটান সাবমেরিনে ভ্রমণ করা ওইসিন ফ্যানিং বলেছেন, ‘সমুদ্রের নিচে কোনো শব্দ নেই। টাইটানিক থেকেও কোনো শব্দ উৎপন্ন হয় না। সুতরাং সোনারে ৩০ মিনিট পর পর শনাক্ত হওয়া শব্দ সাবমেরিনের আরোহীদের জীবিত থাকার নির্দেশনা দিচ্ছে। তাদের অবস্থান জানাতেই নির্দিষ্ট সময় পর পর তারা শব্দ তৈরি করছেন।’

অবশ্য সাবেক রয়্যাল নেভি অফিসার ক্রিস প্যারি বলেন, ‘আমার ভয় হচ্ছে তাদের উদ্ধারে আমাদের সময় ফুরিয়ে আসছে। আমার মনে হয় না তাদের আর জীবিত ফিরিয়ে আনার কোনো সুযোগ আছে।’


0 মন্তব্য

মন্তব্য করুন