নূতনের ডাক নিয়ে এল নববর্ষ

টিবিএন ডেস্ক

এপ্রিল ১৩ ২০২৩, ২৩:১৩

নববর্ষে কল্যাণ ও নতুন জীবনের প্রত্যাশা জানায় বাঙালি জাতি। ছবি: সংগৃহীত 

নববর্ষে কল্যাণ ও নতুন জীবনের প্রত্যাশা জানায় বাঙালি জাতি। ছবি: সংগৃহীত 

  • 0

বাংলা বর্ষপঞ্জিতে যুক্ত হলো নতুন আরেকটি বছর ১৪৩০। বৈশাখের প্রথম দিনে চারদিকে নতুনের আহ্বান, জীর্ণ-পুরোনোকে পেছনে ফেলে নতুন বছরে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচনে তৈরি বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের বাঙালি।

সূর্যের নতুন আলোর সঙ্গে এসেছে নব আনন্দে জেগে ওঠার ডাক। সবার কণ্ঠে বাজছে একই সুর ‘মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা। অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা…’।

পয়লা বৈশাখ সব সঙ্কীর্ণতা দূর করে, মনের সব ক্লেদ, জীর্ণতা কাটিয়ে নতুন উদ্যোমে বাঁচার অনুপ্রেরণা দেয়। বিশ্বের বুকে এক গর্বিত জাতি হিসেবে বাঙালি তুলে ধরে তাদের নিজস্ব ঐতিহ্য-সংস্কৃতির বর্ণাঢ্য চিত্র। 

পহেলা বৈশাখ বাঙালির একটি সার্বজনীন লোকউৎসব। এ দিন আনন্দঘন পরিবেশে বরণ করে নেয়া হয় নতুন বছরকে। কল্যাণ ও নতুন জীবনের প্রতীক নববর্ষে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধির প্রত্যাশা জানায় জাতি।

পয়লা বৈশাখে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাসহ দেশ জুড়ে রয়েছে বর্ষবরণের নানা আয়োজন। ‘বাংলা নববর্ষ ১৪৩০’ জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদ্যাপনের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসূচি নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন রয়েছে। ছায়ানট ভোরে রমনা বটমূলে প্রতিবারের মতো আয়োজন করে ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগ দিনব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দিনটি উদযাপন করবে। ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠীসহ অন্য সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা আয়োজন রেখেছে। 

বাংলা নববর্ষের তাৎপর্য এবং মঙ্গল শোভাযাত্রার ইতিহাস ও ইউনেস্কোর বিশ্বসংস্কৃতির ঐতিহ্যের স্বীকৃতির বিষয়টি তুলে ধরে বাংলাদেশের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও বাংলা একাডেমির উদ্যোগে জাতীয় পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে। 

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজন করেছে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা। নববর্ষে বাংলাদেশের সব কারাগার, হাসপাতাল ও শিশু পরিবারে (এতিমখানা) উন্নতমানের ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবার ও ইফতারের আয়োজন করা হয়েছে। 

এক সময়ে নববর্ষ উদযাপন হতো আর্তব উৎসব বা ঋতুধর্মী উৎসব হিসেবে। তখন এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল কৃষির, কারণ কৃষিকাজ ছিল ঋতুনির্ভর। পরে কৃষিকাজ ও খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য মোঘল সম্রাট আকবরের সময়ে বাংলা সন গণনা শুরু হয়। 

হিজরি চান্দ্রসন ও বাংলা সৌরসনের ওপর ভিত্তি করে প্রবর্তিত হয় নতুন বাংলাসন। অতীতে বাংলা নববর্ষের মূল উৎসব ছিল হালখাতা। গ্রামগঞ্জ-নগরে ব্যবসায়ীরা নববর্ষের শুরুতেই তাদের পুরানো হিসাব-নিকাশ শেষ করে হিসাবের নতুন খাতা খুলতেন। এ সময় তারা নতুন-পুরোনো খদ্দেরদের আমন্ত্রণ জানিয়ে মিষ্টি বিতরণ করতেন। কিছু কিছু জায়গায় চিরাচরিত এ অনুষ্ঠানটি এখনও পালিত হয়।

মূলত ১৫৫৬ সালে কার্যকর হওয়া বাংলা সন প্রথম দিকে পরিচিত ছিল ফসলি সন নামে, পরে তা পরিচিত হয় বঙ্গাব্দ নামে। 

কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সমাজের সঙ্গে বাংলাবর্ষের ইতিহাস জড়িয়ে থাকলেও এর সঙ্গে রাজনৈতিক ইতিহাসেরও সংযোগ ঘটেছে। পাকিস্তান শাসনামলে বাঙালি জাতীয়তাবাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয় বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের। আর ষাটের দশকের শেষে তা বিশেষ মাত্রা পায় রমনা বটমূলে ছায়ানটের আয়োজনের মাধ্যমে। 

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ধীরে ধীরে এই উৎসব নাগরিক জীবনে প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে। পয়লা বৈশাখের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বাঙালির অসাম্প্রদায়িক এবং গণতান্ত্রিক চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটতে থাকে। কালক্রমে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান এখন শুধু আনন্দ-উৎসব নয়, এটি বাঙালি সংস্কৃতির একটি শক্তিশালী ধারক-বাহক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। 

১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে বের হয় প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা। ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেস্কো এ শোভাযাত্রাকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মর্যাদা দেয়।


0 মন্তব্য

মন্তব্য করুন