সম্পর্কের বরফ গলাতে চায়নার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে অ্যামেরিকার সেক্রেটারি অফ স্টেইট অ্যান্টনি ব্লিনকেনের বৈঠকে দারুণ খুশি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি জানান, চায়নার সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়নে অ্যামেরিকা ঠিক পথেই আছে। ক্যালিফোর্নিয়ায় জলবায়ু বিষয়ক এক অনুষ্ঠানে সোমবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন অ্যামেরিকান প্রেসিডেন্ট।
চায়নার প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে ব্লিনকেনের বৈঠকের বিষয়ে বাইডেন বলেন, ‘তিনি (ব্লিনকেন) দারুণ কাজ করেছেন… আমরা ঠিক পথেই আছি।’
বৈঠকে অ্যামেরিকার পক্ষ থেকে কোনো অগ্রগতি হয়েছে বলে মনে করেন কিনা- এমন প্রশ্নে প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমি মনে করি না, আমি জানি অগ্রগতি হয়েছে। আপনারাও জানেন, এটা নিয়ে প্রশ্ন করার কিছু নেই। বরং জানতে চাইতে পারেন, কতটুকু অগ্রগতি হয়েছে।’
বৈঠকের পর ব্লিনকেনের সঙ্গে সরাসরি তখনও কথা হয়নি বলে জানান প্রেসিডেন্ট বাইডেন। বলেছেন, ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইযর জেইক সুলিভ্যানের মাধ্যমে ব্লিনকেনের সঙ্গে তার কিছু যোগাযোগ হয়েছে।
দুই দিনের চায়না সফর শেষে দেশের পথে রয়েছেন সেক্রেটারি অফ স্টেইটস ব্লিনকেন।
সফরের শেষ দিন বেইজিংয়ে চায়নার প্রেসিডেন্ট জিনপিংয়ের সঙ্গে ৩৫ মিনিটের সাক্ষাৎ সেরেছেন তিনি। বৈঠক শেষে দুজন জানিয়েছেন, সম্পর্ক স্থিতিশীল করার উদ্যোগ নিতে তারা প্রস্তুত।
অ্যামেরিকা ‘ওয়ান চায়না’ পলিসির পক্ষে জানিয়ে ব্লিনকেন বলেছেন, ওয়াশিংটন তাইওয়ানের স্বাধীনতা সমর্থন করে না। তবে তাইওয়ান প্রণালীতে চায়নার উসকানিমূলক পদক্ষেপের বিষয়ে অ্যামেরিকার উদ্বেগ রয়েছে।
ইউএস-চায়না সম্পর্ক অস্থিতিশীলতার পর্যায়ে পৌঁছেছিল জানিয়ে ব্লিনকেন বলেছেন, দুই পক্ষই সেটি স্থিতিশীল করার গুরুত্ব সম্পর্কে অবগত। ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটাতে দুই দেশের মধ্যেকার যোগাযোগ আরও উন্নত করা প্রয়োজন।
এর আগে বৈঠক শেষে চাইনিজ প্রেসিডেন্ট জিনপিং রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে জানান, সেক্রেটারি অফ স্টেইটের সঙ্গে চায়নার দুই শীর্ষ কূটনীতিকের আলোচনায় তিনি বেশ আনন্দিত।
তিনি বলেন, ‘চায়নার প্রতিনিধিরা আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। গত বছর বালিতে আমার ও প্রেসিডেন্ট বাইডেনের মধ্যে সমঝোতার বিষয়ে কথা হয়েছিল। এবারের বৈঠকে দুই পক্ষই বিষয়টি নিয়ে এগুতে রাজি হয়েছে।’
বিশ্বের এই দুই পরাশক্তির মধ্যেকার সম্পর্কের তিক্ততার জন্য অ্যামেরিকাকে দায়ি করে বৈঠকের পর বিবৃতি দেয় চায়নার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
তাতে বলা হয়, ‘চায়নার বিষয়ে অ্যামেরিকান পক্ষের ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। এর জন্যই চায়নার বিষয়ে ভুল কিছু নীতি নিয়েছে দেশটি… চায়না-অ্যামেরিকার সম্পর্কের অবনতি ঠেকানোর এবং এটিকে সুস্থ ও স্থিতিশীল দিকে পরিচালিত করার দায়িত্ব ছিল অ্যামেরিকার।’
ব্লিনকেনের সঙ্গে সোমবার চায়নার শীর্ষ কূটনীতিক ওয়েং উইয়েরও বৈঠক হয়। সে প্রসঙ্গে বিবৃতিতে বলা হয়, “বৈঠকে ওয়েং জানিয়েছেন যে অ্যামেরিকাকে ‘চায়নার হুমকির তত্ত্বের’ প্রচারণা বন্ধ করতে হবে, চায়নার ওপর অবৈধ একতরফা নিষেধাজ্ঞাগুলো প্রত্যাহার করতে হবে। চায়নার প্রযুক্তিগত উন্নয়নকে দমন করা যাবে না এবং এই দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে স্বেচ্ছাচারী হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকতে হবে বলেও দাবি করেছেন ওয়েং।”
জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ইউএস সরকারের সর্বোচ্চ পদমর্যাদার কোনো কর্মকর্তা হিসেবে চায়না সফর করছেন ব্লিনকেন। প্রায় পাঁচ বছর পর অ্যামেরিকান কোনো কূটনীতিক হিসেবেও চায়না সফর করলেন তিনি।