গভীরতম প্রবাল প্রাচীরেও প্লাস্টিক বর্জ্য

টিবিএন ডেস্ক

জুলাই ১৬ ২০২৩, ১৮:৫৬

গভীর সাগরের প্রবালও পাওয়া যাচ্ছে মাছ ধরার জাল। ছবি: নেচার

গভীর সাগরের প্রবালও পাওয়া যাচ্ছে মাছ ধরার জাল। ছবি: নেচার

  • 0

প্রশান্ত মহাসাগর, অ্যাটলান্টিক এবং ভারত মহাসাগরের অববাহিকা জুড়ে ২৫টি জায়গায় ৮৪টি প্রবাল বাস্তুসংস্থানের ওপর সমীক্ষা চালিয়ে গভীর এবং অগভীর সব প্রবালপ্রাচীরে মানুষের ব্যবহৃত প্লাস্টিকের বর্জ্য পাওয়া গেছে।

ব্রাজিলের ইউনিভার্সিটি অফ সাও পাওলোর সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানী হাডসন পিনহেইরোর নেতৃত্বে গবেষকদল দূরবর্তী প্রবালপ্রাচীরের জীববৈচিত্র্য নিয়ে এই গবেষণা করেন।

তাদের ধারণা ছিল এসব জায়গাগুলো এখনও দূষণমুক্ত রয়েছে। তবে বাস্তবে তা দেখা যায়নি।

পিনহেইরো বলেন, ‘জায়গাগুলো ততটা দূষণমুক্ত নয় যতটা আমরা ভেবেছিলাম।’

দেখা গেছে ৮৪টি বাস্তুতন্ত্রের মধ্যে ৭৭ টিতেই ম্যাক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি রয়েছে। প্লাস্টিকের বস্তুগুলো ৫ সেন্টিমিটার বা তার চেয়েও বড় আকারের। গবেষকরা দেখতে পেয়েছেন প্রবাল প্রাচীরগুলোতে মানুষের মাধ্যমে হওয়া ক্ষতির ৮৮ শতাংশ হচ্ছে এ ধরনের প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে।

আরও গহীন অঞ্চলে পাওয়া বর্জ্যের বেশিরভাগই জাল এবং লাইনসহ মাছ ধরার ফেলে দেয়া সরঞ্জাম। কিছু জায়গায় গবেষক দলটি ‘ভুতুড়ে মাছ ধরার’ প্রমাণ পেয়েছে। এর অর্থ হলো, পরিত্যাক্ত মাছ ধরার জাল প্রবালপ্রাচীরে আটকে যায় এবং মাছেরা সেই ফাঁদে পড়ে মারা যায়।

সামুদ্রিক যেসব বাস্তুতন্ত্রে প্রবাল নেই কৃত্রিম প্লাস্টিক বর্জ্য সাধারণত সেখানে সৈকতের কাছাকাছি এসে জমা হয়। পিনহেইরো এবং তার সহকর্মীরা দেখেছেন, গভীর প্রবাল প্রাচীরগুলোতে অগভীর প্রাচীরের চেয়ে বেশি ম্যাক্রোপ্লাস্টিক রয়েছে।

এর পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ থাকতে পারে। যেমন, অগভীর প্রাচীরগুলোতে শক্তিশালী ঢেউ আছড়ে পরে প্লাস্টিককে দূরে সরিয়ে দেয়। এছাড়া প্লাস্টিক অপসারণের প্রচেষ্টা প্রধানত অগভীর প্রবাল প্রাচীরগুলোতে করা হয়।

গবেষকরা বলছেন, গভীর প্রবালপ্রাচীরে প্রচুর মাছ রয়েছে। ফলে সেখানে কোনো জাল আটকে গেলে প্রচুর মাছ ফাঁদে পড়ে মারা যায়। অগভীর পানিতে কম মাছ পাওয়া যায় বলে জেলেরা ক্রমশ গভীর সমুদ্রে মাছ ধরায় আগ্রহী হয়ে উঠছে। এসব জেলের ফেলে দেয়া জাল প্রবালে আটকে যায়।

পিনহেইরো বলেন, ‘অগভীর প্রাচীরের দূষণ ও বর্জ্যের কারণে জেলেদের তীর থেকে আরও দূরে যেতে হচ্ছে। গভীর প্রবালপ্রাচীরে তাদের মাছ ধরতে হচ্ছে।’

প্লাস্টিক বর্জ্য বিভিন্ন উপায়ে প্রবাল বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি করতে পারে। দড়ি ও জাল প্রবালের মধ্যে জড়িয়ে প্রবাল ক্ষয়ের কারণ হতে পারে। প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যাকটেরিয়া এবং অন্যান্য অণুজীবকেও আশ্রয় দিতে পারে, যা প্রবালের ক্ষতি করে থাকে। পিনহেইরো বলেন, ‘অন্যান্য গবেষণাতেও প্লাস্টিকের উপস্থিতির সঙ্গে প্রবালের রোগ যুক্ত বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।’

প্লাস্টিক দূষণ বন্ধে জাতিসংঘ একটি বৈশ্বিক চুক্তির আলোচনা চালাচ্ছে। পিনহেইরো বলেন, ‘আমরা এখানে সুপারমার্কেটে গিয়ে পলিথিনের ব্যাগের বদলে কাগজের ব্যাগ ব্যবহারের কথা বলছি না। আমরা এমন লোকদের কথা বলছি যারা তাদের খাবারের জন্য মাছ ধরার উপর নির্ভর করে।’

তিনি ভর্তুকি এবং অন্যান্য প্রণোদনা দেয়ার ব্যাপারে আলোচনা করার আহ্বান জানিয়েছেন যাতে করে জেলেরা কম প্লাস্টিক ব্যবহার করেন বা বায়োডিগ্রেডেবল উপকরণ ব্যবহার করতে পারেন। এ উদ্যোগ গভীরতম প্রবাল প্রাচীরের দূষণ বন্ধে সহায়তা করবে।

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের গ্লোবাল প্লাস্টিক অ্যাকশন পার্টনারশিপ (জিপিএপি) প্লাস্টিক দূষণের সমাধান খুঁজতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং সরকারের সঙ্গে কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানটির সহ-পরিচালক রইসিন গ্রিন বলেন, ‘জিপিএপির দৃষ্টিভঙ্গি হলো ভূমিভিত্তিক প্লাস্টিক বর্জ্যের দিকে নজর দেয়া। একবার প্লাস্টিক পরিবেশে উন্মুক্ত হয়ে গেলে এর কী ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে সে সম্পর্কে আরও ভালো ধারণা দেয় এই গবেষণাপত্রটি।’

জিপিএপির মতো সংগঠনগুলো যাতে সঠিক পরামর্শ দিতে পারে তা নিশ্চিত করার জন্যও এ ধরণের গবেষণামূলক তথ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


0 মন্তব্য

মন্তব্য করুন