ভাগনারের জুনিয়র অফিসাররা বিদ্রোহের বিষয়ে ‘কিছুই জানতেন না’

টিবিএন রিপোর্ট

জুলাই ২৪ ২০২৩, ১৯:৪৭

বিদ্রোহের দিন রোস্তোভের রাস্তায় ভাগনার যোদ্ধারা। ছবি: সংগৃহীত

বিদ্রোহের দিন রোস্তোভের রাস্তায় ভাগনার যোদ্ধারা। ছবি: সংগৃহীত

  • 0

ভাগনার গ্রুপের নেতা ইয়েভগেনি প্রিগোজিন মাত্র ২৪ ঘন্টার মধ্যে রাশিয়ার বিরুদ্ধে একটি বিদ্রোহ করেন। তিনি দক্ষিণের শহর রোস্তোভে তার সৈন্য পাঠান ও পরে মস্কোর দিকে অগ্রসর হন।

ভাগনার যোদ্ধারা মিডিয়ার সঙ্গে খুব কমই কথা বলে। তবে রাশিয়ার এক জুনিয়র অফিসারের সঙ্গে কথা বলেছে বিবিসি। তার মতে তিনি ও তার সহযোদ্ধারা কী ঘটছে সে সম্পর্কে ‘কিছুই জানতেন না’।

গ্লেব (ছদ্মনাম) এর আগে পূর্ব ইউক্রেইনের শহর বাখমুত দখলের লড়াই করেছেন। বিদ্রোহ শুরুর সময় তিনি রাশিয়া অধিকৃত লুহানস্ক অঞ্চলের ব্যারাকে তার ইউনিটের সঙ্গে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন।

তারা ইউক্রেইন ছেড়ে ২৩ শে জুন ভোরে ভাগনার যোদ্ধাদের একটি দলে যোগ দেওয়ার জন্য ডাক পান। এই আদেশটি ভাগনার কমান্ডারের কাছ থেকে এসেছিল। নিরাপত্তাজনিত কারণে ওই কমান্ডারের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্লেব।

তিনি নির্দেশ পেয়েছিলেন যে, ‘এটি একটি সম্পূর্ণ সেনা মোতায়েন। একটি বিশাল দল নিয়ে যাচ্ছি।’

গ্লেব বলেছেন দলটি কোথায় যাচ্ছে তা কাউকে জানানো হয়নি। তবে তিনি অবাক হয়েছিলেন যখন তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে তারা ফ্রন্টলাইন থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন।

তিনি জানান, ভাগনার যোদ্ধারা রাশিয়ার সীমান্ত অতিক্রম করে রোস্তোভ অঞ্চলে প্রবেশ করার সময় কোনো প্রতিরোধের মুখোমুখি হয়নি।

তিনি বলেন, ‘আমি কোনও সীমান্তরক্ষীকে দেখিনি। পথে ট্রাফিক পুলিশ আমাদের স্যালুট করেছে।’

মেসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামে ওয়াগনারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত চ্যানেলগুলির দাবি করে যে, ওয়াগনার যোদ্ধারা পৌঁছানোর পরপরই বুগায়েভকা চেকপয়েন্টে সীমান্তরক্ষীরা তাদের অস্ত্র সমপর্ণ করেছে।

রোস্তোভ-অন-ডনের কাছে পৌঁছানোর পরপর যোদ্ধাদের শহরের সমস্ত আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ভবনগুলি ঘিরে ফেলার ও সামরিক বিমানবন্দরটি দখল করার আদেশ দেওয়া হয়। ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিসের (এফএসবি) আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোর নিয়ন্ত্রণ নিতে বলা হয় জিএলবির ইউনিটকে।

ভাগনার গ্রুপ যখন বিল্ডিংয়ের কাছাকাছি এসে এটিকে পুরোপুরি তালাবদ্ধ ও খালি অবস্থায় পায়। ভেতরে কিছু আছে কিনা তা পরীক্ষা করার জন্য একটি ড্রোন পাঠানো হয়। আধ ঘণ্টা পর একটি দরজা খুলে দুই জন রাস্তায় নেমে আসে।

গ্লেব বলেন, “তারা বলছিলো ‘আসুন একটি চুক্তি করি’ তখন আমি বলি, চুক্তি করার কী আছে? এটা আমাদের শহর’।

রোস্তোভের সাংবাদিকরা শহর ও এর আশেপাশের অনেক সরকারি ভবনের ক্ষেত্রেও একই ধরনের পরিস্থিতির কথা জানিয়েছেন। ভাগনার যোদ্ধারা প্রথমে তাদের উপর দিয়ে ড্রোন উড়িয়েছে এরপর তাদের ঘিরে ফেলেছে। কাউকে বের হতে দেওয়া হয়নি। তবে ডেলিভারি সার্ভিসগুলোকে খাবার নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়।

গ্লেব গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের সত্যতা নিশ্চিত করেন ও জানান যে, তাদের দলের নেতৃত্বে ছিলেন ভাগনারের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সাবেক স্পেশাল ফোর্সেস অফিসার দিমিত্রি উতকিন। গ্লেব যোগ করেন, দলটি মস্কোর দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল।

তাহলে গ্লেব কি জানতেন যে প্রিগোজিন কী করতে চেয়েছিলেন বা কী পরিকল্পনা করছিলেন?

তবে, গ্লেব নিশ্চিত করে বলেন যে, প্রিগোজিন কী করতে চেয়েছিলেন বা তার পরিকল্পনা কী ছিল সেটা নিয়ে তার বিন্দুমাত্র ধারণা ছিল না।

তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘যেমনটা আপনারা টেলিগ্রাম থেকে জেনেছেন তেমনি আমরা টেলিগ্রাম থেকেই এ বিষয়ে জেনেছি।’

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রোস্তোভে যা ঘটছে তার ছবি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় বাসিন্দা ও সাংবাদিকরা তাদের শহর দখল করে রাখা ভাগনার যোদ্ধাদের সঙ্গে হেসে কথা বলছেন ও আড্ডা দিচ্ছেন দেখে অনেকেই বেশ অবাক হয়েছিল।

গ্লেবের সঙ্গে ২৪ জুন সন্ধ্যায় একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা যোগাযোগ করে। কোনও ব্যাখ্যা ছাড়াই তিনি তাকে ও তার ইউনিটকে লুহানস্কের ঘাঁটিতে ফিরে যেতে নির্দেশ দেয়।

ব্যারাকে ফিরে যাওয়ার সময় তারা টেলিগ্রাম অনুসরণ করছিল। তারা জানতে পারেন যে, প্রিগোজিনের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ আনা হয়েছে। তারপর সেটি তুলে নেয়া হয় ও তাকে বেলারুশে নির্বাসিত হতে হয়।

তারা জানতে পারে, ভাগনার যোদ্ধারা তাদের ‘যুদ্ধের যোগ্যতার’ কারণে বিদ্রোহে তাদের ভূমিকার জন্য দায়বদ্ধ হবে না বলে মত দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ।

গ্লেব ও তার ইউনিটের ভবিষ্যত এখনও অস্পষ্ট। তাদের লুহানস্কের ব্যারাকে থাকতে বলা হয়েছে ও পরবর্তী আদেশের জন্য অপেক্ষা করতে বলা হয়েছে।

ভাগনার কেন ছাড়ছেন না এ প্রশ্নের জবাবে গ্লেব বলেন, ‘আমার চুক্তির মেয়াদ এখনও শেষ হয়নি।’


0 মন্তব্য

মন্তব্য করুন