
ট্রাম্পের উচ্চ শুল্ক ফাঁকি দিতে যে পথে চীনা কোম্পানিগুলো

টিবিএন ডেস্ক
প্রকাশিত: মে ২৮ ২০২৫, ১৭:০৪

চীনা বন্দর। ফাইল ছবি
- 0
চীনের ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের আরোপিত উচ্চ শুল্ক থেকে বাঁচতে বিভিন্ন পন্থা নিয়েছে কিছু আমদানিকারক ও পণ্য পরিবহনকারী প্রতিষ্ঠান। অর্থের বিনিময়ে শুল্ক এড়ানোর উপায় খুঁজে দেওয়া অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানগুলো চীনের।
অ্যামেরিকায় আমদানীকৃত পণ্যের ওপর প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প আরোপিত উচ্চ শুল্ক এড়াতে নানা পদ্ধতি বের করছেন বাণিজ্য সংশ্লিষ্টরা। অর্থের বিনিময়ে কাজটি করে দিচ্ছে অনেক প্রতিষ্ঠান। ট্রাম্পের উচ্চ শুল্কে ‘শুভঙ্করের ফাঁকি’র এসব পদ্ধতি ও সংশ্লিষ্ট নানা দিক তুলে ধরেছে দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস।
ট্রাম্প সম্প্রতি শুল্ক বাড়ানোর পর রহস্যময় বার্তা পাওয়া শুরু করে অ্যামেরিকান কিছু কোম্পানি। এসব বার্তায় শুল্ক এড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের অনুসন্ধান অনুযায়ী, পণ্য পরিবহনকারী কোম্পানিগুলো পোশাক, গাড়ির যন্ত্রাংশ ও গয়না আমদানিকারক অ্যামেরিকান প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করছে। যোগাযোগকারী কোম্পানিগুলোর বেশির ভাগ চীনের। তারা বাতলে দিচ্ছে শুল্ক এড়ানোর নানা উপায়।
অ্যামেরিকার এক আমদানিকারকের কাছে পাঠানো এক ইমেইলে লেখা ছিল, ‘আমরা চীনের ওপর উচ্চ শুল্ক এড়াতে পারি, যেমনটা অতীতে আমরা অনেকবার করেছি।’
আরেক ইমেইলে বলা হয়, ‘অ্যামেরিকার শুল্ককে পরাজিত করুন। মালামাল পরিবহন করুন দুশ্চিন্তামুক্ত হয়ে।’
ওই ইমেইলে শুল্ক ১০ শতাংশে রাখার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। শুল্ক কমানোর প্রস্তাবগুলো ছড়িয়ে পড়ছে ইমেইল, টিকটকের ভিডিও ও অন্য প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে।
এ বিষয়ে অ্যামেরিকান কোম্পানিগুলোর নির্বাহী ও সরকারি কর্মকর্তারা জানান, অনলাইনে প্রস্তাবগুলো ছড়িয়ে পড়ার মধ্য দিয়ে প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের নতুন প্রবাহ ব্যাপকভাবে শুরু হয়েছে।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বিদেশি পণ্যের ওপর অ্যামেরিকান শুল্ক বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে কোম্পানিগুলোকে দেওয়া প্রলোভন।
শুল্ক ফাঁকি নিয়ে কাজ করা চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো বিজ্ঞাপনে তাদের ‘সেবাকে’ বৈধ সমাধান হিসেবে আখ্যায়িত করছে। তারা নির্দিষ্ট অর্থ নেওয়ার বিনিময়ে অ্যামেরিকায় অনেক কম শুল্কে পণ্য রপ্তানির পথ বলে দিচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুল্ক ফাঁকির এ ধরনের অনুশীলন শুল্ক প্রতারণার ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি।
তাদের ভাষ্য, কোম্পানিগুলো অ্যামেরিকান সরকারকে দেওয়া চালানের তথ্য পরিবর্তন করে শুল্ক ফাঁকি দিতে পারে। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলো প্রথমে কম শুল্কের কোনো দেশে পণ্য পাঠাতে পারে। একই পণ্য সেখান থেকে তারা অ্যামেরিকায় পাঠিয়ে শুল্ক কমাতে পারে। এ কৌশলকে বলে ট্রান্সশিপমেন্ট।
নির্দিষ্ট একটি পণ্য, এর প্রদর্শিত ডলার মূল্য ও উৎপাদনকারী দেশের ওপর ভিত্তি করে শুল্ক নির্ধারণ করে অ্যামেরিকান সরকার। এসব বিষয় বদলে যেসব কৌশলে কর ফাঁকি দেওয়া হয়, এর মধ্যে তিনটি উল্লেখযোগ্য।
সংশ্লিষ্ট শিল্পের লোকজন নিউ ইয়র্ক টাইমসকে জানান, একটি কৌশল হলো কোনো পণ্যের প্রকৃত দামের চেয়ে কম দাম দেখানো। এটি পণ্যের বিপরীতে আবশ্যিক পরিশোধযোগ্য শুল্ক কমায়।
দ্বিতীয় পদ্ধতিটি হলো পণ্যকে ভুল ক্যাটাগরিতে ফেলা। যেমন: কোনো একজন আমদানিকারক অ্যামেরিকান সরকারকে জানাতে পারেন, শার্টের যে চালানটি এসেছে, সেটি এমন বস্তু দিয়ে তৈরি, যার ওপর কম শুল্ক আরোপ করা হয়।
তৃতীয় কৌশলটি হলো অ্যামেরিকায় পৌঁছার আগে পণ্যকে অন্য আরেকটি দেশে পাঠানো। এর মাধ্যমে কম শুল্কের সুবিধা নেওয়া হয়। এ বছর কৌশলটিকে বেশ লাভজনক মনে করা হচ্ছে।
ট্রাম্প সম্প্রতি চীনা পণ্যে ন্যূনতম ১৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করলেও এশিয়ার কয়েকটি দেশে সে হার ছিল অনেক কম। ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া ও কম্বোডিয়ার পণ্য আমদানিতে মাত্র ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট।
এমন প্রেক্ষাপটে উচ্চ শুল্ক এড়াতে চাওয়া কোনো কোম্পানি কম শুল্কের দেশগুলোতে চীনা পণ্য পাঠিয়ে অ্যামেরিকায় রপ্তানি করতে পারে।
একটি পণ্য সর্বশেষ কোন দেশে তৈরি হয়েছে, তার ওপর ভিত্তি করে অ্যামেরিকা শুল্কের হার নির্ধারণ করে। ফলে চীনের কোনো কোম্পানির কর্মকাণ্ড অবৈধ হওয়া নির্ভর করছে মালয়েশিয়া কিংবা ভিয়েতনামে তাদের উৎপাদনের উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ থাকার ওপর। অ্যামেরিকার এ নীতির সুবিধা নিচ্ছে কোম্পানিগুলো।
কোনো কোম্পানি চীনের তৈরি জুতার অংশবিশেষ মালয়েশিয়ায় নিতে পারে। সেখানে জোড়া লাগিয়ে তৈরি সম্পূর্ণ পণ্যটি মালয়েশিয়ান হিসেবে বিবেচিত হতে পারে, তবে চীনের উৎপাদিত কোনো পণ্য অন্য দেশ হয়ে পৌঁছালে একে আইনের লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচনা করবে অ্যামেরিকা সরকার।