
ট্রাম্পকে কোন ধরনের, কত দামের বিমান উপহার দেবে কাতার

টিবিএন ডেস্ক
প্রকাশিত: মে ১২ ২০২৫, ০:৪১

জয়েন্ট বেইজ অ্যান্ড্রুজে রাখা এয়ার ফোর্স ওয়ান। ছবি: নিউ ইয়র্ক টাইমস
- 0
সংশ্লিষ্ট কয়েকজন অ্যামেরিকান কর্মকর্তা জানান, ট্রাম্প প্রশাসন গ্রহণ করলে কাতারের বিমানটি হবে অ্যামেরিকা সরকারের হাতে আসা অন্যতম বড় উপহার। নতুন অবস্থায় ‘বোয়িং ৭৪৭-৮’ বিমান কিনতে গুনতে হয় ৪০০ মিলিয়ন ডলার।
উপহার হিসেবে কাতার রাজপরিবারের দেওয়া একটি বিলাসবহুল বিমান গ্রহণের পরিকল্পনা করছে ট্রাম্প প্রশাসন। বিমানটি সম্বন্ধে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য জানিয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমস।
ধরন
ট্রাম্পকে বোয়িংয়ের বিশাল ও সুপ্রশস্ত ৭৪৭-৮ ধরনের বিলাসবহুল বিমানটি দিতে চাইছে কাতার। এটি বোয়িং নির্মিত সবচেয়ে বড় বিমান। উপহারের এ বিমানকে প্রেসিডেন্টকে বহনকারী বিমান তথা এয়ার ফোর্স ওয়ানে উন্নীত করা হবে।
দাম
সংশ্লিষ্ট কয়েকজন অ্যামেরিকান কর্মকর্তা জানান, ট্রাম্প প্রশাসন গ্রহণ করলে কাতারের বিমানটি হবে অ্যামেরিকা সরকারের হাতে আসা অন্যতম বড় উপহার। নতুন অবস্থায় ‘বোয়িং ৭৪৭-৮’ বিমান কিনতে গুনতে হয় ৪০০ মিলিয়ন ডলার।
বিমানটি নিয়ে কাতারের পরিকল্পনা
দুজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নিউ ইয়র্ক টাইমসকে জানান, কাতারের পরিকল্পনা অনুযায়ী ডনাল্ড ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদে এ বিমানে করে যাতায়াত করবেন। পরবর্তী সময়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সিয়াল লাইব্রেরিতে দান করা হবে বিমানটি।
এ ধরনের উপহারের অর্থ হলো প্রেসিডেন্ট পদ ছাড়ার পরও বিমানটি ব্যবহার করতে পারবেন ট্রাম্প।
কাতারের একজন কর্মকর্তার ভাষ্য, বিমান উপহারের প্রস্তাবটি এখনও বিবেচনাধীন।
অ্যামেরিকার জ্যেষ্ঠ দুই কর্মকর্তা জানান, সরকারের ব্যবহারের জন্য উপহার হিসেবে গ্রহণ করা হবে বিমানটি, তবে কাতার সরকারের মুখপাত্র আলি আল-আনসারি বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আসন্ন সফরে বিমানটি উপহার দেওয়া নিয়ে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে, তা সঠিক নয়।
আলি আরও বলেন, ‘এয়ার ফোর্স ওয়ান হিসেবে সাময়িক ব্যবহারের জন্য একটি বিমানের সম্ভাব্য স্থানান্তরের বিষয়টি বিবেচনায় রেখেছে কাতারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও অ্যামেরিকার ডিপার্টমেন্ট অব ডিফেন্স, তবে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট আইনি বিভাগের পর্যালোচনায় আছে এবং এ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি।’
হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা জানান, বিমানটি এ সপ্তাহে উপহার হিসেবে দেওয়া কিংবা গ্রহণ করা হবে না।
ডেমোক্র্যাট ও সুশাসন কর্মীদের ক্ষোভ
হোয়াইট হাউজ বলেছে, আইন সম্পূর্ণ মেনেই উপহারটি গ্রহণ করা হবে, তবে বিমান উপহার পাওয়ার সঙ্গে উল্লেখযোগ্যভাবে নৈতিক বিষয় যুক্ত থাকায় এ পরিকল্পনা নিয়ে ক্ষুব্ধ ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতা ও সুশাসন নিয়ে কাজ করা গোষ্ঠীগুলো। তারা ট্রাম্পের প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্বের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যে তার ব্যবসায়িক স্বার্থ এবং বিমানটির ব্যাপক মূল্যকে সাংঘর্ষিক হিসেবে দেখছেন। এ ছাড়া প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব ছাড়ার পরও বিমানটি ব্যবহারের সম্ভাবনাকেও স্বার্থের দ্বন্দ্ব হিসেবে দেখছে পক্ষ দুটি।
ভোক্তা অধিকার সংগঠন পাবলিক সিটিজেনের কো-প্রেসিডেন্ট রবার্ট ওয়েইজম্যান বলেন, ‘এর মধ্য দিয়ে এটা পরিষ্কার যে, ডনাল্ড ট্রাম্পের অধীনে অ্যামেরিকার পররাষ্ট্রনীতি কেনা যায়।’
অপেক্ষাকৃত নতুন বিমান
‘ট্রাম্প ফোর্স ওয়ান’ হিসেবে পরিচিত ট্রাম্পের ব্যক্তিগত বিমানটি পুরোনো ৭৫৭ মডেলের। নব্বইয়ের দশকে প্রথম উড্ডয়ন করে বিমানটি। এরপর এটি ব্যবহার করেন মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা পল অ্যালেন। ট্রাম্প ২০১১ সালে বিমানটি কেনেন।
কাতারের উপহারটি দায়িত্ব ছাড়ার পর ব্যবহার করলে ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য আগের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে নতুন বিমান পাবেন ট্রাম্প।
এবিসি নিউজ রবিবার সকালে জানায়, আসন্ন দিনগুলোতে বিমান উপহারের ঘোষণা আসবে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম বড় ধরনের বিদেশ সফরে মধ্যপ্রাচ্যে গেছেন ট্রাম্প। সেখানকার তিনটি দেশ সফর করবেন তিনি, যার একটি কাতার।
ফুরাবে নতুন বিমানের অপেক্ষা
কাতারের উপহার গ্রহণের মাধ্যমে নতুন এয়ার ফোর্স ওয়ানের জন্য ট্রাম্পের অপেক্ষা ফুরাবে। এর আগে নতুন দুটি বিমান কিনতে বোয়িংয়ের সঙ্গে চুক্তিতে বারবার বিলম্ব হয়।
কী বলছে হোয়াইট হাউস
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলাইন লেভিট এক বিবৃতিতে বলেন, ‘বিদেশি সরকারের দেওয়া যেকোনো উপহার সবসময় প্রয়োগযোগ্য সব আইন সম্পূর্ণ মেনে গ্রহণ করা হয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসন পূর্ণ স্বচ্ছতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ।’
এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট ও ডিফেন্স ডিপার্টমেন্ট।
ফেব্রুয়ারিতে কাতারি বিমানে চড়েছিলেন ট্রাম্প
এক দশকের বেশি সময়ের পুরোনো কাতারের মালিকানাধীন ৭৪৭ বিমানে ফেব্রুয়ারিতে চড়েছিলেন ডনাল্ড ট্রাম্প। সে সময় পাম বিচ ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে পার্ক করা ছিল এটি। সে সময় নিউ ইয়র্ক টাইমস এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, সম্ভাব্য নতুন এয়ার ফোর্স ওয়ানে হিসেবে বিমানটিকে বিবেচনা করা হচ্ছে।
অ্যামেরিকা সরকারের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা জানান, ডিফেন্স ডিপার্টমেন্ট ভেবেচিন্তে দেখেছে, বিমানটি গ্রহণ করতে পারবে তারা।