বিরোধীদের বয়কটের মধ্যে ভারতের নতুন পার্লামেন্ট ভবন উদ্বোধন মোদির
টিবিএন ডেস্ক
মে ২৮ ২০২৩, ২১:৪৬
- 0
বিরোধী দলের বিক্ষোভ ও বয়কটের মাঝেও ভারতের নতুন পার্লামেন্ট ভবন উদ্বোধন করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বেশিরভাগ বিরোধী দল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেয়নি। তারা রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে ভবনটি উদ্বোধনের দাবি করেছিল।
আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হয় রোববার স্থানীয় সময় সকাল ৭টায়। ভবনটিকে জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করে আইন প্রণেতাদের সমাবেশে ভাষণ দেন মোদি।
তিনি বলেন, ‘এটি কেবল একটি ভবন নয়। এটি এক দশমিক চার বিলিয়ন ভারতীয়র আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্নের প্রতিফলন। এটি আমাদের গণতন্ত্রের মন্দির, যা বিশ্বের কাছে ভারতের সংকল্পের বার্তা পৌঁছে দিয়েছে।’
দেশটির প্রধান বিরোধী কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এক টুইট বার্তায় জানান, মোদি পার্লামেন্টের উদ্বোধনকে রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠান বানিয়ে ফেলেছেন।
কংগ্রেসসহ ১৯টি দল গত সপ্তাহে এ অনুষ্ঠান বয়কট করার ঘোষণা দেয়। নতুন ভবন উদ্বোধনের জন্য দেশটির রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে আমন্ত্রণ না জানানোয় সরকারের সমালোচনার পাশাপাশি হিন্দু জাতীয়তাবাদী মতাদর্শের ভিডি সাভারকারের জন্মবার্ষিকীতে এ অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্তেরও নিন্দা জানায় তারা।
বিজেপি বলছে, বিরোধীদের এ বয়কট ‘গণতন্ত্রের অসম্মান।’
মোদি নতুন সংসদ ভবনে একটি সোনার রাজদণ্ড স্থাপন করেন, যাকে বলা হচ্ছে সেঙ্গোল। তিনি বলেন, নতুন ভবনে ‘পবিত্র সেঙ্গোল’-এর উপস্থিতি আইন প্রণেতাদের অনুপ্রাণিত করবে।
সোনার এই রাজদণ্ড বিশিষ্ট হিন্দু সম্প্রদায়ের পুরোহিতরা ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুকে দিয়েছিলেন।
মোদি জানান, সেঙ্গোল ‘১৯৪৭ সালের ১৪ অগাস্ট বৃটিশদের কাছ থেকে ভারতের ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতীক।’
তবে রাজদণ্ড নিয়ে সরকারের এ দাবিকে ‘অতিরঞ্জন’ বলেছে বিরোধী দলগুলো।
উদ্বোধন অনুষ্ঠান চলার সময়, অলিম্পিক পদক বিজয়ী কুস্তিগীরসহ ভারতের শীর্ষ কিছু কুস্তিগীর নতুন ভবনের সামনে বিক্ষোভের চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের আটক করে।
তারা নিজেদের ফেডারেশনের সভাপতি ব্রিজ ভূষণ সিংয়ের পদত্যাগ ও গ্রেফতারের দাবিতে দিল্লিতে বিক্ষোভ করছিলেন। সিং বিজেপির প্রভাবশালী একজন আইন প্রণেতা ও রাজনীতিক। তার বিরুদ্ধে নারী কুস্তিগীরদেরকে যৌন নির্যাতন ও হয়রানির অভিযোগ রয়েছে।
বৃটিশ আমলের পার্লামেন্টের বদলে তৈরি হয়েছে নতুন এ ভবন। পুরানো পার্লামেন্টের সামনে নতুন চার তলা এই ভবন আনুমানিক ১১৭.১ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে তৈরি। এতে ১,২৭২ জন এমপি বসতে পারবেন। লোকসভা চেম্বার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে বসবে, যা ভারতের জাতীয় পাখি ময়ূরের আদলে তৈরি। রাজ্যসভা কক্ষ উচ্চকক্ষে বসবে, যা ভারতের জাতীয় ফুল পদ্মের অনুরূপ বানানো হয়েছে।
পুরনো পার্লামেন্ট ভবনটি রূপান্তর করা হবে জাদুঘরে।
ঔপনিবেশিক আমলের সরকারি ভবনগুলো প্রতিস্থাপনে সরকারের উচ্চাভিলাষী প্রকল্পের অংশ নতুন এ ভবন। অনেক বিরোধী রাজনীতিক, পরিবেশবাদী এবং সুশীল সমাজ গোষ্ঠী এর সমালোচনা করেছিল; কোভিড মহামারির সময় এর নির্মাণ ব্যয়ের নিন্দা করেছিল। অভিযোগ উঠেছিল সরকার অন্যান্য আইন প্রণেতা ও জনসাধারণের সঙ্গে এ বিষয়ে কোনো পরামর্শ করেনি।
কংগ্রেস ২০২০ সালে নতুন পার্লামেন্ট ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠান থেকেও নিজেদের সরিয়ে নিয়েছিল।
মন্তব্যকারীরা বলছেন, চলমান রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব বিভেদের জন্ম দিয়েছে, যেখানে ভারতের ক্ষমতাসীন দল এবং বিরোধীরা বেশিরভাগ বিষয়ে চুক্তিতে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক সম্পাদকীয়তে লিখেছে, ‘উভয় পক্ষেরই এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজে বের করতে হবে। অবশ্যই তা করতে হবে, কারণ তারা যদি সেটি না করতে পারে তবে ইতিহাস তাদের ক্ষমা করবে না।’