
হঠাৎ ব্ল্যাক সি কেনো যুদ্ধের কেন্দ্রবিন্দু?

টিবিএন ডেস্ক
আগস্ট ৯ ২০২৩, ১৪:০৬

ব্ল্যাক সিতে রাশিয়ার যুদ্ধজাহাজ। ছবি: সংগৃহীত
- 0
রাশিয়ার যুদ্ধজাহাজগুলো ব্ল্যাক সিতে টহল দেয়ার পাশাপাশি ইউক্রেইনের শহরগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ছে এবং কার্যত ইউক্রেইনে অবরোধ আরোপ করছে।
ইউক্রেইনের সামুদ্রিক ড্রোনগুলো গোপনে রাশিয়ার বন্দর ও জাহাজ লক্ষ করে আঘাত করছে, যা ক্রমেই রাশিয়ার জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে। ব্ল্যাক সি-এর আকাশসীমায়, নেইটো এবং মিত্র বাহিনীর নজরদারি বিমান এবং ড্রোনগুলো আন্তর্জাতিক জলসীমার উপর দিয়ে উড়ছে। একই সঙ্গে এরা মস্কোর আগ্রাসনকে দমনের জন্য গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করছে। রাশিয়াও তার নিজস্ব বিমান দিয়ে আকাশসীমায় টহল পরিচালনা করছে।
ব্ল্যাক সিতে ইউক্রেইন, রাশিয়া এবং তিনটি নেইটো দেশের বর্ডার রয়েছে। গত মাসে ইউক্রেইনের শস্য রফতানি নিশ্চিতের একটি চুক্তি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেয় মস্কো। এরপর ক্রমেই ব্ল্যাক সি সামরিক ও ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার প্রধান কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।
ফ্রন্টলাইনে প্রচণ্ড লড়াইকে সরিয়ে রেখে ব্ল্যাক সি রাশিয়া এবং নেইটো দেশগুলোকে অন্য এক মাত্রায় নিয়ে গেছে। এ ধরনের লড়াই কিয়েভের প্রতিরক্ষা বা বাখমুতের যুদ্ধ সংঘর্ষের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
শিকাগো কাউন্সিল অন গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স পরিচালনাকারী নেইটোর সাবেক অ্যামেরিকান অ্যাম্বাসেডর ইভো ডালডার বলেন, ‘ব্ল্যাক সি এখন সংঘাতের একটি অঞ্চল। পশ্চিম ইউক্রেইনের মতো নেইটোর জন্যও এটি একটি যুদ্ধক্ষেত্র।’
শস্যচুক্তি থেকে সরে আসার পরে, রাশিয়া ইউক্রেইনের অর্থনীতির চাবিকাঠি শস্য রফতানিকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য ইউক্রেইনের বন্দরগুলো ধ্বংস করে দেয়। এমনকি রাশিয়া নেইটো সদস্য রোমানিয়া থেকে কয়েক শ’ গজ দূরে ড্যানিউব নদীর অঞ্চলে হামলা চালায়। এ আক্রমণ সামরিক জোটকে সংঘাতের দিকে টেনে নেয়ার আশঙ্কা বাড়িয়ে তোলে।
ইউক্রেইন গত সপ্তাহে পরপর দুবার রাশিয়ার জাহাজে হামলা চালিয়েছে। সমুদ্রের ড্রোনের মাধ্যমে কিয়েভ তাদের নতুন শক্তি প্রদর্শন করেছে। এসব ড্রোন ইউক্রেইনের উপকূল থেকে কয়েক শ’ মাইল দূরে রাশিয়ার বন্দরগুলোতে আঘাত হানতে সক্ষম। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত রাশিয়ার ব্ল্যাক সিতে ছয়টি বন্দর এবং এদের প্রবেশপথকে ‘যুদ্ধের ঝুঁকিপূর্ণ’ এলাকা হিসেবে বিবেচনা করা হবে বলে সতর্ক করা হয়েছে।
ইউক্রেইনের নৌবাহিনীর কমান্ডার রিয়ার অ্যাডমিরাল ওলেক্সি নিজপাপা গত মে মাসে ব্ল্যাক সি-এর আন্তর্জাতিক জলসীমায় রাশিয়ার স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আরও জোরালো জবাব দেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, ‘আমাদের অবশ্যই শত্রুর উপকূল থেকে শুরু করে আমাদের নিজস্ব উপকূল রক্ষা করতে হবে।’
ব্ল্যাক সি নিয়ন্ত্রণের এ লড়াই বিশ্বব্যাপী জ্বালানি বাজার এবং বিশ্ব খাদ্য সরবরাহের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। এটি নেইটোর জন্য নিশ্চিতভাবে একটি নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসবে, কারণ আন্তর্জাতিক আইনের একটি কেন্দ্রীয় নীতি হচ্ছে সমুদ্রের অবাধ নৌচলাচল। এটি জোটকে সরাসরি রাশিয়ান বাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে লিপ্ত হতে দেবে না।
ওয়াশিংটনে বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা যুদ্ধের শুরুতে ইউক্রেইনের রাশিয়ার লক্ষ্যবস্তুতে হামলা বা ব্ল্যাক সির বন্দরসহ রাশিয়ার অভ্যন্তরে নাশকতা চালানোর ফলে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলবে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। সেই উদ্বেগ এখন অনেকটা কমলেও একেবারে অদৃশ্য হয়ে যায়নি।
অ্যামেরিকা রাশিয়ার ভূখণ্ডে যেকোনো ধরনের আক্রমণে অ্যামেরিকান অস্ত্রের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। অ্যামেরিকান কর্মকর্তারা আরও বলেছেন, তারা ইউক্রেইনের হয়ে কোনো লক্ষ্য নির্ধারণ করেন না। আদতে অ্যামেরিকা এবং পশ্চিমা মিত্ররা দীর্ঘদিন ধরে ইউক্রেইনকে গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করে আসছে। এ ধরনের গোয়েন্দা তথ্য নিয়মিত কিয়েভকে লক্ষ্য নির্ধারণে সহায়তা করে।
শক্তি বৃদ্ধির যুদ্ধ
কয়েক শতাব্দী ধরে ব্ল্যাক সির ভূ-রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক প্রভাব প্রসারিত করা রাশিয়ার প্রচেষ্টার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। এর ফলে অটোমান সাম্রাজ্যের সঙ্গে একাধিক যুদ্ধসহ অন্যান্য বিশ্বশক্তির সঙ্গে সংঘর্ষ হয়।
প্রাচীন সময় থেকেই ব্ল্যাক সির তীরবর্তী বন্দরগুলো সারা বছর ধরে বাণিজ্যকে সহজতর করেছিল। ভূ-রাজনৈতিক ক্রসরোড এই স্থানটি রাশিয়াকে বিভিন্ন সময় ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য এবং এর বাইরেও রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শনের সুযোগ করে দিয়েছে।
কয়েক বছর ধরে পুতিন ব্ল্যাক সির চারপাশে মস্কোর প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা করেছেন। তিনি সমুদ্রতীরবর্তী বন্দর এবং অবকাশকালীন শহরের উন্নয়নে সরকারি অর্থ ঢালছেন এবং মস্কোর দক্ষিণ নৌবহরের জন্য এ অঞ্চলে নৌ স্থাপনাগুলোতে রাশিয়ার সামরিক শক্তি গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন।
নেইটোর কাছে সমুদ্রও সমান গুরুত্বপূর্ণ। এদিকে পুতিন জোর দিয়ে বলেছেন, নেইটো জোট রাশিয়াকে ধ্বংসের চেষ্টা করছে। ব্ল্যাক সির সীমানায় রয়েছে চারটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দরসহ নেইটোর তিনটি সদস্য দেশ তুর্কিয়ে, রোমানিয়া এবং বুলগেরিয়া। এর সঙ্গে নেইটোর পাঁচটি অংশীদার দেশ আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, জর্জিয়া, মলদোভা এবং ইউক্রেইন রয়েছে।
ব্ল্যাক সির উপর নিয়ন্ত্রণ সুস্পষ্টভাবে রাশিয়ার জন্য যুদ্ধের একটি লক্ষ্য। ২০১৪ সালে রাশিয়া সমুদ্রের উত্তর উপকূলের একটি বড় উপদ্বীপ ক্রিমিয়াকে ইউক্রেইন থেকে দখল করে নেয়।
রাশিয়ান বাহিনী গত বছর পূর্ণমাত্রায় আক্রমণ শুরুর কয়েক ঘণ্টা পরে একটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে, যা মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের পতাকাবাহী বাণিজ্যিক জাহাজ ইয়াসা জুপিটারকে আঘাত করে। উপকূলের বিভিন্ন ইউক্রেইন বন্দরে হামলার সময় রাশিয়া আরও কমপক্ষে দুটি বেসামরিক জাহাজ আঘাত হেনেছে।
এরপর থেকে মস্কো ইউক্রেইনের তিনটি প্রধান বন্দর দখল করে রেখেছে। এটি ব্যাপকভাবে জলসীমা নিয়ন্ত্রণ করছে, যা ইউক্রেইনের নৌবাহিনীকে নিষ্ক্রিয় করেছে এবং ইউক্রেইনের নিয়ন্ত্রিত সমস্ত বন্দরে বেসামরিক জাহাজ চলাচলে কার্যত অবরোধ আরোপ করেছে।
নেইটো এবং এর সদস্য রাষ্ট্রগুলো নেইটো অঞ্চল, আঞ্চলিক জলসীমা এবং ব্ল্যাক সির উপর আন্তর্জাতিক জলসীমায় বিমানের মাধ্যমে নজরদারি এবং এয়ার পুলিশিং মিশন পরিচালনা করলেও যুদ্ধক্ষেত্রে প্রবেশ না করার বিষয়ে সতর্ক রয়েছে।
এই যুদ্ধের সময় রাশিয়া এবং অ্যামেরিকান সামরিক বাহিনীর মধ্যে একমাত্র সরাসরি সংঘর্ষ হয়েছিল মার্চ মাসে। তখন একটি রাশিয়ান যুদ্ধবিমান অ্যামেরিকান নজরদারি ড্রোনকে আঘাত করেছিল। ফলে এর অপারেটররা এটিকে আন্তর্জাতিক জলসীমায় নামিয়ে এনেছিল।
নেইটো-ইউক্রেইন কাউন্সিলের দ্বিতীয় বৈঠকের পরে ২৬ জুলাই জোটটি ঘোষণা করেছে, সম্প্রতি নেইটো এ ধরনের নজরদারি ফ্লাইট এবং এয়ার পুলিশিংয়ের সংখ্যা বাড়িয়েছে।
ইউক্রেইন এবং কিছু শিপিং শিল্পের নেতারা পশ্চিমা মিত্রদের রাশিয়ার হুমকি উপেক্ষা করে ইউক্রেইনের বন্দরগুলো থেকে শস্য বহনে ইচ্ছুক জাহাজকে নৌ সুরক্ষা দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে এতে অসংখ্য সমস্যা রয়েছে।
প্রথমত, তুর্কিয়ে তার নেইটো মিত্রদের ব্ল্যাক সিতে রাশিয়ার সঙ্গে উত্তেজনা বৃদ্ধি থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করছে। তুর্কিয়ের সাবেক কূটনীতিক ও তুর্কি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইডিএএম-এর পরিচালক সিনান উলগেন বলেন, আশা ম্লান হয়ে গেলেও তুর্কিয়ে পুতিনকে শস্য চুক্তিতে ফিরিয়ে আনার জন্য চেষ্টা করছে।
উলগেন বলেন, ‘ব্ল্যাক সিতে নেইটোর যেকোনো মিশনের প্রতি তুর্কিয়ে খুবই বিরূপ মনোভাব পোষণ করে আসছে এবং মনে করে সেখানে নেইটোর উপস্থিতি রাশিয়ার সঙ্গে সংঘাতের ঝুঁকি বাড়াবে।’
রাশিয়ার আগ্রাসনের পর থেকে তুর্কিয়ে ১৯৩৬ সালের একটি কনভেনশনের অধীনে বসফরাস এবং দারদানেলেস প্রণালীর মধ্য দিয়ে ব্ল্যাক সির অভ্যন্তরে এবং বাইরে চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে রাশিয়ান এবং ইউক্রেইনের যুদ্ধজাহাজগুলিকে প্রণালী ব্যবহার থেকে নিষিদ্ধ করেছে। তাদের এ সিদ্ধান্ত ইউক্রেইন এবং নেইটো দ্বারা প্রশংসিত হয়েছে।
তুর্কিয়ে তার মিত্রদেরও তাদের যুদ্ধজাহাজ পাঠাতে না করেছে।
উলগেন বলেন, ‘অ্যামেরিকা ও তুর্কিয়ে ব্ল্যাক সিকে কীভাবে দেখছে এবং নেইটোর নিরাপত্তা ছাতার মধ্যে কীভাবে এটিকে তৈরি করছে তা নিয়ে এখানে অন্তর্নিহিত উত্তেজনা রয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তুর্কিয়ে রাশিয়ার যুদ্ধজাহাজের জন্য প্রণালী বন্ধ করে দেয়ার পর থেকে অ্যামেরিকা তুর্কিয়েকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করেনি।’
নতুন ড্রোন বহর
ইউক্রেইন পানির উপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী নয়, তবে কয়েক মাস ধরে এটি রাশিয়ার শক্তিশালী নৌবাহিনীকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য হুমকি তৈরির কাজ বন্ধ করেনি।
ইউক্রেইন অক্টোবরে রাশিয়ার নৌবহরে হামলা চালানোর জন্য সামুদ্রিক ড্রোন ব্যবহার করেছিল। সে সময়, এটি তার অস্ত্রাগারের একটি ধারাবাহিক এবং কার্যকর অংশ হয়ে উঠবে কিনা তা অস্পষ্ট ছিল। কিন্তু গত সপ্তাহে রাশিয়ার দুটি জাহাজে আঘাত হানে সামুদ্রিক ড্রোনগুলো।
ইউক্রেইনের নৌ-কমান্ডার অ্যাডমিরাল নিজপাপা অ্যামেরিকা নেভাল ইন্সটিটিউটের উদ্দেশে লিখেছেন, “আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি ‘গণ ও ক্ষমতার’ সোভিয়েত নীতির পরিবর্তে ‘গুণগত মান’ এবং ‘প্রয়োজনীয় সক্ষমতার’ পশ্চিমা নীতিতে প্রতিস্থাপিত করার প্রয়োজনীয়তার উপর ভিত্তি করে তৈরি।”
ওয়াশিংটনে নিউ অ্যামেরিকা থিংক ট্যাঙ্কের একবিংশ শতাব্দীর যুদ্ধ বিশেষজ্ঞ পি ডব্লিউ সিঙ্গার বলেন, ‘ইউক্রেইন তার নতুন প্রজন্মের সমুদ্র ড্রোন বহরের উন্নতি থেকে উপকৃত হচ্ছে।’
ড্রোন বোটগুলো এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে বড়, দ্রুতগতির, স্টিলথিয়ার সি-ক্রাফটে পরিণত হয়েছে, যা বেশি পরিমাণ বিস্ফোরক বহন করতে পারে।
ড্রোনটির নির্মাতারা বলছেন, এটি নজরদারি থেকে শুরু করে যুদ্ধ পর্যন্ত বিভিন্ন মিশনের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এটি ঘণ্টায় প্রায় ৪৮ মাইল গতিতে ছুটতে পারে এবং ৪৫০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত পরিসীমা রয়েছে। ইউক্রেইনের ব্ল্যাক সির ওডেসা বন্দর থেকে ছোড়া একটি ড্রোন নভোরোসিস্কে পৌঁছাতে পারে। এমনই একটি ড্রোন শুক্রবার ইউক্রেইন থেকে পাঠানো হয়েছিল। যদিও ড্রোনটি কীভাবে বা কোথা থেকে পরিচালিত হয়েছিল তা জানা যায়নি।
সিঙ্গার বলেন, ড্রোন নির্মাণে ইউক্রেইনের দ্রুত অগ্রগতি ‘প্রায় সিলিকন ভ্যালির মতো’।
অর্থনৈতিক প্রভাব
রাশিয়ার এ আগ্রাসন পাশ্চাত্যে ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে, এটি তেলের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে যা বিশ্ব অর্থনীতিকে ধাক্কা দিতে পারে।
বিশ্বব্যাপী তেল ও তেল পণ্যগুলোর তিন শতাংশেরও বেশি ব্ল্যাক সির মধ্য দিয়ে চলাচল করে। ঐতিহাসিকভাবে, প্রায় ৭৫০০০০ ব্যারেল রাশিয়ান অপরিশোধিত তেল বা এর অপরিশোধিত রফতানির ২০ শতাংশ ব্ল্যাক সি থেকে ছেড়ে যায়। অবশ্য দেশটি ট্যাঙ্কার ট্র্যাকার সংস্থাগুলোর মতে, এ ধরনের চালানগুলো প্রতিদিন ৪০০০০০০ থেকে ৮৫৭৫০০০ ব্যারেলের মধ্যে নেমে এসেছে, কারণ রাশিয়া তার উৎপাদনকারী অংশীদার সৌদি আরবের সঙ্গে দাম সমন্বয় করতে চেয়েছিল।
ইউক্রেইনের কর্মকর্তারা স্পষ্ট করে বলেছেন, তাদের আশা রাশিয়ার বন্দরগুলোতে যুদ্ধ প্রসারিত করে তারা মস্কোকে কিছুটা অর্থনৈতিক যন্ত্রণা দিতে পারবে।
ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্টের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা মাইখাইলো পোদোলিয়াক বলেছেন, ক্রেমলিন যতক্ষণ আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলতে অস্বীকৃতি জানাবে, ততদিন তারা ‘রাশিয়ার বাণিজ্যিক সম্ভাবনায় তীব্র ক্ষতি’র আশা করতে পারে।
এত কিছুর মধ্যেও রাশিয়া একটি স্থিতিস্থাপক তেল সরবরাহকারী হিসাবে প্রমাণিত হয়েছে।
ইউক্রেইন আক্রমণের পর প্রধান তেল ব্যবসায়ী এবং প্রধান আন্তর্জাতিক তেল সংস্থাগুলো রাশিয়ার তেল বিক্রিতে অস্বীকার করার পরে, ইউনাইটেড আরব আমিরাত, গ্রিস এবং হংকংভিত্তিক নতুন অন্তর্ভুক্ত ট্রেডিং ফার্ম এবং শিপিং সংস্থাগুলো শিথিলতা মেনে চলছে।
অ্যামেরিকান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক কর্মকর্তা ডেভিড গোল্ডউইন বলেছেন, ব্ল্যাক সি থেকে রুশ রফতানি বিঘ্নিত হলে তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ১০ থেকে ১৫ ডলার বাড়তে পারে।
ইউক্রেইন রাশিয়ার ট্যাঙ্কারে আঘাত হানার পরে তেলের দাম এখন ব্যারেল প্রতি প্রায় ৮৫ ডলারে দাঁড়িয়েছে।
এনার্জি সিকিউরিটি অ্যানালাইসিস নামের একটি কনসাল্টিং ফার্মের প্রেসিডেন্ট সারাহ এমারসন বলেন, ‘ইউক্রেইনের লোকজন বারবার এটা করতে পারবে কি না সেটাই এখন প্রশ্ন। এটি জ্বালানি বাজারকে আরও জটিল করবে, যা ইতোমধ্যে কঠিন হয়েছে।’