ইউরোপের নৈতিক অবক্ষয়ের প্রতীক কোরআন অবমাননা

জোরাম ভ্যান ক্ল্যাভারেন

জুলাই ১৭ ২০২৩, ১৫:০০

নেদারল্যান্ডসে ডানপন্থিদের ইসলামবিরোধী অবস্থান। ছবি: সংগৃহীত

নেদারল্যান্ডসে ডানপন্থিদের ইসলামবিরোধী অবস্থান। ছবি: সংগৃহীত

  • 0

‘তোমাদের মধ্যে তারাই উত্তম, যাদের চরিত্র উত্তম’: হযরত মুহাম্মদ (সা.)।

বেদনাদায়ক, আঘাতমূলক এবং অপমানজনক। এই শব্দগুলো ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে সুইডেন ও নেদারল্যান্ডসে কোরআন পুড়িয়ে অবমাননার ঘটনাকে আর কীভাবে ব্যাখ্যা করা যায়।

ইসলামের পবিত্রতম গ্রন্থ কোরআনের অবমাননা করে মুসলমানদের মনে আঘাত দিয়ে ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য কিছু রাজনীতিক এবং অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিরা একে খেলায় পরিণত করেছেন বলেই আপাতত মনে হচ্ছে। বিকৃত মস্তিষ্ক ও অসামাজিক ব্যক্তিরা সবসময় সব দেশেই রয়েছে এবং তা নতুন কিছু নয়।

তবে নতুন ব্যাপার হচ্ছে একজনের কাছে যা প্রিয়, যা সে বিশ্বাস করে তাকে অন্য আরেক দল অবমাননা করছে এবং এটি সরকারের অনুমোদনেই ঘটছে।

সাম্প্রতিক সময়ে মত প্রকাশের স্বাধীনতার ছদ্মবেশে ইউরোপের কিছু দেশ সবকিছুর অনুমোদন দিচ্ছে। মত প্রকাশের স্বাধীনতার সম্পূর্ণ একতরফা ব্যাখ্যাকে পবিত্র হিসেবে এসব দেশে ঘোষণা করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।

সেই প্রেক্ষাপটে আমরা দেখতে পাচ্ছি, অতিরিক্ত পুলিশের নিরাপত্তায় মসজিদের কোণে উসকানিমূলকভাবে কোরআন পোড়ানো ও ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে।

যেসব দেশে কোরআন পোড়ানোর অনুমতি রয়েছে সেসব দেশের ফৌজদারি আইনের দিকে তাকালেই বোঝা যায় বিষয়টি ঐতিহাসিকভাবে তাদের নীতিতে নেই।

কোনো ব্যাক্তিকে অপমান করা, কোনো গোষ্ঠীকে অপমান করা এবং রাষ্ট্রদ্রোহ সবই শাস্তিযোগ্য অপরাধ এসব দেশে। সামরিক ও পুলিশ কর্মকর্তাদের অপমান করাও অনুমোদিত নয়। রাজাকে অপমান করলে নেদারল্যান্ডসে চার মাসের জেলও হতে পারে। এছাড়া ২০১৪ সাল পর্যন্ত ধর্ম অবমাননাও একটি ফৌজদারি অপরাধ ছিল সেখানে।

এ ধরনের মত প্রকাশের স্বাধীনতার কাঠামোগুলো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় এর সীমাবদ্ধতা রয়েছে এবং একটি সমাজ হিসাবে আমরা সবসময় কিছু নিয়ম নীতি দেখতে চেয়েছি।

দুর্ভাগ্যের সঙ্গে আজ বলতে হচ্ছে কোরআন পোড়ানোর মতো গর্হিত অপরাধও মত প্রকাশের স্বাধীনতার মধ্যে পড়ছে এবং এর সঙ্গে পাশ্চাত্যে চলমান তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষতার সম্পর্ক রয়েছে।

ইউরোপের অনেক দেশে ১৯৭০-এর দশক থেকে ধর্মের প্রভাব দ্রুত হ্রাস পেয়েছে। যেখানে কয়েক শতাব্দী ধরে ইউরোপে ধর্ম ছিল ব্যক্তিগত জীবন, শিক্ষা, রাজনীতি, আইন, মিডিয়া ও সংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দু- সেখানে গত কয়েক দশক ধরে এটি আর দৃশ্যমান নেই।

ইউরোপে সম্পূর্ণ একটি প্রজন্ম ধর্ম বিশ্বাসের কোনো জ্ঞান ছাড়াই এবং ধর্মের নিয়ম ও মূল্যবোধ ছাড়াই বেড়ে উঠছে। দৈনন্দিন জীবনে ধর্ম বিশ্বাসের স্থানটি উধাও হয়ে গেছে। পরিবার, সম্প্রদায়ের চেতনা এবং রক্ষণশীল নৈতিকতার গুরুত্ব আর স্বীকৃত নয় সেসব দেশে।

এর প্রভাবে নেদারল্যান্ডসে অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি অতিব্যক্তিবাদ, যৌনবৃত্তি স্বাভাবিক করা, ব্যাপক মাদকদ্রব্যের ব্যবহার, গুরুতর অসুস্থতা ছাড়াই স্বেচ্ছামৃত্যুর ইচ্ছা বৃদ্ধি, সমাজের যৌনতা, একাকীত্ব এবং উদ্দেশ্যহীন চলাফেরা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে।

এক কথায় বলা যায়, পাশ্চাত্যে নৈতিকতার দিকনির্দেশনা হারিয়ে গেছে।

আর এই নৈতিক ও ধর্মীয় দিকনির্দেশনা হারিয়ে যাওয়ার পর ধর্মীয় অনুভূতির সঙ্গে বোঝাপড়াও এখন আর নেই।

এ কারণেই মানুষ মনে করে তারা অন্যান্য জিনিসের মতো কোরআনকে অবমাননা করতে পারে। এখন সচেতনতা এবং সহানুভূতি ছাড়া সামাজিক আচরণ আশা করা বোকামি।

আজকাল ধর্মনিরপেক্ষ-উদার সংস্কৃতি প্রাশ্চাত্যে সুপরিচিত হয়ে উঠেছে। হাস্যকরভাবে তা কেবল তাদের তথাকথিত উদার দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রশ্রয় দিতে এবং গ্রহণ করতে পারে।

অপরদিকে যখনই কেউ ইসলামের সমালোচনা করে, মুসলমানদের উপহাস করে বা কোরআন পোড়ায় তখনই সে বাকস্বাধীনতার পক্ষের একজন সাহসী যোদ্ধা হয়ে ওঠে। এ থেকে বোঝা যায় ইউরোপের বেশির ভাগ অংশই সম্পূর্ণ পথভ্রষ্ট হয়ে গেছে।

কোরআন পোড়ানো যদি কিছু চোখে আঙুল দিয়ে দেখায় তাহলে সেটি হচ্ছে পাশ্চাত্যের নৈতিক অবক্ষয়ের চিত্র।

[জোরাম ভ্যান ক্ল্যাভারেন ডাচ পার্লামেন্টের সাবেব সদস্য। আগে তিনি ছিলেন একজন ইসলাম সমালোচক। তবে ইসলামবিরোধী বই লেখার সময় তার হৃদয়ে পরিবর্তন ঘটে এবং তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি নেদারল্যান্ডসের প্রথম ইসলামিক জাদুঘর ইসলাম এক্সপেরিয়েন্স সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা।]


0 মন্তব্য

মন্তব্য করুন