জিনপিং-ব্লিনকেন বৈঠক: ‘ওয়ান চায়না’ পলিসিতে অ্যামেরিকার সমর্থন
টিবিএন ডেস্ক
জুন ১৯ ২০২৩, ২১:১২
- 0
বিশ্বের দুই পরাশক্তির মধ্যেকার টালমাটাল সম্পর্ক পুনরুদ্ধারে চায়নায় বৈঠক করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও অ্যামেরিকার সেক্রেটারি অফ স্টেইট অ্যান্টনি জে ব্লিনকেন। ৩৫ মিনিটের বৈঠক শেষে দুজন জানিয়েছেন, সম্পর্ক স্থিতিশীল করার উদ্যোগ নিতে তারা প্রস্তুত।
অ্যামেরিকা ‘ওয়ান চায়না’ পলিসির পক্ষে জানিয়ে ব্লিনকেন বলেছেন, ওয়াশিংটন তাইওয়ানের স্বাধীনতা সমর্থন করে না। তবে তাইওয়ান প্রণালীতে চায়নার উসকানিমূলক পদক্ষেপের বিষয়ে অ্যামেরিকার উদ্বেগ রয়েছে।
চায়নার রাজধানী বেইজিংয়ে গ্রিন হল অফ দ্য পিপলে সোমবার এই দুই নেতার বৈঠক হয়।
এরপর প্রেসিডেন্ট জিনপিং রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে জানান, সেক্রেটারি অফ স্টেইটের সঙ্গে এর আগে চায়নার দুই শীর্ষ কূটনীতিকের আলোচনায় তিনি বেশ আনন্দিত। ওই আলোচনায় দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা কর্মসূচি শুরুর বিষয়ে দুই পক্ষ একমত হয়েছে।
চায়নার প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘চায়নার প্রতিনিধিরা আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। গত বছর বালিতে আমার ও প্রেসিডেন্ট বাইডেনের মধ্যে সমঝোতার বিষয়ে কথা হয়েছিল। এবারের বৈঠকে দুই পক্ষই বিষয়টি নিয়ে এগুতে রাজি হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আলোচনায় বেশ অগ্রগতি হয়েছে এবং কিছু ইস্যুতে দুই পক্ষ একমতও হয়েছে… এটি বেশ ভালো।’
তবে ইস্যুগুলো নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি তিনি।
ব্লিনকেনের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘পারস্পারিক শ্রদ্ধা ও আন্তরিকতা বজায় রেখে দুই দেশের মধ্যে মিথস্ক্রিয়া হওয়া উচিত… আমি আশা করছি, এই সফর শেষে চায়না-অ্যামেরিকার সম্পর্ক স্থিতিশীল করায় আপনি ইতিবাচক ভূমিকা রাখবেন।’
ইউএস সেক্রেটারি অফ স্টেইটের সঙ্গে জিনপিংয়ের বৈঠকে পর একটি বিবৃতি দেয় চায়নার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
তাতে বলা হয়েছে, চায়না-ইউএস সম্পর্কের জটিল সময়ে ব্লিনকেন এই সফরে এলেন। এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে দুই দেশ সংলাপ চায় নাকি সংঘর্ষ চায়, সহযোগিতা না সংঘাত চায়।
দুই দেশের মধ্যে শীতল যুদ্ধে অ্যামেরিকার দায় রয়েছে জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘চায়নার বিষয়ে অ্যামেরিকান পক্ষের ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। এর জন্যই চায়নার বিষয়ে ভুল কিছু নীতি নিয়েছে দেশটি।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, ‘চায়না-অ্যামেরিকার সম্পর্কের অবনতি ঠেকানোর এবং এটিকে সুস্থ ও স্থিতিশীল দিকে পরিচালিত করার দায়িত্ব ছিল অ্যামেরিকার।’
ব্লিনকেনের সঙ্গে এর আগে সোমবার চায়নার শীর্ষ কূটনীতিক ওয়েং উইয়ের বৈঠক হয়। সে প্রসঙ্গে বিবৃতিতে বলা হয়, “বৈঠকে ওয়েং জানিয়েছেন যে অ্যামেরিকাকে ‘চায়নার হুমকির তত্ত্বের’ প্রচারণা বন্ধ করতে হবে, চায়নার ওপর অবৈধ একতরফা নিষেধাজ্ঞাগুলো প্রত্যাহার করতে হবে। চায়নার প্রযুক্তিগত উন্নয়নকে দমন করা যাবে না এবং এই দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে স্বেচ্ছাচারী হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকতে হবে বলেও দাবি করেছেন ওয়েং।”
চাইনিজ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে জানাতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন অ্যামেরিকান সেক্রেটারি অফ স্টেইট ব্লিনকেন।
তিনি বলেন, ‘সম্পর্ক ধরে রাখার ব্যবস্থাপনা করায় অ্যামেরিকা ও চায়নার দায়-দায়িত্ব আছে… অ্যামেরিকা এই দায়িত্ব পালনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অ্যামেরিকার স্বার্থে, চায়নার স্বার্থে ও গোটা বিশ্বের স্বার্থে এই সম্পর্ক ধরে রাখতে হবে।’
দুই দেশের সম্পর্কে অস্থিতিশীলতার পর্যায়ে পৌঁছেছিল জানিয়ে ব্লিনকেন বলেছেন, দুই পক্ষই সেটি স্থিতিশীল করার গুরুত্ব সম্পর্কে অবগত। ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটাতে দুই দেশের মধ্যেকার যোগাযোগ আরও উন্নত করা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, ‘আমি বেইজিং এসেছে দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ের যোগাযোগের চ্যানেল মজবুত করার লক্ষ্য নিয়ে। দুই দেশের মধ্যে যেসব বিষয়ে দ্বিমত রয়েছে, সেসব নিয়ে আমাদের অবস্থান ও উদ্দেশ্য পরিষ্কার করতে এসেছি।
‘আমরা নিজ স্বার্থে একজোট হয়ে কাজ করতে পারি এমন জায়গাগুলো খুঁজতে এসেছি। বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এক কাতারে দাঁড়াতে এসেছি। এসব কিছু নিয়েই আলোচনা হয়েছে।’
আগামী কয়েক সপ্তাহে আরও কয়েকজন শীর্ষ অ্যামেরিকান কর্মকর্তা চায়না যাবেন। সেদেশ থেকেও শীর্ষ কর্মকর্তারা অ্যামেরিকায় যাবেন।
ব্লিনকেন বলেন, ‘অগ্রগতি সহজ বিষয় নয়। একটি সফরে তা অর্জন করা যায় না।’
চায়নার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাতে রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধ, নর্থ কোরিয়া ও তাইওয়ান ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে বলে জানান সেক্রেটারি অফ স্টেইট।
তাইওয়ান ইস্যুতে অ্যামেরিকার অবস্থান আগের মতোই রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “অ্যামেরিকা এখনও ‘ওয়ান চায়না পলিসির’ পক্ষে… আমরা তাইওয়ানের স্বাধীনতা সমর্থন করি না।’
তবে তাইওয়ান প্রণালীতে চায়নার উসকানিমূলক পদক্ষেপের বিষয়ে অ্যামেরিকার উদ্বেগের বিষয়ে জিনপিংকে অবগত করেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
ব্লিনকেন বলেছেন, রাশিয়াকে কোনো ধরনের প্রাণঘাতী সহায়তা দেবে না বলে অ্যামেরিকা ও অন্যান্য রাষ্ট্রকে আশ্বস্ত করেছিল চায়না। এই প্রতিশ্রুতি চায়না লঙ্ঘন করেনি।
তিনি বলেন, ‘তবে চায়নার প্রযুক্তি ফার্মগুলো নিয়ে আমাদের কিছু শঙ্কা আছে। কিছু ফার্ম সম্ভবত রাশিয়াকে এমন প্রযুক্তি সরবরাহ করছে যেগুলো ইউক্রেইনে হামলার কাজে ব্যবহার হতে পারে। এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে চায়নার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি।’
এর আগে চায়নার শীর্ষ দুই কূটনীতিকের সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়ে ব্লিনকেন জানান, তাদের সঙ্গে বেশ খোলামেলা ও গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে।
জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ইউএস সরকারের সর্বোচ্চ পদমর্যাদার কোনো কর্মকর্তা হিসেবে চায়না সফর করছেন ব্লিনকেন। প্রায় পাঁচ বছর পর অ্যামেরিকান কোনো কূটনীতিক হিসেবেও চায়না সফর করলেন তিনি।
বহুল আলোচিত এ সফর হওয়ার কথা ছিল পাঁচ মাস আগে। কিন্তু অ্যামেরিকার আকাশে একটি সন্দেহভাজন চাইনিজ গুপ্তচর বেলুন ওড়ার পর তা স্থগিত হয়।