টাইটানিকে প্রয়াত দম্পতির স্বজন নিখোঁজ টাইটানে

টিবিএন ডেস্ক

জুন ২২ ২০২৩, ১৪:০৬

টাইটানিক যাত্রী আইসিডর ও আইডা স্ট্রাউস (বাঁয়ে) এবং টাইটানের প্রধান স্টকটন ও ওয়েন্ডি রাশ। ছবি কোলাজ: টিবিএন

টাইটানিক যাত্রী আইসিডর ও আইডা স্ট্রাউস (বাঁয়ে) এবং টাইটানের প্রধান স্টকটন ও ওয়েন্ডি রাশ। ছবি কোলাজ: টিবিএন

  • 0

টাইটানিক সিনেমার সেই দৃশ্য নিশ্চয়ই মনে আছে, যেখানে জাহাজটি ডোবার আগে বিপদ টের পেয়েও বের হননি প্রবীণ দম্পতি। একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে বিছানায় শুয়ে মৃত্যুর অপেক্ষায় ছিলেন। প্রায় কাছাকাছি একটি ঘটনা কিন্তু বাস্তবের টাইটানিকেও ঘটেছিল। এক দম্পতি সত্যিই একে অন্যকে আকড়ে ধরে থেকে গিয়েছিলেন জাহাজটিতে। এবার এত দিন বাদে তাদেরই এক উত্তরসূরীর স্বামী টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে গিয়ে অ্যাটলান্টিকেই নিখোঁজ হয়েছেন।

সেই ব্যক্তিটি হলেন নিখোঁজ সাবমেরিন টাইটানের চালক ও ওশানগেট কোম্পানির প্রধান নির্বাহী স্টকটন রাশ। তার স্ত্রী ওয়েন্ডি রাশ ওশানগেটের কমিউনিকেশন অফিসার। আর ওয়েন্ডির গ্রেট গ্রেট গ্র্যান্ডপ্যারেন্টস হলেন টাইটানিক সিনেমার সেই প্রবীণ যুগল, বাস্তবে যাদের নাম আইসিডর স্ট্রাউস ও আইডা স্ট্রাউস।

আইসিডর ও আইডা দম্পতি ছিলেন টাইটানিকের ফার্স্ট ক্লাসের যাত্রী। তাদের জন্ম জার্মানিতে হলেও বিয়ের পর সপরিবারে অ্যামেরিকায় চলে আসেন।

অ্যামেরিকার মেসিস ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের সহ-প্রতিষ্ঠাতা আইসিডর ও তার ভাই নাথান। ১৯১২ সালে টাইটানিকের মেইডেন যাত্রায় আইসিডর ও তার স্ত্রী ছিলেন ধনী যাত্রীদের মধ্যে অন্যতম।

জাহাজটি ডুবে যাওয়ার পর বেঁচে ফেরা বেশ কয়েক যাত্রী দাবি করেছিলেন, তারা এই দম্পতিকে শেষবার দেখেছিলেন। তাদের বরাতে জানা যায়, জাহাজ ডোবার আগে যাত্রীদের লাইফবোটে তোলার চেষ্টা চলছিল। তবে সীমিত সংখ্যক লাইফবোট থাকায় সবাইকে তাতে তোলা সম্ভব ছিল না। এর মধ্যে নারী ও শিশুদেরই প্রাধান্য দেয়া হচ্ছিল। আইসিডরকে লাইফবোটে উঠতে বলা হয়েছিল। তবে সব নারী ও শিশু যাত্রীকে তাতে চড়তে সুযোগ দেয়ার জন্য তিনি সরে দাঁড়িয়েছিলেন। তা দেখে তার স্ত্রী আইডাও সরে দাঁড়ান, স্বামীকে ডুবন্ত জাহাজে রেখে তিনি যেতে চাননি।

লাইফবোটে থাকা যাত্রীরা দেখেন, টাইটানিক যখন ডুবছে, তখন এই দুজন আলিঙ্গন করে ডেকেই রয়ে গিয়েছিলেন।


পরবর্তীতে উদ্ধার অভিযানে আইসিডরের মরদেহ পাওয়া যায়। আইডার দেহাবশেষ মিলিয়ে যায় সমুদ্রে। ১৯১২ সালের এপ্রিলের ওই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন টাইটানিকের প্রায় ১৫ হাজার আরোহী।

এই স্ট্রাউস দম্পতির গ্রেট গ্রেট গ্র্যান্ডডটার ওয়েন্ডি ১৯৮৬ সালে বিয়ে করেন বিমানচালক স্টকটন রাশকে। টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ ঘুরে দেখার জন্য তারাই তৈরি করেন সাবমেরিন টাইটান এবং ২০০৯ সালে চালু করে তাদের প্রতিষ্ঠান- ওশানগেট এক্সপেডিশনস।

বিভিন্ন সময় যাত্রীদের টাইটানিক দেখাতে নিয়ে যেত সাবমেরিনটি। সবশেষ যাত্রায় পাকিস্তানি ধনাঢ্য ব্যক্তি ৪৮ বছরের শাহজাদা দাউদ ও তার ১৯ বছর বয়সী ছেলে সুলেমান, ব্রিটিশ ধনকুবের ৫৮ বছরের হামিশ হার্ডিং ও ৭৭ বছর বয়সী ফ্রেঞ্চ ডাইভার পল-হেনরি নারজিওলেটকে নিয়ে গত রোববার ক্যানাডার নিউফাউন্ডল্যান্ডের সেইন্ট জন’স থেকে যাত্রা করে টাইটান। সেটি চালাচ্ছিলেন খোদ স্টকটন।


যাত্রা শুরুর ঘণ্টাখানেক পরই সেইন্ট জন’স থেকে প্রায় ৩৭০ মাইল দক্ষিণে নিখোঁজ হয় সাবমেরিনটি। এরপর থেকে এটি খুঁজতে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে ক্যানাডিয়ান ও অ্যামেরিকান কোস্টগার্ডসহ নানা সংস্থা।

টাইটান নিখোজেঁর পর থেকে কোনো মাধ্যমে বক্তব্য দেননি ওয়েন্ডি। নিশ্চয়ই স্বামীর অপেক্ষায় আছেন, কিংবা হয়ত দু:সংবাদের জন্য প্রস্তুত করছেন নিজেকে।


0 মন্তব্য

মন্তব্য করুন