
ভার্জিন গ্যালাকটিকে মহাকাশ পর্যটনের স্বপ্নপূরণের দিন

টিবিএন ডেস্ক
আগস্ট ১০ ২০২৩, ১২:৫৬

জন গুডউইন (বাঁয়ে), কেইশা শাহাফ ও অ্যানাস্তাতিয়া মায়ার্স (ডানে)। ছবি: ভার্জিন গ্যালাকটিক
- 0
রকেট প্লেনে চড়ে মহাকাশ ভ্রমণের স্বাদ দিতে বাণিজ্যিক ফ্লাইট শুরু করছে স্যার রিচার্ড ব্র্যানসনের মহাকাশ পর্যটন সংস্থা ভার্জিন গ্যালাকটিক। গ্যালাকটিক জিরো টু ফ্লাইটে প্রথমবারের মতো অর্থের বিনিময়ে পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে ৮৫ কিলোমিটার ওপরে পোঁছাবেন তিন আরোহী। অবশ্য আরোহীদের মধ্যে দুজন লটারিতে জিতেছেন মহাকাশ যাত্রার টিকিট।
নিউ মেক্সিকো থেকে বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৮টায় মহাকাশের উদ্দেশে যাত্রা করবে ভার্জিন গ্যালাকটিকের রকেট প্লেন। রোমাঞ্চকর এই যাত্রায় ফ্লাইটের আরোহী হিসেবে থাকছেন ৮০ বছর বয়সী সাবেক ব্রিটিশ অলিম্পিয়ান জন গুডউই। তার সঙ্গী হিসেবে আছেন ক্যারিবিয়ান মা-মেয়ে কেইশা শাহাফ ও অ্যানাস্তাতিয়া মায়ার্স।
যাত্রা সফল হলে অ্যাবারডিন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ১৮ বছর বয়সী অ্যানাস্তাতিয়া মায়ার্স ও তার মা কেইশা শাহাফ হবেন মহাকাশে ভ্রমণ করা প্রথম মা-মেয়ে জুটি এবং প্রথম ক্যারিবিয়ান নাগরিক। আর জন গুডউই অলিম্পিয়ান হিসেবে প্রথম ও ‘পারকিনসন্স’ রোগে আক্রান্ত দ্বিতীয় মহাকাশ ভ্রমণকারী।
অ্যান্টিগুয়া থেকে লন্ডনে যাওয়ার সময় ২০২১ সালে শাহাফ ভার্জিন অ্যাটলান্টিকের ফ্লাইটের একটি বিজ্ঞাপন দেখে কৌতূহলবশত লটারির ফরম পূরণ করেন।
আর সৌভাগ্যবশত জিতে নেন দুটি ৪৫০ হাজার ডলার মূল্যের ভার্জিন গ্যালাকটিক জিরো টু ফ্লাইটের টিকিট। আর এর মাধ্যমে মহাকাশ ভ্রমণকারী দ্বিতীয় কম বয়সী ব্যক্তি হবেন মায়ার্স।
এই চড়া মূল্যের টিকেটের বুকিং হিসেবে ২০০৫ সালেই ২৫০ হাজার ডলার অগ্রিম দিয়েছেন গুডউই। অবশ্য মাঝে বাঁধ সাধে তার পারকিনসন্সের ডায়াগনোসিস। তিনি ভেবেছিলেন মহাকাশ দেখার সাধ হয়তো অধরাই রয়ে যাবে।
তবে রিচার্ড ব্র্যানসনের আশ্বস্ততায় নিজের শারীরিক অবস্থাকে হার মানিয়ে মহাকাশে উড়তে মরিয়া ১৯৭২ সালের এই অলিম্পিক ক্যানোয়িস্ট।
তিনি বলেন, ‘আমি প্রমাণ করতে চাই পারকিনসন্স কারও ইচ্ছাশক্তিকে হার মানাতে পারে না।’
পার্কিনসন্স রোগটি মস্তিষ্কের এমন একটি জটিল অবস্থা যেখানে এর অংশগুলো ধীরে ধীরে ক্ষয় হতে থাকে।
পারকিনসন্স’স ইউকে গুডউইয়ের অবিশ্বাস্য যাত্রার সাক্ষী হতে স্টোক-অন-ট্রেন্টের পার্টির আয়োজন করেছে। প্রায় ১০০ বৃটেইনবাসী তার যাত্রা সরাসরি উপভোগের সুযোগ পাবেন।
এর আগে গত জুনে বাণিজ্যিক মহাকাশ যাত্রার প্রথম ফ্লাইট গ্যালাকটিক জিরো-ওয়ান সফল হয়। পরীক্ষামূলক ফ্লাইটটিতে আরোহী হিসেবে ছিলেন ইটালিয়ান এয়ার ফোর্স ও ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিল অফ ইটালির তিন ক্রু।
গ্যালাকটিক জিরো টু ফ্লাইট মিশনের মাধ্যমে মহাকাশ পর্যটন কতটা সফল হতে তার প্রমাণ পাবে অ্যামেরিকান মহাকাশ কোম্পানি ভার্জিন গ্যালকটিক।
দ্বিতীয় ফ্লাইটের লঞ্চ উইন্ডো নিউ মেক্সিকোর স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৮টায়। মহাকাশের নির্দিষ্ট সীমায় পৌঁছানোর ৭০ মিনিটের মিশনে আরোহীরা কয়েক মিনিটের জন্য নিজেদের ওজনহীন অনুভব করবেন। ঠিক যেমন মহাকাশ ভ্রমণকারীরা মহাকাশযানে নিজেদের ওজনহীন অনুভব করেন।
ভার্জিন গ্যালাকটিকের ইঞ্জিনিয়াররা জানিয়েছেন, ক্যারিয়ার জেট ‘ইভ’ যাত্রার প্রথম ধাপে রকেট প্লেন ‘ইউনিটি’-কে বহন করবে। দ্বিতীয় ধাপে ইউনিটি ইঞ্জিন চালু হয়ে ২৭৯ হাজার ফুট বা ৮৫ কিলোমিটার উচ্চতায় পৌঁছাতে দ্রুত গতিতে যাত্রা করবে। তবে পৃথিবীর সম্পূর্ণ অভিকর্ষ অতিক্রমের বেগ অর্জন করতে পারবে না গ্যালাকটিকের ফ্লাইটগুলো।

ভার্জিন কোম্পানি বাণিজ্যিক মহাকাশ পর্যটনের ঘোষণার পর থেকে ইউনিটি রকেটে যাত্রার জন্য টিকিট কিনেছেন ৮শরও বেশি ব্যক্তি। তালিকার প্রথমে রয়েছেন গুডউই। ফলে রোমাঞ্চকর এই যাত্রার দ্বিতীয় ফ্লাইটেই স্বপ্ন পূরণ করতে যাচ্ছেন তিনি।
তালিকার কেউ কেউ মহাকাশ ঘুরে দেখার সুযোগের জন্য এক দশকেরও বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করছেন।
কোম্পানিটি জানিয়েছে, মিশন সফল হলে ধীরে ধীরে বুকিং তালিকার সবাই সুযোগ পাবেন।
এর আগে অ্যামেরিকান বিলিয়নিয়র ডেনিস টিটো ২০০১ সালে বিশ্বের প্রথম মহাকাশ পর্যটক হয়েছিলেন।
সম্প্রতি অ্যামাজনের চিফ এক্সিকিউটিভ জেফ বেজোসের স্পেস কোম্পানি ব্লু অরিজিন, ভার্জিন গ্যালাকটিককে পেছনে ফেলে প্রথম কোম্পানি হিসেবে মহাকাশে বাণিজ্যিকভাবে যাত্রী নেয়ার প্রতিযোগিতায় এগিয়ে গেছে।
দুই কোম্পানিই বলেছে, তাদের মিশনগুলোতে কেবল বিত্তশালীরাই অংশ নিতে পারবেন। ব্যয়বহুল এই পর্যটন খাতে আগ্রহ দেখিয়েছেন বিজ্ঞানমনস্ক বিত্তশালীরা।
ফলে মহাকাশ পর্যটনের ব্যয় ও পরিবেশগত প্রভাবের জন্য কঠোরভাবে সমালোচিতও হচ্ছেন তারা।