কবির ভাই মোহাম্মদ তারেক বলেন, কবি মোহাম্মদ রফিক বরিশালে বোনের বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলেন। রোববার রাতে সেখান থেকে থেকে ঢাকা আসার পথে রাজৈর উপজেলায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। গাড়িতে থাকা অবস্থায় তার বমি শুরু হয়। সেখানকার থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পর রাত ১০টার দিকে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

তিনি জানান, কবিকে ঢাকা আনা হবে না। তার মরদেহ বাগেরহাটে গ্রামের বাড়ি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেখানে তাকে দাফন করা হবে।

মোহাম্মদ রফিকের জন্ম ২৩ অক্টোবর ১৯৪৩ সালে বাগেরহাটে। ২০১০ সালের একুশে পদকপ্রাপ্ত এ কবি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন।

তিনি একজন মননশীল আধুনিক কবি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন ১৯৬০-এর দশকে। ১৯৬০-এর দশকের শুরুতে সমকাল, কণ্ঠস্বর, স্বাক্ষর, অচিরা ইত্যাদি পত্র-পত্রিকায় কবিতা প্রকাশের মাধ্যমে সাহিত্য জগতে প্রবেশ করেন। ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ বৈশাখী পূর্ণিমা প্রকাশিত হয়।

তার কবিতায় নৈসর্গিক আবহে লালিত আধুনিক মানস-চেতনার প্রচ্ছাপ লক্ষ্য করা যায়। কবির উল্লেখযোগ্য অন্য কাব্যগ্রন্থগুলো হলো- কীর্তিনাশা (১৯৭৯), খোলা কবিতা ও কপিলা (১৯৮৩),গাওদিয়ায় (১৯৮৬),স্বদেশী নিশ্বাস তুমিময় (১৯৮৮), মেঘে এবং কাদায় (১৯৯১), রূপকথা কিংবদন্তি (১৯৯৮),মৎস্য গন্ধ্যা (১৯৯৯), মাতি কিসকু (২০০০), বিষখালি সন্ধ্যা (২০০৩), নির্বাচিত কবিতা (২০০৩),কালাপানি (২০০৬), নির্বাচিত কবিতা (২০০৭), নোনাঝাউ (২০০৮), দোমাটির মুখ (২০০৯), ত্রয়ী (২০০৯), মোহাম্মদ রফিক রচনাবলী-১ (২০০৯), মোহাম্মদ রফিক রচনাবলী-২ (২০১০)।

কবিতার পাশাপাশি তার গদ্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ভালবাসার জীবনানন্দ (২০০৩), আত্মরক্ষার প্রতিবেদন (২০০১), স্মৃতি বিস্মৃতির অন্তরাল (২০০২)।

পাকিস্তান আমলে ষাটের দশকে ছাত্র আন্দোলন ও কবিতায় এবং স্বাধীন বাংলাদেশে আশির দশকে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে কাব্যিক রসদ যুগিয়ে তিনি বিখ্যাত হয়ে আছেন।

২০১০ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ সরকার তাকে একুশে পদকে ভূষিত করে। বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৮৭ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান মোহাম্মদ রফিক। ২০২০ সালে তিনি ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন।