হলিউড ধর্মঘটের ১০০ দিন: সমঝোতায় আসেনি কোনো পক্ষ

টিবিএন ডেস্ক

আগস্ট ৯ ২০২৩, ১৮:৫২

দাবি আদায়ে ১০০ দিন যাবত ধর্মঘটে আছেন ডব্লিউজিএ সদস্যরা। ছবি: রয়টার্স

দাবি আদায়ে ১০০ দিন যাবত ধর্মঘটে আছেন ডব্লিউজিএ সদস্যরা। ছবি: রয়টার্স

  • 0

হলিউডে চলমান লেখক ও অভিনেতাদের ধর্মঘট ১০০ তম দিন পূর্ণ করেছে বুধবার। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও এখনও কোনো সুরাহা খুঁজে পায়নি দুই বিবাদমান পক্ষ।

রাইটার্স গিল্ড অফ অ্যামেরিকা (ডব্লিউজিএ) ও হলিউডের বড় স্টুডিগুলোর মধ্যে লেখকদের ক্ষতিপূরণ, লেখকদের জনবল বৃদ্ধি ও স্ট্রিমিং থেকে প্রাপ্ত অর্থের অংশ পাওয়া নিয়ে আলোচনার অচলাবস্থা থেকে ২ মে ধর্মঘট শুরু হয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এর ব্যবহার সীমিত করার দাবিও করেন লেখকেরা।

সিনেমার বক্স অফিস কোভিডের আগের অবস্থায় ফিরে না যাওয়া, লাভের মুখ দেখতে হিমশিম খাওয়া স্ট্রিমিং সার্ভিস ও টিভি থেকে ক্রমশ কমতে থাকা আয়ের মাঝে স্টুডিও কর্তারাও পথ খোঁজার চেষ্টা করছেন
ওয়ার্নার ব্রাদার্স ডিসকভারির (ডব্লিউবিডিও) প্রধান নির্বাহী ডেভিড জ্যাসল্যাভ গত সপ্তাহে বিনিয়োগকারীদের বলেছিলেন যে এটা, ‘তাদের জন্য একেবারেই নতুন পরিস্থিতি।’

রয়টার্স তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, লেখক ধর্মঘট নির্মানাধীন সিনেমা ও ডিজিটাল কন্টেন্ট সময়মতো মুক্তির ক্ষেত্রে ব্যপক প্রভাব ফেলতে পারে বলে সতর্কবার্তা দিয়েছে কোম্পানিটি।

লেখকদের সঙ্গে একাত্মতা পোষন করে অভিনেতাদের সংগঠন স্ক্রিন অ্যাকটরস গিল্ড (এসএজি) ১৪ জুলাই থেকে ধর্মঘট শুরু করে। এর ফলে, টিভি সিরিজ ও সিনেমার নির্মানকাজ স্থবির হয়ে পড়ে। এর আগে, ১৯৬০ সালে সবশেষ লেখক ও অভিনেতাদের যৌথ ধর্মঘট দেখেছে হলিউড।

সঙ্কট কবে কাটবে সেটাও নির্দিষ্ট করে বলতে পারছে না কোনো পক্ষ। গত সপ্তাহে স্টুডিওগুলোর সংগঠন এএমপিটিপি ও ডব্লিউজিএর মধ্যে আলোচনাতেও কোনো অগ্রগতি আসেনি।

ওইদিনই দুই পক্ষের ওই আলোচনা থেকে তথ্য ফাঁস হওয়ার কথা জানিয়ে ১১ হাজার ৫০০ সদস্যকে বার্তা পাঠায় ডব্লিউজিএ।

আরও পড়ুন: হলিউড ধর্মঘট: রাস্তায় তারকারা


এএমপিটিপি ও ডব্লিউজিএ উভয় সংগঠনই এ বিষয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে কোনো মন্তব্য জানায়নি। সঙ্কট সমাধানে এএমপিটিপির পদক্ষেপের সমালোচনাও করেছেন ডব্লিউজিএর সদস্যরা।

জনপ্রিয় টিভি সিরিজ ‘শিকাগো হোপ’ এর অন্যতম লেখক ডন প্রেস্টউইচ রয়টার্সকে বলেন, ‘আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ও নতুন চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত আমরা পথেই আছি। তবে এএমপিটিপি যেমন আচরণ করছে তাতে আমরা হতাশ। তাদের উদাসীনতা একরকম চরম নিষ্ঠুরতার পর্যায়ে চলে গেছে।’

অনেকেই এ তিন মাস দীর্ঘ ধর্মঘটকে শ্রেণি বৈষম্যের সঙ্গেও তুলনা করেছেন। অনেক লেখক স্টুডিও কর্তাদের অত্যাধিক সুযোগ-সুবিধার দিকেও ইঙ্গিত করেন।

রয়টার্স বলছে, ওয়াল্ট ডিজনির প্রধান নির্বাহী বব আইগার কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করেছেন। নতুন চুক্তি অনুসারে তিনি যে বার্ষিক প্রণোদনা পাবেন সেটি তার বেতনের পাঁচ গুণ। আইগার লেখকদের দাবিকে ‘বাস্তবসম্মত নয়’ বলে মন্তব্য করেছিলেন।

ডব্লিউজিএ সদস্য ও লেখক জেমি পেরি বলেন, ‘আমরা জিততে পারব না এটা ভেবে আমি হতাশ নই। স্টুডিওগুলোর লোভ ও নিষ্ঠুরভাবে তারা যা করছে ও তারা ভুলভাবে যা করছে সেটা জানতে পেরে আমি হতাশ।’

অতীতের ধর্মঘটের মতো, এবারের ধর্মঘটেও হলিউডের সিনেমা বিতরণের নতুন পদ্ধতির আয় থেকে লেখকরা তাদের প্রাপ্য অংশ বুঝে নিতে চান।

এর আগে, ১৯৬০ সালের প্রথম ধর্মঘট হয়েছিল টেলিভিশনে পুরানো সিনেমা প্রদর্শন থেকে লেখক-অভিনেতাদের লভ্যাংশের দাবি নিয়ে। এর দুই দশক পর, ১৯৮৫ সালে, ক্রমবর্ধমান হোম ভিডিও বাজার থেকে রাজস্বের অংশের দাবিতে চাকরি ছেড়ে দেন অনেক লেখক।

সবশেষ ২০০৭-০৮ সালে ধর্মঘটের অন্যতম ইস্যু ছিল নিউ মিডিয়া থেকে গিল্ডের সুরক্ষা। যার মধ্যে ছিল চলচ্চিত্র এবং টিভি ডাউনলোডের পাশাপাশি বিজ্ঞাপন-সমর্থিত ইন্টারনেট পরিষেবার থেকে পাওয়া লভ্যাংশ।

চলমান ধর্মঘটের মূল ইস্যুগুলোর একটি হলো স্ট্রিমিং সার্ভিসগুলো থেকে লভ্যাংশ পাওয়া। একই সঙ্গে এআই প্রযুক্তির ব্যপক ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞার দাবিটিও গুরুত্ব পেয়েছে। রয়টার্স জানিয়েছে যে ডিজনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে গবেষণা করার জন্য একটি টাস্ক ফোর্স তৈরি করেছে। কীভাবে বিনোদনের নানা মাধ্যমে একে কাজে লাগানো যায় সেটা খতিয়ে দেখছে টাস্ক ফোর্সটি।

ইউনিভার্সিটি অফ সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার ইতিহাসের অধ্যাপক এ প্রসঙ্গে রয়টার্সকে বলেন, ‘মোদ্দা কথা হলো, নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে যখন আয়ের নতুন কোনো পথ উন্মুক্ত হয়, কর্মীরা সেটার ভাগ চাইবেন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিষয়ে যেটা বলা যায় তা হলো, এটা আসলে একটা এক্সিস্টেনশিয়াল ক্রাইসিস। তারা চিরতরে তাদের চাকরি হারানোর ভয়ে আছেন।’


0 মন্তব্য

মন্তব্য করুন