ভার্জিন গ্যালাকটিকে মহাকাশ ভ্রমণের স্বপ্ন পূরণ

টিবিএন ডেস্ক

আগস্ট ১০ ২০২৩, ১৬:১০

মন্ত্রমুগ্ধ গ্যালাকটিক আরোহীরা। ছবি: ভার্জিন গ্যালাকটিক

মন্ত্রমুগ্ধ গ্যালাকটিক আরোহীরা। ছবি: ভার্জিন গ্যালাকটিক

  • 0

রকেট প্লেনে চড়ে মহাকাশ ভ্রমণের স্বাদ নিয়ে সফলভাবে ভূপৃষ্ঠে ফিরলেন তিন পর্যটক নভোচারী। অ্যামেরিকার বেসরকারি মহাকাশ সংস্থা ভার্জিন গ্যালাকটিকের বাণিজ্যিক গ্যালাকটিক জিরো টু ফ্লাইটে চড়ে বৃহস্পতিবার তারা মহাকাশ দেখলেন।

ভার্জিন গ্যালাকটিকের স্পেস ফ্লাইটে মহাকাশ ঘুরে আসা এই তিন পর্যটক হলেন, জন গুডউইন এবং কেইশা শাহাফ ও তার মেয়ে অ্যানাস্তাতিয়া মায়ার্স। মা-মেয়ে শাহাফ ও মায়ার্স লটারিতে টিকিট জিতে বিনামূল্যেই মহাকাশ ভ্রমণের স্বাদ নিলেন। আর ২০০ হাজার ডলারের টিকিট কেটে ঘুরলেন জন গুডউইন।

নিউ মেক্সিকো মরুভূমির স্পেসপোর্ট অ্যামেরিকা থেকে বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৮টার দিকে পর্যটকদের নিয়ে রকেট প্লেনটি উড্ডয়ন করে। এরপর ক্যারিয়ার ইভ থেকে মহাকাশের উদ্দেশে রওনা হয় রকেট ইউনিটি।

ঘুড়ে এসে দারুণ উচ্ছ্বসিত ক্যারিবিয়ান মা-মেয়ে। শাহাফ বলেন, ‘জীবনে এর চেয়ে চমৎকার কোনো কাজ আমি করিনি… আমাদের সঙ্গে অ্যান্টিগুয়া (ক্যারিবিয়ার দ্বীপ) আজ মহাকাশ ঘুরেছে… শিশুকালের স্বপ্ন আজ সত্যি হলো। মেয়েকে নিয়ে মহাকাশ গিয়ে এলাম… পাইলট ও অন্যরা ঠিক যা বলেছিলেন, তাই দেখিয়ে আনলেন। আর যাদের মনে এখনও সংশয় আছে তাদের বলছি- পৃথিবী আসলেই গোল।’

মায়ার্স বলেন, ‘অনুভূতি প্রকাশ করার মতো কোনো শব্দ পাচ্ছি না। পুরো সময়জুড়ে কেবল মনে হচ্ছিল- ওয়াও। অভিজ্ঞতা কেমন ছিল জানতে চাইলেও এটাই বলব যে- ওয়াও।’

ক্যারিয়ার ছেড়ে দেয়ার পর রকেট ইউনিটি। ছবি: ভার্জিন গ্যালাকটিকের লাইভ ভিডিও থেকে নেয়া।

এই অভিজ্ঞতা নেয়ার জন্য ২০০৫ সালে টিকিট কেটে রেখেছিলেন গুডউইন। এরপর ২০১৪ সালে তার পারকিনসন্স রোগ শনাক্ত হয়। তারপরও দমে যাননি, মহাকাশ ঘুরেই ফেললেন। এখন টিকিটের দাম বেড়ে হয়েছে ৪৫০ হাজার ডলার।

ফ্লাইট থেকে বের হয়ে তিনি বলেন, ‘মহাকাশ থেকে দেখতে পাওয়া পৃথিবীর সৌন্দর্য আমাকে সবচেয়ে বেশি অভিভূত করেছে। একেবারেই পরাবাস্তব লেগেছে… ভার্জিন গ্যালাকটিককে অনেক ধন্যবাদ। প্রায় ২০ বছর অপেক্ষা করেছি এদিনের জন্য।’

মহাকাশযানটির পাইলট ছিলেন সিজে স্টারকো ও কেলি ল্যাটিমার। রকেটের কেবিনের পর্যটকদের সাহায্য ও তদারকির জন্য ছিলেন ভার্জিন গ্যালাকটিকের চিফ অ্যাসট্রনট ট্রেইনার বেথ মোসেস।

অ্যামেরিকার মহাকাশের সীমানা হিসেবে স্বীকৃত অন্তত ৮০ কিলোমিটার উচ্চতা ছাড়িয়ে যায় ফ্লাইট। ক্যারিয়ার থেকে রকেটটি ছাড়ার পর ভূমি থেকে রকেটের ইঞ্জিন চলতে দেখে উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পরে আরোহীদের পরিবার ও বন্ধুদের মধ্যে। রকেটটি ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৮৮ কিলোমিটার উচ্চতায় উঠেছে।

ভেতরে থাকা আরোহীরা কয়েক মিনিটের জন্য নিজেদের ওজনহীন অনুভব করেছেন। কেবিনের জানালা দিয়ে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে উপভোগ করেছেন মহাকাশের রোমাঞ্চকর সৌন্দর্য।

রকেট কেবিনে আরোহীরা।

উড্ডয়ন শেষ করে এক ঘণ্টা পর স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৯টায় মহাকাশযানটি গ্লাইডারের মতো বাতাসে ভেসে স্পেসপোর্ট অ্যামেরিকায় ফিরে আসে।

গ্যালাকটিক জিরো টু ফ্লাইট, ২০১৮ সালের পর ভার্জিন গ্যালাকটিকের সপ্তম মহাকাশ ভ্রমণ। তবে অর্থের বিনিময়ে মহাকাশে পর্যটক নিয়ে এটিই প্রথম ফ্লাইট।

ভার্জিন গ্যালাকটিকে চড়ে মহাকাশ ছুঁয়ে দেখতে এখন ওয়েটিং লিস্টে রয়েছেন আটশরও বেশি মানুষ। কোম্পানির ওয়েবসাইট বলছে, পর্যটক নিয়ে পরবর্তী ফ্লাইটটি যাত্রা করবে সেপ্টেম্বরে।

সফল এই যাত্রার মাধ্যমে অ্যামাজনের জেফ বেজোসের ব্লু অরিজিন ও ইলন মাস্কের স্পেসএক্সের সঙ্গে স্পেস ট্যুরিজম ব্যবসায় নাম লেখালেন রিচার্ড ব্র্যানসনের কোম্পানিটি। খুব শিগগিরি তাদের স্পেস রকেট প্লেন মহাকাশে পর্যটকদের মাসিক ট্রিপ অফার শুরু করবে বলে আশা করা হচ্ছে।