পাকিস্তানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে কী ঘটছে?

টিবিএন ডেস্ক

আগস্ট ১৩ ২০২৩, ১১:২৪

পাকিস্তানের পার্লামেন্ট ভবন। ফাইল ছবি

পাকিস্তানের পার্লামেন্ট ভবন। ফাইল ছবি

  • 0

পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ভেঙে দিয়ে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সাধারণ নির্বাচনের পথ সুগম করার কয়েক দিন পর দেশটির অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে।

সাংবিধানিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটের কারণে ৯০ দিনের মধ্যে নভেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও এ তারিখ নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা।

রাজনৈতিক মাঠের পরিস্থিতি এবং আগামী কয়েক মাস পাকিস্তানের রাজনীতি কীভাবে চলবে সে সম্পর্কে কিছু প্রধান প্রশ্ন সামনে এসেছে।

কারা থাকছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারে?

বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এবং বিরোধী দলীয় নেতা রাজা রিয়াজ আহমা তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান হিসেবে বেলুচিস্তান আওয়ামী পার্টির (বিএপি) সেনেটর আনোয়ারুল হক কাকারের নাম প্রস্তাব করেছেন।

পাকিস্তানের সবচেয়ে কম জনসংখ্যার প্রদেশ বেলুচিস্তানের অখ্যাত এই সেনেটর পরবর্তী ভোট অনুষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্ব দেবেন। এর সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় পরিচালনার জন্য একটি মন্ত্রিসভা নির্বাচনের দায়িত্ব দেয়া হবে তার উপর।

প্রেসিডেন্ট আলভি নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারে অনুমোদন না দেয়া পর্যন্ত শাহবাজ শরিফ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।

নির্বাচন কি পেছাবে?

তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। তবে বিদায়ী সরকার তার শেষ সময়ে একটি নতুন আদমশুমারি অনুমোদন করার পরে, নির্বাচন কমিশনকে অবশ্যই নির্বাচনের আগে নতুন নির্বাচনি সীমানা তৈরি করতে হবে।

কমিশনের সাবেক এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দেশটির ২৪১ মিলিয়ন জনসংখ্যার জন্য শত শত ফেডারেল ও প্রাদেশিক নির্বাচনি এলাকার জন্য নতুন সীমানা নির্ধারণ করতে কমপক্ষে ছয় মাস বা তারও বেশি সময় লাগতে পারে।

নির্বাচন কমিশনকে ঘোষণা করতে হবে প্রক্রিয়াটি শেষ করতে কত সময় লাগবে। এর মধ্যে নির্বাচনি এলাকার নতুন গঠন নিয়ে প্রার্থীদের মামলাও জড়িত থাকতে পারে। এসব কিছুর উপর ভিত্তি করে নির্বাচনের তারিখ দিতে হবে।

সামরিক বাহিনীর ভূমিকা কী হবে?

দেশটিতে পর্দার আড়ালে রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ অব্যাহত রয়েছে। দেশের ৭৬ বছরের ইতিহাসে তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে সামরিক বাহিনী সরাসরি পাকিস্তান শাসন করেছে এবং রাজনীতির উপর সব ধরনের নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা আশঙ্কা করছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার যদি সাংবিধানিক মেয়াদের বাইরে চলে যায়, তাহলে নির্বাচিত সরকার ছাড়া দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকলে শক্তিশালী সামরিক বাহিনী তাদের নিয়ন্ত্রণ আরও ভালোভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে।

নির্বাচনে কারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন?

পরবর্তী সরকার গঠনের জন্য তিনটি প্রধান দল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এরা হচ্ছে, ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই), শাহবাজ শরিফের পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) এবং বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)।

পিটিআই প্রধান ইমরান খান কারাবন্দি এবং নির্বাচন থেকে আপাতত নিষিদ্ধ হয়েছেন। এ অবস্থায় তিনি তার সমর্থকদের সহানুভূতি ও ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে ২০১৮ সালের মতো নির্বাচনে দলের বিজয়ের পুনরাবৃত্তির আশা করবেন। তবে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে চলমান অচলাবস্থার মধ্যে পিটিআইয়ের জয়ের সম্ভাবনা কতটা তা জেনারেলদের সঙ্গে আলোচনার ওপর নির্ভর করছে। আপাতত বিষয়টি অসম্ভব বলেই মনে হচ্ছে।

বিদায়ী প্রধানমন্ত্রীর ভাই এবং বিদায়ী জোট সরকারের অন্যতম অংশীদার পিএমএল-এন নেতা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ নির্বাসন থেকে ফিরে আসার চেষ্টা করছেন। তবে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির রায় এখনও বহাল থাকায় শাহবাজ ক্ষমতায় ফেরার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন।

পিপিপির তরুণ চেয়ারম্যান এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর ছেলে বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি আরেকজন গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থী। বিদায়ী সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তিনি তার প্রথম সরকারি দায়িত্বে স্থানীয় ও বহির্বিশ্বে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। তাকে পাকিস্তানের ভবিষ্যতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অনেকে দেখছেন।

জয়ের পর কী চ্যালেঞ্জ?

নতুন সরকারের জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে বেইলআউটের ফলে সার্বভৌম ঋণ খেলাপি এড়ানোর পর ৩৫০ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথে থাকায় অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। নতুন করে অর্থনৈতিক সংস্কার ইতোমধ্যে মুদ্রাস্ফীতি এবং সুদের হারকে বাড়িয়ে তুলেছে।

ইমরান খানের কারাবাস এবং নিষেধাজ্ঞার পরে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ। গ্রেফতারের পর মে মাসে তার সমর্থকরা তাণ্ডব চালালেও নতুন করে তার গ্রেফতারের পরে কোনো সহিংসতা ঘটেনি। তবে তাকে আটকে রাখা নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলবে।

এরপর নির্বাচন যদি ৯০ দিনের বেশি বিলম্বিত হয়, তাহলে সাংবিধানিক ও আইনগত প্রশ্ন উঠতে বাধ্য। তখন সাংবিধানিক প্রশ্নগুলোর ব্যাখ্যা দিতে সুপ্রিম কোর্টকে এগিয়ে আসতে হবে।

নির্বাচনে ইমরান খানের কোনো ভূমিকা কি থাকছে?

দেশটির প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের এই নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় কোনো ভূমিকা থাকবে না। এর কারণ গত বছর অনাস্থা ভোটে তার অপসারণের প্রতিবাদে তার দলের সদস্যরা পার্লামেন্ট থেকে পদত্যাগ করেছেন।

পাকিস্তানে বিরোধী দল এখন রাজা রিয়াজ আহমেদসহ তার দলের ভিন্নমতাবলম্বীদের নিয়ে গঠিত। দুর্নীতির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরে ইমরান খান বর্তমানে তিন বছরের জন্য কারাগারে থাকবেন এবং পাঁচ বছরের জন্য কোনো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। অবশ্য তিনি নিজের বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।


0 মন্তব্য

মন্তব্য করুন