
মধ্য ফ্লোরিডায় স্থানীয়ভাবে ছড়াচ্ছে কুষ্ঠরোগ

টিবিএন ডেস্ক
আগস্ট ৩ ২০২৩, ২৩:১৬

মাইক্রোস্কোপের নিচে কুষ্ঠরোগের ব্যাকটেরিয়া। ছবি: সংগৃহীত
- 0
ইমার্জিং ইনফেকশাস ডিজিজেস জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা পত্র অনুযায়ী, অ্যামেরিকায় মধ্য ফ্লোরিডায় সর্বোচ্চ হারে ছড়াচ্ছে কুষ্ঠরোগ।
গবেষণা পত্রের মূল গবেষক অরল্যান্ডো অ্যাডভান্সড ডার্মাটোলজি অ্যান্ড কসমেটিক সার্জারি ক্লিনিকের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ এবং ক্লিনিক পরিচালক রাজীব নাথু ও আর গবেষক দল।
তাদের গবেষণা পত্রে বলা হয়েছে, ফ্লোরিডার অরল্যান্ডো ডার্মাটোলজি ক্লিনিকে ৫৪ বছর বয়সী এক রোগী ত্বকে ছোপ ছোপ দাগসহ ফুসকুড়ি নিয়ে এসেছিলেন। নাথু পাঁচ বা ছয় ধরণের বায়োপসি করার পর ফল দেখে নিশ্চিত হন যে লোকটি কুষ্ঠ রোগে ভুগছে।
ওই অঞ্চলে একই রোগের অন্য কেসগুলির পরীক্ষা করার পর নাথু সন্দেহ করতে শুরু করেন যে মধ্য ফ্লোরিডা কুষ্ঠ রোগের একটি কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ২০২০ সালে, সারা বিশ্বে দুই শ হাজার নতুন রোগীর বিপরীতে অ্যামেরিকায় মাত্র ১৫৯ টি কুষ্ঠরোগীর রিপোর্ট করা হয়। নতুন গবেষণায় বলা হয়েছে, ফ্লোরিডায় ৮১ শতাংশ ও দেশব্যাপী প্রতি পাঁচজনের মধ্যে ১জন কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হয়েছে মধ্য ফ্লোরিডায়।
কুষ্ঠরোগ ‘হ্যানসেনস ডিজিজ’ নামেও পরিচিত। এটি মাইকোব্যাকটেরিয়াম লেপ্রে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমনে সৃষ্টি হয়। এই ব্যাকটেরিয়া ত্বকের নীচের স্নায়ুকে আক্রমণ করে। এটি কীভাবে ছড়ায় সে সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা পুরোপুরি নিশ্চিত নন।
বেশিরভাগ ডাক্তারদের বিশ্বাস, আক্রান্ত ব্যক্তি কাশি ও হাঁচি দিলে এটি লালার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। কুষ্ঠরোগের লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে ক্ষত, ফুসকুড়ি এবং স্নায়ুর অসাড় হয়ে যাওয়া।
হাত মেলানো বা সংক্রামিত ব্যক্তির পাশে বসার মতো সাধারণ যোগাযোগের মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায় না। অ্যামেরিকার সেন্টার ফর ডিজিজেজ কন্ট্রোলের (সিডিসি) মতে, কুষ্ঠরোগে ছড়িয়ে পড়ার জন্য অনেক মাস ধরে চিকিৎসা নিচ্ছেন না এমন রোগীর সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের প্রয়োজন হয়। মোটামুটি ৯৫ শতাংশ মানুষে জিনগতভাবে কুষ্ঠরোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা রয়েছে।
যে কারণে কুষ্ঠ অ্যামেরিকায় বিরল। অ্যামেরিকায় বেশিরভাগ চিকিৎসক বিশ্বাস করেন, এমন মানুষ কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত হয় যারা রোগের উচ্চ হারের দেশগুলিতে ভ্রমণ করে বা যারা এই রোগবহণকারী প্রাণী নাইন ব্যান্ড আর্মাডিলোর সংস্পর্শে আসে।
এমন কিছু কেস রয়েছে যেখানে চিকিৎসকরা জানতে পারেননি ঐ ব্যক্তি কীভাবে আক্রান্ত হয়েছিলেন।
ন্যাশনাল হ্যানসেন ডিজিজ প্রোগ্রামের ল্যাবরেটরি রিসার্চ শাখার প্রধান ড. লিন্ডা অ্যাডামস বলেন, ‘কিছু স্টেইটে আমরা অন্যদের তুলনায় বেশি কেস দেখতে পাচ্ছি। ফ্লোরিডা তাদের মধ্যে একটি। এই সমস্ত ক্ষেত্রে আমরা এমন ঘটনাও দেখতে পাই যা আমরা ব্যাখ্যা করতে পারি না। উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি রোগী কখনো বিদেশ ভ্রমণ করেনি বা নাইন ব্যান্ড আর্মাডিলোর সঙ্গে কোনোও যোগাযোগ নেই।’
নাথু ও তার দলের গবেষণা অনুসারে, ২০১৫ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে প্রায় ৩৪ শতাংশ নতুন রোগীর ক্ষেত্রে রোগের প্রচলিত ঝুঁকির কারণ তাদের মধ্যে ছিল না। তারা স্থানীয়ভাবে সংক্রামিত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। গবেষণায় বলা হয়, অনুসন্ধানটি ইঙ্গিত করে যে ফ্লোরিডায় কুষ্ঠ রোগ স্থানীয় হয়ে উঠেছে।
ইউনিভার্সিটি অফ ফ্লোরিডা হেলথ শান্ডস হসপিটালের চিফ এপিডেমিওলজিস্ট ডাক্তার নিকোল আইওভিন বলেন, এ নিয়ে জনস্বাস্থ্যে আতঙ্ক ছড়ানোর দরকার নেই। তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘এন্ডেমিক’ এর সহজ অর্থ হলো কোনো অঞ্চলে একটি রোগের নিয়মিত আক্রান্ত রোগী রয়েছে তবে হার বাড়ছে না।
নাথু বলেন, ‘এটি এখনও বিরল রোগ। তবে সংখ্যা এখনও এখানে তুলনামূলকভাবে খুব কম। এ নিয়ে আমরা খুব একটা উদ্বিগ্ন নই।’
নাথু গত পাঁচ বছরে পূর্ব অরল্যান্ডো এবং ভোলুসিয়া কাউন্টিতে বায়োপসিতে প্রমাণিত ১৫ জন কুষ্ঠ রোগীর ক্লিনিকাল রেকর্ড ট্র্যাক করেছেন। তাদের মধ্যে ১৪ জন অ্যামেরিকার বাইরে ভ্রমণ করেননি এবং তাদের কেউই একে অপরের সঙ্গে কোনোভাবে সংযুক্ত নন জানা গেছে।
সেন্ট্রাল ফ্লোরিডায় স্থানীয় কেসের পরিমাণ নিয়ে উদ্বিগ্ন আইওভিন। চিকিৎসা না করা হলে এই রোগটি হাত ও পা পক্ষাঘাতগ্রস্ত করতে পারে, অন্ধত্বের কারণ হতে পারে এবং হাত ও পায়ের আঙুল ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারে। কুষ্ঠ নিরাময়যোগ্য তবে চিকিৎসায় কয়েক বছর ধরে বেশকিছু অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে হয়।
এছাড়াও যাদের রোগ নির্ণয়ে দেরি হয়েছে তাদের স্নায়ু বা ত্বকের ক্ষতির মতো বিষয়গুলি সমাধান করা যায় না।
কুষ্ঠরোগের অন্যতম চ্যালেঞ্জ হলো আক্রমণকারী ব্যাকটেরিয়াটি কোন গতিতে বৃদ্ধি পায়। সিডিসি জানিয়েছে, ফ্যাকাশে দাগ, ফুসকুড়ি, ত্বকে আলসার ও ক্ষতের মতো লক্ষণগুলি প্রকাশ হতে ২০ বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
ধীর গতির কারণে কুষ্ঠ রোগের উৎস এবং বিস্তার ট্র্যাক করা কঠিন হতে পারে। আইওভিন বলেন, ‘যেহেতু বেশিরভাগ চিকিৎসকরা কুষ্ঠরোগের কোনোও কেস দেখতে পান না তাই এটি প্রায়ই ভুল নির্ণয় করা হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি নিশ্চিত রোগীরা সঠিক রোগ নির্ণয় ছাড়াই কয়েক মাস পার করে দেয়।’
কুষ্ঠ রোগ সনাক্তকারী চিকিৎসকদের ২৪ ঘন্টার মধ্যে স্টেইটের স্বাস্থ্য বিভাগে রিপোর্ট করতে হয়। এর পরে ন্যাশনাল হ্যানসেনস ডিজিজ প্রোগ্রামে তাদের অফিসে বিশেষ অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া হয় এবং একটি যোগাযোগ ও অনুসন্ধান প্রক্রিয়া শুরু করে।
অ্যাডামস বলেন, ‘কুষ্ঠরোগের লক্ষণগুলি প্রায়শই খেয়াল করা হয় না এবং এটি চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের মাথায় থাকে না। এই ধরনের কিছু দেখলে তারা প্রথম চিন্তা করে না যে এটি কুষ্ঠরোগ।’