সদস্যপদ ফিরে পাওয়ার পর লোকসভায় রাহুল গান্ধী
টিবিএন ডেস্ক
আগস্ট ৭ ২০২৩, ১১:৩৫
- 0
ভারতে ‘মোদি’ পদবি নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে হওয়া মামলায় দুই বছরের সাজা সুপ্রিম কোর্ট স্থগিত করার পর লোকসভার হারানো সদস্যপদ ফিরে পেয়েছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী।
স্পিকারের সচিবালয় থেকে সোমবার সকালে এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হয়। এর পরপরই বেলা ১২টার লোকসভায় যান রাহুল গান্ধী। রাহুলের সদস্য পদ ফিরে পাওয়ার পর একে অপরকে মিষ্টিমুখ করান লোকসভায় বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র এমপিরা।
কর্ণাটকের কোলারে ২০১৯ সালের ১৩ এপ্রিল একটি নির্বাচনি প্রচারে রাহুল বলেছিলেন, ‘কীভাবে সব চোরেদের পদবি মোদি হতে পারে?’
এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরেই রাহুলের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মানহানি মামলা করেন গুজরাটের সাবেক মন্ত্রী পূর্ণেশ মোদী। তার অভিযোগ ছিল, মোদি পদবির সমস্ত মানুষকে অপমান করেছেন রাহুল। তবে রাহুল এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কোনো সম্প্রদায়ের মানুষের উদ্দেশে তিনি ওই মন্তব্য করেননি।
মামলায় সুরাটের বিচারিক আদালত রাহুলকে ক্ষমা চাইতে বললে তিনি তাতে রাজি হননি। এরপর রাহুলকে সর্বোচ্চ দুই বছরের সাজার দণ্ড ঘোষণা করা হয়। সুরাট দায়রা আদালতও রাহুলের আবেদন খারিজ করে সাজা কার্যকরের রায় বহাল রাখে। পরে দায়রা আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ এবং বিচারিক আদালতের নির্দেশে স্থগিতাদেশ চেয়ে গুজরাট হাইকোর্টে আবেদন করেন রাহুল।
ভারতের জনপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুযায়ী, কোনো অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে এমপির দুই বছর বা তার বেশি কারাদণ্ড হলে তিনি পদও হারিয়ে ফেলেন। এই আইনেই গত ২৪ মার্চ রাহুলের এমপি পদ খারিজ করেন স্পিকার ওমা বিড়লা। এর তিন দিন পর রাহুলকে দিল্লির তুঘলক রোডের সরকারি বাংলো ছাড়ার নোটিশ পাঠায় লোকসভার হাউজ়িং কমিটি।
রাহুল গত ২২ এপ্রিল তুঘলক লেন রোডের সরকারি বাংলো ছেড়ে দেন। তার নতুন ঠিকানা হয় মা সোনিয়া গান্ধীর জন্য বরাদ্দ ১০ জনপথের সরকারি বাংলো। উত্তরপ্রদেশের রায়বরেলীর সাংসদ হিসেবে ওই বাংলোটি বরাদ্দ পেয়েছেন কংগ্রেসের সাবেক প্রধান সোনিয়া।
সুরাট ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের রায় বহাল রেখে গত ৭ জুলাই গুজরাট হাইকোর্টের বিচারক বিচারপতি হেমন্ত প্রচ্ছক বলেন, ‘বিচারিক আদালত রাহুল গান্ধীর সাজার যে রায় দিয়েছে, তা সঠিক।’
এই আদেশের বিরুদ্ধে রাহুল গান্ধী সুপ্রিম কোর্টে গেলে বিচারপতি আরএস গাভাই এবং বিচারপতি পিকে মিশ্রের বেঞ্চ তার পক্ষে রায় দেয়। সুপ্রিম কোর্ট গত ৪ অগস্ট রাহুলকে দেয়া দুই বছরের কারাদণ্ডের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেয়। পাশাপাশি মানহানির মামলায় সর্বোচ্চ মেয়াদের শাস্তি দেয়া হলেও কেন তার কারণ ব্যাখ্যা করা হয়নি, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
তবে রাহুলকে সতর্ক করে আদালত বলেছে, তিনি যে ধরনের মন্তব্য করেছেন তা মোটেও শোভন নয়, একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে বক্তব্য দেয়ার ক্ষেত্রে তার আরও সতর্ক থাকা উচিত।
শীর্ষ আদালত রাহুলের সাজার ওপর স্থগিতাদেশ দেয়ার পরেই স্পিকারের কাছে এ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়ার আবেদন জানায় কংগ্রেস। কংগ্রেসের লোকসভার দলনেতা অধীর চৌধুরী গত শনিবার আদালতের রায়ের কপি লোকসভার সচিবালয়ে পাঠান। এর দুই দিনের মধ্যে স্পিকারের সচিবালয় থেকে রাহুলের সদস্যপদ পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত জানানো হলো।
বিরোধী জোটের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, লোকসভায় মঙ্গলবার থেকে শুরু হতে যাওয়া অনাস্থা প্রস্তাবে আলোচনায় অংশ নেবেন রাহুল গান্ধী। সুপ্রিম কোর্টের আদেশের ফলে আপাতত দেশটির আগামী জাতীয় নির্বাচনে তার অংশ নেয়ায় ক্ষেত্রেও কোনো বাধা থাকছে না।