
সুইডেনে কোরআন পোড়ানোর হিংসার বিপরীতে চকোলেট

টিবিএন ডেস্ক
আগস্ট ৮ ২০২৩, ১৫:৫০

হুসাম এল গোমাতি। ছবি: আল-জাজিরা
- 0
সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমের শহরতলির সমুদ্র সৈকতে বৃষ্টির ভেতর কোরআন পোড়াতে উদ্যত এক নারীর আশেপাশের ক্ষিপ্ত মুসলমানদের শান্ত করতে এগিয়ে আসেন মুসলিম অ্যাক্টিভিস্ট হুসাম এল গোমাতি।
ওই নারীর পেছন থাকা ক্ষুব্ধ এক যুবক পুলিশ অফিসারের উদ্দেশে চিৎকার করে কোরআন পোড়ানো থেকে নারীটিকে বিরত রাখার অনুরোধ করছিলেন। ওই যুবককে শান্ত করতে তার পিঠে আলতো হাত রাখেন গোমাতি। নরম কণ্ঠে বলতে থাকেন ‘হ্যাঁ তুমি ঠিক বলেছো। তুমিই ঠিক…।’
উজ্জ্বল লাল কোকা-কোলা ব্র্যান্ডের বেসবল টুপি পরা ইরানি শরণার্থী ওই নারী জ্বলন্ত কাঠের উপরে পবিত্র কোরআনের একটি কপি ধরেছিলেন। তিনি কোরআনের পৃষ্ঠাগুলো ছিঁড়ে ফেলেন এবং উত্তেজিত যুবকের দিকে তাকিয়ে হাসতে থাকেন। কোরআনের কপিতে বলপয়েন্ট কলম দিয়ে এলোমেলোভাবে দাগ দিচ্ছিলেন তিনি।
এ সময় কুর্দি বংশোদ্ভূত রাগান্বিত যুবক ওই নারীকে বলেন, তাকে রক্ষা করার জন্য পুলিশকে বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য করা হচ্ছে। বরং পুলিশের উচিত কোরআন পোড়ানো বন্ধে তাদের দায়িত্ব পালন করা।
ওই ব্যক্তিকে শান্ত করতে আসেন গোমাতি। আরবি ভাষায় তার সঙ্গে নরমভাবে কথা বলেন। তিনি যখন নিশ্চিত হন পরিস্থিতি আর খারাপ হবে না, তখন চলে যান।
কোরআন বিষয়ে যেকোনো উত্তপ্ত পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করছেন এল গোমাতি। মুসলিম সম্প্রদায়ের কোনো সদস্য যেন উসকানির মুখে আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ না নেন, যা পরে ইসলামোফোবিয়া ছড়ানোয় ব্যবহার করা হতে পারে, সে ব্যাপারে সচেষ্ট তিনি।
লিবিয়ান নাগরিক গোমাতি পেশায় একজন সামাজিক উদ্যোক্তা। চকলেট বিতরণ ও শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে সুইডেনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি কাটাতে সাহায্য করছেন তিনি।
গত কয়েক মাস ধরে সুইডেনে অসংখ্য কোরআন পোড়ানোর ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মুসলিম কমিউনিটিকে শান্ত রাখতে কাজ করছেন এল গোমাতি। সম্প্রদায়ের আরও কয়েকজন সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে কোরআন পোড়ানোর প্রতিবাদে আন্দোলনকারী, মিডিয়া, পথচারী ও পুলিশের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সংলাপে মনোযোগ দিচ্ছেন তিনি।
গত জুনের শেষ দিকে ঈদুল আজহার ছুটিতে স্টকহোমের একটি মসজিদের সামনে মুসলিম সম্প্রদায়কে হতবাক ও উত্তেজিত করতে এক ব্যক্তি কোরআন কপিতে আগুন ধরিয়ে দেন। এ সময় উপস্থিত মুসলিম কমিউনিটিকে শান্ত করতে কয়েকজন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে গোমাতি সবার মাঝে দামি চকোলেট বিতরণ করেন।
এমনকি প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে হাসাহাসি ও মজা করে তারা মেগাফোনে ইরাকি শরণার্থী সালওয়ান মোমিকার কোরআন নিষিদ্ধ করার উসকানিমূলক বার্তাকেও উপেক্ষা করেছিলেন।
গোমাতি জানান, চোখের সামনে পবিত্র গ্রন্থের অবমাননা মেনে নেয়া খুবই কষ্টের। তবে তিনি ভিন্ন মতাদর্শে বিশ্বাসীদের মনে ইসলাম সম্পর্কে কোনো নেতিবাচক ধারণা দিতে চান না।
তিনি রসিকতা করে বলেন, ‘চকোলেট প্রত্যাখ্যান করা খুব কঠিন। এটি মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ ও শান্তিপূর্ণ বার্তা বিনিময়ের সুযোগ দেয়।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের উদ্যোগ বহু ক্রুদ্ধ মানুষকে শান্ত করছে। আমি তাদের প্রতিবাদের জন্য অন্য পন্থা দেখিয়েছি... আরও সুন্দর আচরণের মাধ্যমে... আমি মনে করি এটি ঘৃণা প্রকাশ করা বা আক্রমণাত্মক হওয়ার চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী ও কার্যকর।’