চায়নার প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ নিয়ন্ত্রণে বাইডেনের আদেশ জারি

টিবিএন ডেস্ক

আগস্ট ১০ ২০২৩, ১৩:২৬

চায়নার প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ নিয়ন্ত্রণে বাইডেনের আদেশ জারি
  • 0

চায়নার হাই-টেক শিল্পখাতে বিনিয়োগ নিয়ন্ত্রণে রাখার ও কিছু ক্ষেত্রে আটকানোর নতুন বিধিনিষেধের নির্বাহী আদেশে সই করেছেন অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। আদেশ অনুযায়ী চায়নার উন্নত কম্পিউটার চিপস, মাইক্রো ইলেক্ট্রনিক্স, কোয়ান্টাম তথ্যপ্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার খাতে অ্যামেরিকান বিনিয়োগ বিধিনিষেধের আওতায় পড়বে।

বাইডেন প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেছেন, অর্থনৈতিক স্বার্থের জন্য নয়, বরং জাতীয় সুরক্ষা নিশ্চিতে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। খুবই অল্প সংখ্যক খাত বিধিনিষেধের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

তারা বলছেন, এই আদেশের মাধ্যমে অ্যামেরিকান বিনিয়োগ ব্যবহার করে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সামরিক কাজে লাগানোর চায়নার যে ক্ষমতা, তা বানচাল করতে চায় বাইডেন প্রশাসন। এই আদেশ একইসঙ্গে দুই দেশের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ বড় পরিসরের বাণিজ্য সংরক্ষণ করবে।

এই বিধিনিষেধের প্রতিক্রিয়ায় বৃহস্পতিবার বিবৃতি দিয়েছে চায়নার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তাতে বলা হয়েছে, এই আদেশের বিষয়ে চায়নার গুরুতর উদ্বেগ রয়েছে এবং এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার অধিকার রাখে মন্ত্রণালয়।

বিরোধপূর্ণ কিছু মূল্যবোধ ধরে রেখে একটি ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার মধ্যে আটকে আছে অ্যামেরিকা ও চায়না। বাইডেন প্রশাসন জোর দিয়ে বলছিল, চায়নার সঙ্গে বিচ্ছেদের কোনো ইচ্ছেই তাদের নেই। তারপরও অ্যামেরিকা চায়নায় উন্নত কম্পিউটার চিপ রফতানি সীমিত করেছে এবং ডনাল্ড ট্রাম্পের আমলের শুল্ক বাড়িয়েছে।

চায়না অভিযোগ করেছে, নিরাপত্তা ঝুঁকি কমানোর অযুহাতে আসলে অ্যামেরিকা বিচ্ছেদ চাইছে ও চেইন ভাঙছে।

ক্যালিফোর্নিয়ায় এক অনুষ্ঠানে গত জুনে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছিলেন, চায়নার অর্থনীতি এখন টালমাটাল এবং তাদের বৈশ্বিক উচ্চাকাঙ্খাগুলো বদলে যাচ্ছে। আর জাপান, সাউথ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপিয় ইউনিয়নের সঙ্গে অ্যামেরিকা তার মিত্রতা পুনরুজ্জীবিত করছে। মিত্রদের ও শিল্পখাত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে পরামর্শ করেই বিধিনিষেধের ওই আদেশ তৈরি করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

আদেশটি পর্যবেক্ষণ করা কর্মকমর্তারা বলেছেন, চায়না এর অস্ত্রের উন্নয়নে এবং সামরিক বাহিনীকে আধুনিকায়ন করতে অ্যামেরিকান বিনিয়োগকে কাজে লাগিয়েছে। নতুন বিধিনিষেধ চায়নার অর্থনীতিকে ব্যাহত করবে না, বরং এটি সেদেশে উন্নত কম্পিউটার চিপের নিয়ন্ত্রিত রফতানির পরিপূরক হবে।

তারা জানিয়েছেন, চায়নায় বিনিয়োগের ওপর নজরদারি করবে ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট। এর জন্য প্রেসিডেন্টের আদেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিয়মনীতির একটি প্রস্তাবনা ঘোষণা করবে এই বিভাগ। এরপর এ বিষয়ে সাধারণ মানুষের মন্তব্য নেয়া হবে।

চায়নার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিবৃতি দিয়ে বলেছে, ‘এই নির্বাহী আদেশ বাজার অর্থনীতি ও ন্যায্য প্রতিযোগিতার নীতিগুলো থেকে বাইডেন প্রশাসনের গুরুতর বিচ্যুতি। কারণ অ্যামেরিকা সবসময় নীতিগুলো সমর্থন করেছে। এন্টারপ্রাইজগুলোর স্বাভাবিক ব্যবসায়িক সিদ্ধান্তে এই আদেশ প্রভাব ফেলবে, আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য ব্যবস্থাকে ব্যাহত করবে এবং বিশ্বের শিল্প ও সরবরাহ চেইনের নিরাপত্তার গুরুতর ব্যাঘাত ঘটাবে।’

অ্যামেরিকা ও চায়নার মধ্যে গত কয়েক বছরে বিনিয়োগ দ্রুত কমেছে। এর মধ্যেও চায়নার প্রাণবন্ত প্রযুক্তি শিল্পে প্রবেশের জন্য ভেঞ্চার ক্যাপিটাল এবং প্রাইভেট ইক্যুইটি ফার্মগুলো সেদেশে অংশীদারত্বের লাভজনক সুযোগ খোঁজা অব্যাহত রেখেছে।

এখন নতুন এই বিধিনিষেধ অ্যামেরিকার অর্থনীতিকে বিপাকে ফেলতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। তারা বলছেন, এই বিধিনিষেধে চায়নার কোনো ক্ষতিই হবে না। কারণ অন্য অনেক দেশ চায়নার সঙ্গে প্রযুক্তিগত অংশীদারত্ব তৈরি করে চলেছে, চায়নার মূলধনের কোনো অভাব নেই।

পিটারসন ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক্সের সিনিয়র ফেলো নিকোলাস আর. ল্যার্ডি জানান, ২০২১ ও ২০২২ সালে চায়নার অভ্যন্তরীণ প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের ৫ শতাংশরও কম উৎস ছিল অ্যামেরিকা।

তিনি বলেন, ‘এ ধরণের বিধিনিষেধ চায়নার অন্য বড় বিনিয়োগকারীরা না নিলে অ্যামেরিকার জন্য এটি কেবল সময়ের অপচয় হবে… বেইজিংয়ে অনেকে কর্মকর্তাই আছেন, যারা বিশ্বাস করেন যে অ্যামেরিকা চায়নাকে কেবল শান্ত করতে চায়, আসলে নতুন করে কোনো সংলাপে অ্যামেরিকানদের কোনো আগ্রহ নেই। এই কর্মকর্তাদের হাতে বিধিনিষেধের নীতিটি ঠেলে দেয়া হলে তারা এটি নিয়ে খেলবেন।


0 মন্তব্য

মন্তব্য করুন