বুধবার প্রকাশিত ‘স্টেইট অফ দ্য এয়ার’ রিপোর্ট অনুসারে, বায়ু দূষণের অস্বাস্থ্যকর মাত্রায় বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা গত বছরের ১১৯ মিলিয়ন থেকে ১৩১ মিলিয়নে এসে ঠেকেছে।
প্রতিবেদনের গবেষক এবং অ্যামেরিকান লাং অ্যাসোসিয়েশনের ন্যাশনওয়াইড ক্লিন এয়ার পলিসির সিনিয়র পরিচালক ক্যাথরিন প্রুইট বলেন, ‘চরম তাপ, খরা এবং দাবানল মারাত্মক বায়ু দূষণ বৃদ্ধির কারণগুলোর অন্যতম, বিশেষত দেশের পশ্চিমাঞ্চলে।’
প্রুইট বলেন, ‘দাবানলের ধোঁয়া থেকে তৈরি হওয়া বায়ু দূষণ প্রতি বছর আরও খারাপ হচ্ছে।’
তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন এই পরিস্থিতিতে অবদান রাখছে এবং এই দাবানলগুলো আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুতর হুমকি।’
প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ১৯৭০ সালে ‘ক্লিন এয়ার অ্যাক্ট’ আইনে স্বাক্ষর করেন। তখন থেকে অ্যামেরিকান পরিবেশ সংরক্ষণ সংস্থার মতে, ঘরের বাইরের বায়ু দূষণ ৭৮ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
প্রুইট বলেন, কিন্তু এখনও অনেক লোক অস্বাস্থ্যকর বাতাসে শ্বাস নিচ্ছে।’
অ্যামেরিকান লাং অ্যাসোসিয়েশন ২০০০ সালে তাদের বার্ষিক ‘স্টেইট অফ দ্য এয়ার’ প্রতিবেদন চালু করে। এর পর থেকে প্রুইট দেশের পশ্চিমে বায়ু দূষণকে একটি ক্রমবর্ধমান সমস্যা হয়ে উঠতে দেখেছেন।
প্রুইট বলেন, ‘আমাদের গাড়িগুলো কম দূষণ করছে। আমাদের জ্বালানিও অনেক কম দূষণ করছে। সবচেয়ে দূষিত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর অধিকাংশই সৌভাগ্যক্রমে বন্ধ হয়ে গেছে এবং শিল্প আরও পরিচ্ছন্ন হয়েছে। আপার মিডওয়েস্ট এবং নর্থ-ইস্টের শিল্প অংশে আগে দূষণ তৈরি করেছে এমন উৎসগুলোর অনেকগুলো সরিয়ে নেয়া হয়েছে। পশ্চিমা স্টেইটগুলোতেও একই পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালানো হয়েছে। তবে একই সময়ে, পশ্চিমা স্টেইটগুলো দ্রুত উন্নত হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘পশ্চিমে তেল ও গ্যাস উত্তোলনের পরিমাণ বেড়েছে, যা প্রচুর বায়ু দূষণ করে। এ ছাড়া এ অঞ্চল জলবায়ু পরিবর্তন এবং দাবানলের প্রভাব থেকে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। তাই আমরা যে ভৌগলিক পরিবর্তনটি দেখছি, তা বিশেষত পার্টিকুলেট ম্যাটার বা কণা দূষণের সঙ্গে, দাবানলের ধোঁয়ার মিশে তৈরি হচ্ছে।’
পার্টিকুলেট ম্যাটার বা কণা দূষণ হলো শক্ত ও তরল বস্তুর মিশ্রণ যা ময়লা, ধূলিকণা, কাদা বা ধোঁয়া আকারে বাতাসে মিশতে পারে। এগুলো দেখতে পাওয়া প্রায় অসম্ভব।
কয়লা এবং প্রাকৃতিক গ্যাস-চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো এই দূষণ তৈরি করে। এ ছাড়া গাড়ি, কৃষি, কাঁচা রাস্তা, নির্মাণাধীন সাইট এবং দাবানল থেকেও এই দূষণ তৈরি হয়। কণা দূষণ এত ক্ষুদ্র যে এটি মানুষের চুলের প্রস্থের ২০ ভাগের ১ ভাগ পর্যন্ত হতে পারে। এটি সহজেই মানুষের দেহের স্বাভাবিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অতিক্রম করতে পারে। পার্টিকুলেট ম্যাটার দূষণ কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ, শ্বাসযন্ত্রের রোগ এবং ফুসফুসের ক্যান্সার থেকে মৃত্যুর ঝুঁকির সঙ্গেও সম্পর্কিত।
অ্যাসোসিয়েশনের বিশ্লেষণ ব্যবহার করে, ওজোন এবং কণা দূষণের উপর ভিত্তি করে গবেষকরা অ্যামেরিকান কাউন্টিগুলোকে তাদের বায়ু দূষণের পৃথক স্তরের জন্য ‘গ্রেড’ দিয়েছেন।
এতে উঠে এসেছে এক ভয়াবহ চিত্র। এতে দেখা গেছে যে, ১১২ টি কাউন্টিতে বসবাস করা ৬৫ মিলিয়ন মানুষ কণা দূষণে অস্বাস্থ্যকর অবস্থার জন্য ‘এফ’ গ্রেডে স্থান পেয়েছে। যা গত বছরের প্রতিবেদন থেকে ১.৩ মিলিয়ন বেশি।
ওজোন দূষণে ‘এফ’ গ্রেড কাউন্টিগুলোতে আরও ১০০ মিলিয়নের বেশি লোক বসবাস করে। ওজোনের সংস্পর্শে হাঁপানির লক্ষণগুলো আরও বেড়ে যায়। উচ্চ স্তরের ওজোন দূষণে দীর্ঘমেয়াদে থাকলে পরিষ্কার বাতাসে বসবাসকারীদের তুলনায় শ্বাসকষ্টজনিত রোগে মৃত্যুর ঝুঁকিও বেশি থাকে।
ইউনিভার্সিটি অ্যাট বাফেলো স্কুল অফ পাবলিক হেলথ অ্যান্ড হেলথ প্রফেশনসের এপিডেমিওলজিস্ট এবং সহযোগী অধ্যাপক লিনা মু বলেন, “নতুন প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে অ্যামেরিকার এখনও ‘বিশাল বায়ু দূষণের সমস্যা’ মোকাবিলা করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, ‘নির্গমন কমাতে, কঠোর বিধিবিধান ও মান গ্রহণ করতে হবে এবং বায়ু দূষণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে জলবায়ু পরিবর্তনগুলো মোকাবিলা করার জন্য অবশ্যই একাধিক স্তরের নীতির প্রয়োজন হবে। এ ছাড়া অবশ্যই, বায়ু দূষণের সমস্যাগুলো মোকাবিলায় ফেডারেল ও স্থানীয় সরকারের কাছ থেকে আরও বিনিয়োগ প্রয়োজন।’